Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ ও রাজনীতি

বাংলাদেশ ও রাজনীতি



 
১৯৭১ থেকে ২০২৫। ৫৪ বছর। অর্ধশতাব্দীর অধিক সময়। এর মধ্যে একটি বিদেশি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব। সাধারণভাবে মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানি শৃঙ্খলা ভেঙে মুক্তি লাভ। নতুন স্বাধীনতা লাভ। নতুন দেশ বাংলাদেশ। নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীত। নতুন মানচিত্র। পূর্ব পাকিস্তান অঙ্গ অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলা হয়। এ লড়াইয়ে মুষ্টিমেয় কিছু পাকিস্তানপ্রেমী ছাড়া পূর্ব বাংলার সব বাঙালির অংশগ্রহণ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান। দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, সমগ্র বাংলাদেশ যেন পোড়ামাটি। ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। কোটির অধিক মানুষ আশ্রয়হীন।

অবশেষে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গেরিলাযুদ্ধ। গেরিলাযুদ্ধ থেকে সম্মুখযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস এই ‘মরণপণ’ লড়াই। শেষে শত্রুরা পরাজিত। স্বাধীনতা এবং মুক্তিকামী বাঙালির বিজয়। এর পর থেকে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, বাঙালি শাসক এবং বাঙালি শাসিত। শোষক বাঙালি, শোষিতও বাঙালি। রাজা বাঙালি, প্রজা বাঙালি। বাঙালির রাজনীতি। বাঙালি রাজনীতির পরম্পরা ৫৪ বছর ধরে। এই ৫৪ বছরে কখনো হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল, কখনো নির্বাচন, কখনো গণ-অভ্যুত্থান, কখনো সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল। সব আন্দোলন, অভ্যুত্থান আর শাসনামলেই সাধারণ জনগণের রক্তদান, অঙ্গহানি। যত দুর্ভোগ সব গণমানুষের জীবনে।

যত পরিবর্তন, মুক্তিযুদ্ধ, লড়াই, আন্দোলন-অভ্যুত্থান, পতাকা বদল, সরকার বদল-সবকিছুই হয়েছে জনগণের নামে। তাদের মঙ্গল এবং কল্যাণে। দেশের নামও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সবকিছুই অর্জিত হয়েছে জনগণের রক্ত, ঘাম ও জীবনের বিনিময়ে। সাধারণত যাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’, যারা এক বেলা ভাত পায় তো তিন বেলা জোটে ফ্যান বা কচু-ঘেঁচু, তাদের মাথা গোঁজার আশ্রয় নেই, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই, শরীর ঢাকার মতো বস্ত্র নেই; তারাই সব পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি।

এসব মানুষের হাড় জরাজীর্ণ শরীরে বল না থাক, বুকের পাঁজরে সাহসের বাতাস ভরা। তাই তো মুক্তির সামান্য আলো বা ভাগ্য পরিবর্তনের যেকোনো ডাকে তারা যেকোনো বিপদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। সেভাবে তারা দাঁড়িয়েছে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, ’৬৬-এর ৬ দফার সংগ্রামে, ’৬৯-এ গণ-আন্দোলনে, ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে, ’৯০-এর গণ-আন্দোলনে এবং ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে। সব আন্দোলনে তাদের অগ্রবর্তী অংশগ্রহণ, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার এবং অবশেষে জয়লাভ। তাদের জন্যই বাঙালিরা বীরের জাতি।

কিন্তু যারা সব আন্দোলনে, সংগ্রামে নিষ্পেষিত-বঞ্চিত মানুষকে মুক্তির কথা বলে ভাগ্যবদলের মুলা ঝুলিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের বিনিময়ে ক্ষমতা পেয়েছেন, তারা সেই সব মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা যেমন বিস্মৃত হয়েছেন, তেমনি ভুলে গেছেন নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা। দূর বা নিকট অতীতের কথা বাদ দিয়ে একদম টাটকা স্মৃতির উদাহরণ ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এতে সাধারণ ছাত্র-জনতা জীবন দিলেন, পঙ্গুত্ববরণ করে এখনো বিছানায় পড়ে আছেন। কিন্তু সেই বৈষম্যের সামান্য হলেও কি অবসান ঘটেছে? একটুও না। বরং সমাজজীবনে দুর্গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজজীবনে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। সঙ্গে নতুন উপসর্গ মব কালচারের আবির্ভাব ঘটেছে।

গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, মূল্যবোধ-সব নির্বাসিত সেই পুরোনো গল্প ‘বাঁক বদলের নতুন পাওয়া’। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে, ধোঁকা দিয়ে কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই হয়তো রাজনীতির এই পরম্পরা। সব বদল হয়। শাসক, শাসন, দল সব। শুধু বদল হয় না সাধারণ মানুষের ভাগ্য, পূরণ হয় না তাদের সামান্য চাওয়া-পাওয়া।
 

কমেন্ট বক্স