মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আবারও বিতর্কের মুখে। সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্ত এবং ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এক ধরনের অরওয়েলিয়ান ধাঁচে শাসনের দিকে ঝুঁকছে—যেখানে সত্য বিকৃতি, ইতিহাস পুনঃলিখন ও ভয়ভীতির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার প্রবণতা স্পষ্ট। খবর সিএনএনের।
ইতিহাস মুছে ফেলার অভিযোগ
গত মার্চে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে বলেন, গত এক দশকে আমেরিকার ইতিহাস বিকৃত করার সচেতন চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ কথার আড়ালে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন-এর মতো জাতীয় ঐতিহ্যের কেন্দ্রগুলো থেকে তথাকথিত ‘অনুপযুক্ত মতবাদ’ সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
এই আদেশের পর স্মিথসোনিয়ান-এর ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টরি থেকে একটি বোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়, যেখানে ট্রাম্পের দুইবারের অভিশংসনের উল্লেখ ছিল। বোর্ডটি ছিল ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সীমা’ বিষয়ক প্রদর্শনীর অংশ। যদিও স্মিথসোনিয়ান দাবি করেছে, তারা কোনো প্রশাসনিক চাপ ছাড়াই একটি আপডেট প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে এই বোর্ড সরিয়েছে, তবে অনেকেই একে ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত
এই সপ্তাহে আরও একটি ঘটনা যুক্ত হয়েছে বিতর্কে : ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর কমিশনার ড. এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে হঠাৎ করে বরখাস্ত করেন। এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়ে, যখন সংস্থাটি সর্বশেষ তিন মাসের কর্মসংস্থান প্রতিবেদনে হতাশাজনক তথ্য দেয়। যেটি ছিল ২০১০ সালের পর সবচেয়ে খারাপ।
ট্রাম্প নিজেই বলেন, আমরা তাকে বরখাস্ত করেছি কারণ আমরা আজকের সংখ্যায় বিশ্বাস করিনি।
এই বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন অনেক রিপাবলিকান সিনেটরও।
সিনেটর সিনথিয়া লুমিস বলেন, “সংখ্যাগুলো যদি সত্যিই সঠিক হয়, তাহলে কেবল প্রেসিডেন্টের অপছন্দের কারণে একজন পরিসংখ্যানবিদকে বরখাস্ত করা অযৌক্তিক।”
সিনেটর র্যান্ড পল ও লিসা মারকোস্কিও উদ্বেগ জানিয়েছেন যে, এর ফলে জনগণের মধ্যে সরকারি তথ্য ও পরিসংখ্যানের প্রতি বিশ্বাস হারাবে।
ইতিহাস ও তথ্য নিয়ন্ত্রণের অতীত নজির
এই প্রথম নয়, ট্রাম্প প্রশাসন আগেও ইতিহাস ও তথ্য নিজের মতো করে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে:
* ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলার অভিযুক্তদের ‘দেশপ্রেমিক বন্দি’ বলে অভিহিত করে, পরে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
* ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই) নীতিমালাকে ছাঁটাই করতে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও নারীদের অর্জনও উপেক্ষিত হয়েছে।
* প্রতিবাদ ও সমালোচনার অধিকারকে দমন করে, ট্রাম্পের অনুগত এক প্রসিকিউটর পর্যন্ত ইলন মাস্কের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
* বিচারপতিদের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সমালোচনার বৈধতা নিয়ে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করেছেন ট্রাম্প।
* ক্ষমতার শুরুতেই সেনা নেতাদের ছবি সরানো এবং প্রশাসনের স্বাধীন তদারক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছিলেন।
এই সব ঘটনা মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ড কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন নয়—এটি গণতন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে তোলার মতো একটি ভয়ানক নজির। ইতিহাসকে নিজের মতো করে লেখার এই চেষ্টাগুলো জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসে বর্ণিত ভয়ঙ্কর শাসনব্যবস্থার স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
ঠিকানা/এসআর