অবশেষে বাংলাদেশে সাতকাহন কথার নির্বাচন সম্পন্ন হয় ৭ জানুয়ারি সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত। নির্বাচনে ১২ কোটির কাছাকাছি ভোটার ছিল। তার মধ্যে ৪১.০৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবি করেছেন। তিনি এও দাবি করেছেন, কারও এ নিয়ে সন্দেহ হলে আদালতেও যেতে পারেন। ভোটের পূর্বে যত কথা, আলোচনা, সমালোচনা, আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ৭ তারিখের নির্বাচনে সবই হয়েছে। তবে তার মাত্রা এমন পর্যায়ে যায়নি, যা ভয়ংকর পর্যায় পার হয়ে গেছে। প্রায় ১২ কোটি ভোটারসংখ্যার ৪২ হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের এমন একটি নির্বাচন স্বাভাবিক পর্যায়ে যতটা সাংঘর্ষিক হওয়ার কথা, তার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। বিশেষ করে, যখন শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপি কেবল নির্বাচন বর্জনই করেনি, নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকিও দিয়েছিল।
নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট হলেও ময়মনসিংহের একটি আসনের ভোট স্থগিত হওয়ায় ২৯৮ আসনের ফল প্রকাশ করা হয়।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল হয়। ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২৪টিতে জয়ী হয়ে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা টানা চারবারের মতো সংসদীয় দলের প্রধান হয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসন অলঙ্কৃত করে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। অন্য আসনগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি এবং অন্যান্য ২টি আসন লাভ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠিত হবে। ইতিমধ্যে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বহুল আলোচিত নির্বাচন অনুষ্ঠান, ফলাফল প্রকাশ, বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠনের প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ পাচ্ছে। নির্বাচনের পর বিদেশি পর্যবেক্ষক দল, যার মধ্যে ইউরোপ, ভারত, চীন, রাশিয়ার সদস্য আছেন, তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের মন্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে। আর নির্বাচন বর্জনকারীরা এই পর্যবেক্ষক দলকে ডামি পর্যবেক্ষক দল উল্লেখ করে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন দাবি করেছে। তাদের দাবি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে। অন্যদিকে নির্বাচনে সরকারের সঙ্গী দল জাতীয় পার্টির প্রধান জি এম কাদের নির্বাচনের ফলাফলকে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ফলাফল বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে নির্বাচনী ফলাফলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ের সকল কৃতিত্ব জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিলেন। এবারের নির্বাচনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা যায়, কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীর পরাজয় এবং নতুন কয়েকজনের উত্থান ঘটেছে। পরাজিতদের মধ্যে আছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, কাজী জাফর উল্লাহ, মাহবুব আলী, মমতাজ বেগম, ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ। জয়ীদের মধ্যে আছেন ব্যারিস্টার সুমন, সাকিব আল হাসান প্রমুখ। পার্লামেন্টে বিরেধী দল কারা হবেন, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।
দেশের জনগণ নির্বাচনের রায়কে মেনে নিয়ে সবাইকে সামনে তাকানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। উন্নয়নের সপক্ষে ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই জয়কে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখবেন বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা। আবার পাঁচ বছর পর নির্বাচন হবে। এ সময়ে আমরা সবাই যেন দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি।