পর্ব ১ : সিট নম্বর সাত
তুহিন প্রতিদিনের মতো সেই ট্রেনের সিট নম্বর সাতেই বসে। জানালার পাশে, শহরের আলোর রেখা ভেসে আসে তার চোখে।
মেয়েটি আসে আজও-চুলে সেই পুরোনো নারকেল তেলের গন্ধ, ঠোঁটের বাঁ দিকে ছোট্ট তিল।
‘আজ এত চুপ কেন?’ তুহিন জিজ্ঞেস করে।
মেয়েটি বলে, ‘আমার নাম কী জানেন আপনি?’
তুহিন মৃদু হেসে বলে, ‘নুরুন্নাহার।’
মেয়েটি চোখ বড় করে বলে, ‘না, আমার নাম মরিয়ম।’
তুহিন বলে, ‘জানি... কিন্তু আপনি যে শুধু মরিয়ম নন... আপনি শেফালির সেই মুচকি হাসি, নুরুন্নাহারের সেই প্রথম চিঠির গন্ধ, আর... আমার অনেক না-বলা গল্পের মধ্যবর্তী দাঁড়ি।’
মেয়েটি কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে। ট্রেন থামে, মেয়েটি নেমে যায়।
তুহিন জানে-কাল সে আবার আসবে। সিট নম্বর সাত কখনো ফাঁকা থাকে না।
পর্ব ২ : মিন্ট ফ্লেভার
‘আপনি কি চুইংগাম খান?’ মরিয়ম একদিন জিজ্ঞেস করে।
‘না... কেন?’ তুহিন অবাক হয়।
‘আপনার মুখে মিন্ট ফ্লেভারের ঠান্ডা একটা ভাব থাকে... ঠিক যেমনটা আমার ছোটবেলার এক বন্ধুর মুখে ছিল।’
তুহিন হাসে, বলে, ‘তিনজন মেয়েকে চিনি, যাদের মুখে এমনই ফ্লেভার ছিলÑনুরুন্নাহার, শেফালি আর এখন আপনি।’
মরিয়ম ঠোঁট কামড়ে চুপ করে যায়।
তুহিন ভাবে, ফ্লেভার কি মুখে থাকে? নাকি মনে?
পর্ব ৩ : কফিশপে নীরবতা
তুহিন মরিয়মকে একদিন চা খাওয়াতে নিয়ে যায়।
কিন্তু মরিয়ম কফি অর্ডার করে।
‘কেন চা নয়?’ তুহিন জিজ্ঞেস করে।
মরিয়ম মৃদু হেসে বলে, ‘চা তোমার নুরুন্নাহারের ছিল। আমি কফির মেয়ে।’
কথাটায় হালকা ঈর্ষার ছায়া নেমে আসে।
তুহিন চুপ করে থাকে, কফির কাপ থেকে ধোঁয়া ওঠে, আর ধোঁয়ার ভেতর শেফালির মুখ ভেসে ওঠেÑহাসিমুখ, মায়াময়।
পর্ব ৪ : ভুল নামের ডাক
একদিন ভুল করে তুহিন বলে ফেলে, ‘শেফালি... চা নেবে?’
মরিয়ম থমকে যায়। মুখ নরম হয়ে যায় কিছুক্ষণ, তারপর বলে, ‘তোমার শেফালি অনেক ভাগ্যবান।’
তুহিন কাঁপা গলায় বলে, ‘তিনজনই ভাগ্যবান। শুধু আমি... একেক দিন একেক গল্পে হারিয়ে যাই।’
মরিয়ম চলে যায় সেদিন, আর ফিরেও দেখে না।
পর্ব ৫ : কল্পনার শেষ স্টেশন
তুহিন এখনো ট্রেনে ওঠে, সিট নম্বর সাত খালি থাকে বেশির ভাগ দিন।
মাঝে মাঝে একেকটা মেয়ে বসে, কিন্তু তাতে চুলে নারকেল তেলের গন্ধ থাকে না। ঠোঁটে তিল থাকে না। মুখে মিন্ট ফ্লেভার নেই।
একদিন হঠাৎ মরিয়ম ফিরে আসে।
বলে, ‘তুমি কি এখনো কল্পনায় বাঁচো?’
তুহিন বলে, ‘না। এখন আমি কল্পনাকেও বাস্তব বলে মেনে নিয়েছি।’
মরিয়ম হেসে বলে, ‘তাহলে চলো, একটা নতুন গল্প শুরু করি।’
সমাপ্তি... অথবা নতুন শুরু!