করোনা আবার চোখ রাঙাচ্ছে। বিশ শতক থেকে একুশ শতকের এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের মানুষ করোনার মতো এমন ভয়ংকর প্রাণঘাতী মহামারির কথা শোনেনি, কোনো ইতিহাস পাঠ থেকেও জানে না বোধ হয়। কতবার যে করোনার দাবড়ানি খেয়ে ঘরে ঢুকে যেতে হয়েছে, আত্মগোপনে থাকা কর্মীদের মতো মুখোশ পরে চলতে হয়েছে, কত মানুষ যে গেছে করোনার পেটে, তার হিসাব রাখা মানুষের পক্ষে কঠিন। মানুষের জীবন নিয়েই দমিত হয়নি করোনা, ভয় দেখিয়ে মানুষের জীবনের আনন্দ-উল্লাস কেড়ে নিয়ে গেছে।
তখন কোনো মানুষই স্বাভাবিক ছিল না। আজ যিনি আছেন, তাকে কাল পাওয়া যাবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ঈদ গেছে, পূজা-পার্বণ গেছে, স্বাধীনতা দিবস গেছে, নববর্ষ গেছে, সেসবের আনন্দ গিয়েছিল হারিয়ে।
কোথাও কান্নার রোল, কোথাও বিষাদের ছায়া। অনেকের কান্না করারও সুযোগ ছিল না। বাসা থেকে যাকে নিয়ে গেছে, সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। শেষবার প্রিয়জনের মুখটাও দেখতে পারেনি। মার্চ ২০২০ সাল থেকে শুরু এই আমেরিকায়। ১৯ মার্চ থেকেই লকডাউন। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। সিটিজুড়ে থমথমে ভাব। না ঘুমানোর শহর দিনেও যেন নেতিয়ে পড়ে। দোকানপাটে বেচাকেনা নেই। চায়ের টেবিলে আড্ডা নেই। করোনা যেন জুজু। ভয়ে মানুষজন বাইরে যায় না। বাইরে গেলেই যেন জুজু ধরে নিয়ে যাবে। আর চেনা জগতে ফেরা যাবে না। চোখের সামনে দিয়ে কত প্রিয়জন, কত চেনা মানুষ চলে গেল।
করোনার সেই মৃত্যু আতঙ্ক বন্টন প্রায় দুই বছর পর, করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়া পর্যন্ত। প্রথমে বিরতি দিয়ে দুটি, এরপর আরেকটা লম্বা বিরতি দিয়ে আরও দুটি বুস্টার। কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলো। দোকানপাট খুলল। বেচাকেনা শুরু হলো। মানুষের পদচারণে সিটি সহসাই মুখর হয়ে না উঠলেও সরব হতে শুরু করল।
সর্বংসহা মানুষ ভেবে নিয়েছিল, সমাজ সভ্যতা বুঝি করোনা থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। কিন্তু না, ওই যে বলে, মানুষ ভাবে এক আর ঈশ্বর তার জন্য নির্ধারণ করে রাখেন অন্য কিছু। এখন আবার খবর আসছে, নতুন করে করোনার চোখ রাঙানি। মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তাই তো সিডিসির সাম্প্রতিক নির্দেশনা, দেশে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ। সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে ঠিকানার ৩ জানুয়ারি সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায়। সংবাদটি বিচলিত হওয়ার মতো। ঠিকানার ঢাকা অফিসের বরাতে সংবাদটিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন উপধরন বা সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন১। যদিও বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই কমিটি মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। সেই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি, আইসিইউ প্রস্তুত রাখা এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছে।
আসলে যেকোনো বিপদে আতঙ্কিত হয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকার চেয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সৎ ও বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ মেনে নিরাপদ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিপৎকালে বিজ্ঞানের সাহায্যে যদি নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়, তবে তেমন পরামর্শ মেনে চলাই উচিত। আমরা যেন আপৎকালে সে রকম পরামর্শ না মেনে ভুল না করি।