যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক শুল্কনীতি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে ছিল। গত বৃহস্পতিবার ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো মার্কিন শুল্কের ঘোষণার পর একেক রকম অবস্থায় পড়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে গতকাল শুক্রবার বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ শুল্ক আরোপে এশিয়ার দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সর্বশেষ হালনাগাদ তালিকা অনুসারে, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম—সবাই এখন ১৯ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে। ব্রুনেইয়ের ক্ষেত্রে এ হার ২৫ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাওস ও মিয়ানমার—তাদের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এর পেছনের যুক্তি স্পষ্ট নয়, তবে হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতির প্রধান ড. ডেবোরাহ এলমস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার সীমিত, ক্রয়ক্ষমতা কম এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর শুল্ক হার ভিন্ন ভিন্ন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৯ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম এবং ভারতের চেয়ে অনেকটাই কম। পাকিস্তানের মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ হচ্ছে টেক্সটাইল, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে যায়। অন্যদিকে, এ খাতে পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভারত, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম—সবাই এখন বেশি শুল্কের আওতায়। আফগানিস্তান, ফিজি, নাউরু এবং পাপুয়া নিউ গিনি সবাই ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে।
কাজাখস্তানের জন্য এ হার ২৫ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ‘অনির্দিষ্ট জরিমানা’ ধার্য করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখনো দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের জন্য ‘বিরক্তির কারণ’। তবে ভারতের ওপর আরোপিত সর্বশেষ শুল্ক চলতি বছরের এপ্রিলে প্রস্তাবিত ২৭ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
জানা গেছে, এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ভালো অবস্থানে আছে। কারণ, তাদের উৎপাদিত গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্য মার্কিন বাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তাইওয়ানের পণ্যে শুল্ক হার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে তাদের চিপ শিল্পকে আলাদা খাতে নতুন শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেন, বর্তমানে কার্যকর শুল্ক হারটি ‘অস্থায়ী’, কারণ ওয়াশিংটনের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ শুল্ক ঘোষণায় চীনের নাম না থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দেশটি। দুই দেশই এখন তাদের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়াতে সম্মত হয়েছে, যা আগামী ১২ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এমনকি আসিয়ান দেশগুলোর ওপরও পড়েছে প্রভাব। দশ আসিয়ান দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে চুক্তিতে পৌঁছায়। তারা শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে শুল্ক হার অপরিবর্তিত রয়েছে অর্থাৎ ১০ শতাংশ। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেশি করে, রপ্তানি করে কম।
ঠিকানা/এএস