Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

অবৈধ ইমিগ্র্যান্টধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা

অবৈধ ইমিগ্র্যান্টধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা



 
সবকিছু আলামত বিবেচনায় নিয়ে এ কথা এখন অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়, যাদের বৈধতা নেই-সেই সব ইমিগ্র্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। অন্তত প্রশাসনের কাছে স্পষ্টতই তারা এখন সম্পদ নয়, বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাগজপত্রহীনদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আর কোনো সুসংবাদ নেই। সবই দুঃসংবাদে ভরা। একসময় যুক্তরাষ্ট্রকে ইমিগ্র্যান্টদের দেশ বলা হলেও এখন যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্র্যান্টদের সেই চোখে দেখা হয় না। একসময় ইমিগ্র্যান্ট সমাজ নিজের এবং পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে কাগজপত্র ছাড়াই নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে পা রাখতে সক্ষম হতো। তাদের আর হতাশ হয়ে বিফল মনোরথে ফিরে যেতে হতো না। কোনো না কোনোভাবে এ দেশে স্থায়ী বসবাসের একটা ব্যবস্থা হতোই। তারাও মনপ্রাণ দিয়ে, শ্রম ও মেধা খাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সেবা দিয়ে গেছে, সংসারে সচ্ছলতাও এনেছে।

ট্রাম্পের যুগে সময় পাল্টেছে। ইমিগ্র্যান্টদের কপালও পুড়েছে। ইমিগ্র্যান্টরা যেন ট্রাম্পের জাতশত্রু। নিজের অতীত ভুলে ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়নের কাজই এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধানতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের কাগজপত্র নেই, তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন একটা দুঃস্বপ্নের নাম। কাগজপত্র যাদের আছে, তারাও খুব নিশ্চিন্তে, নিরাপদে বাস করতে পারছে না। তাদেরও সব সময় ভয়, কখন কোন ছুতোয় বুঝি হেনস্তা হতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর ১৭৭৬ সালে। আড়াইশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র যখন ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়, তখন থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে আজকের তিলোত্তমা যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র আজকের দুনিয়ায় সামরিক শক্তি, কি রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সর্ববিষয়ে সেরা দেশ। এ দেশের যত বিশাল বিশাল অবকাঠামো, অতুলনীয় সব স্থাপনা, ব্রিজ, আকাশচুম্বী সব ভবন, এসব এ দেশের মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠেনি। এসবের নিচে চাপা পড়ে আছে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট শ্রমিকের শ্রম, রক্ত। এমনকি ইমিগ্র্যান্ট বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীদের মেধা উদ্ভাবনীশক্তি দিয়েই এ দেশের সমরশক্তি। অ্যাটম বোমার জনকও একজন ইমিগ্র্যান্ট বিজ্ঞানী।

একসময় আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে জাহাজ ভরে ভরে নিয়ে নামানো হতো আজকের স্ট্যাচু অব লিবার্টির পাদদেশে। এদের দিয়ে অমানবিক শ্রম খাটিয়ে শুধু নয়, পেছন থেকে সাদা মনিবদের চাবুকের মার খেয়ে শরীর দিয়ে রক্তক্ষরণ হলেও তাদের শ্রমের জোয়াল থামেনি। টেনে যেতে হয়েছে। এই ঘানি টানতে গিয়ে কত শ্রমিক যে প্রাণ দিয়েছে, তার কোনো শুমারি নেই। একদিন যাদের শ্রমের প্রয়োজনে এ দেশে তাদের আগমনকে স্বাগত জানানো হতো, আজ ট্রাম্পের দৃষ্টিতে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিন কাগজপত্রহীন শত শত ইমিগ্র্যান্টকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাদের ন্যূনতম সম্মানও দেখানো হচ্ছে না। তাদের হাতে হাতকড়া লাগিয়ে অমানবিকভাবে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে গ্রামীণ জনপদে একটি প্রবাদ চালু আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আজ ইমিগ্র্যান্টদের যে দুর্ভোগ, তা পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করে। প্রবাদটি হচ্ছে : ‘কাজের বেলায় কাজি আর কাজ ফুরালে পাজি।’ ইমিগ্র্যান্টদের যখন এ দেশের জন্য প্রয়োজন, তখন তাদের কদর থাকবে, আর প্রয়োজন ফুরালে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে। এটা যেমন বর্বর, তেমনি অনৈতিক ও অমানবিক বলে মনে করে ইমিগ্র্যান্ট অ্যাডভোকেট গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি যদি একটা উদার ও মানবিক দৃশ্যভঙ্গি গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নেয়, তাহলে সব দিক থেকেই ভালো হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

কমেন্ট বক্স