গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান কমার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশকারী সরকারি সংস্থা ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকস (বিএলএস)-এর প্রধানকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়।
স্থানীয় সময় ১ আগস্ট (শুক্রবার) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প বিএলএসের কমিশনার এরিকা ম্যাকএন্টারফারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে চাকরির সংখ্যা নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগ তোলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ওয়াল স্ট্রিট (যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার) বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। যখন অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ঠিক তখনই সরকারি অর্থনৈতিক তথ্যে হোয়াইট হাউসের এমন হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার বিএলএস প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা মে এবং জুন মাসের কর্মসংস্থানের হিসাবও সংশোধন করে জানায়, আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার কম কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেওয়ার সময় ট্রাম্প এই সংশোধিত তথ্যের কথাই উল্লেখ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের কর্মসংস্থানের নির্ভুল পরিসংখ্যান প্রয়োজন। আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি বাইডেন মনোনীত এই রাজনৈতিক ব্যক্তিকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে।’
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
বিএলএসের প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট। তিনি বলেন, সরকারি অর্থনৈতিক তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, ডানপন্থি আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের অর্থনৈতিক নীতি গবেষণার পরিচালক মাইকেল স্ট্রেইন ম্যাকএন্টারফারের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ম্যাক এন্টারফার ‘অত্যন্ত সততার’ সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করছেন ট্রাম্প।
পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের সিনিয়র ফেলো জেড কোলকো বলেন, বিএলএস প্রধানকে বরখাস্ত করা মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর সর্বোচ্চ পর্যায়ের আঘাত।
ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন লোক থাকা দরকার, যাদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি সংখ্যাগুলো ছিল জাল, ঠিক যেমন নির্বাচনের আগে ছিল... তাই আমি কী করেছি জানেন? তাকে বরখাস্ত করেছি এবং আমি সঠিক কাজটি করেছি।
ঠিকানা/এএস