Thikana News
০২ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা
‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা- শুধিতে হইবে ঋণ...’। ব্যক্তি ঋণ, প্রতিষ্ঠানিক ঋণ, সরকারি ঋণ। একটি দেশের মধ্যে ঋণ সে যে প্রকারেরই হোক, শেষ বিচারে সব ঋণের দায়ই এসে পড়ে সরকারের ঘাড়ে। ব্যক্তিগতভাবে হোক আর সরকারিভাবে হোক, ঋণ পাওয়াটা নির্ভর করে ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতার ওপর। সাধারণভাবে ব্যক্তিগত ঋণ ব্যক্তির কাছে থেকে নেওয়া হয় সক্ষম পরিচিতজনদের কাছ থেকে, যেমন বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন। সরকারি ঋণ সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, দেশের ব্যাংক, কোনো কোনো সময় এক দেশের ধনবান ব্যক্তি কোনো প্রজেক্টের একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত উচ্চ হারে সুদ বা লভ্যাংশ ভোগের শর্তে। বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে যে ঋণ গ্রহণ করা হয় আন্তর্জাতিক এমন সব শর্তে, সে কারণে দেশের ভেতরে নির্বাচন বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, সরকারে পরিবর্তন ঘটলে সব সময় বর্তমান সরকারের ওপর বর্তায়। ‘আমাদের আমলে নেওয়া হয়নি, তাই ঋণ শোধের দায় আমাদের নয়’-এ কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। তবে সময় নিয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে পরিশোধ করার বিধান আছে। যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়ে কিংবা এমন অবস্থায় পতিত হয় যে নিজেকে ‘দেউলিয়া’ দেশ বলে ঘোষণা দেয় এবং আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে দেউলিয়া বলে বিবেচিত হয়, সে পরিস্থিতি থেকেও উদ্ধার করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কথায় আছে, মৃত্যুকালে কোরামিন দিলেও কাজ হয় না।

যাক সেসব কথা। এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা যাক। বাংলাদেশে সরকারে থাকা দলগুলোর কথা প্রায় একই সুরে ও স্বরে গাঁথা। অন্যদিকে ঋণদাতা দেশগুলোর রিপোর্ট বা প্রতিবেদনেও প্রায় একই রকম কথা। ক্ষমতায় যে দলই যাক-সে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোনো শক্তি-তাদের মুখে ‘দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বা ভালো নেই’-এমন কথা কখনোই শোনা যাবে না। তাদের কথায় মনে হবে, ‘দেশ আগের যেকোনো অবস্থার চেয়ে ভালো। সামনে আরও শুভদিনের সংবাদ দেওয়া যাবে।’ তাদের সমর্থকদের মুখেও শোভা পেত একই ভাষা, একই সুর। প্রকৃত সত্য মেঘের আড়ালেই থেকে যেত।

আজকের পরিস্থিতি খুব যে একটা ব্যতিক্রম, তা নয়। সরকারের গুণগত পরিবর্তন ঘটলেও বাস্তব পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। কথা হতেই পারে, ১৭ বছরের জঞ্জাল ১ বছরে পরিষ্কার করা যায় না। কথা যতই সত্য হোক; কিন্তু এ সত্যও অস্বীকার করা যাবে না, ‘মর্নিং সোজ দ্য ডে।’ তাই পরিবেশ-পরিস্থিতি যে খুব একটা পাল্টায়নি তা বলা যায়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবক্ষয় ঘটেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। যা ঠিকানার ২৫ জুন এবং ২ জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। দুটি সংবাদই স্থান পেয়েছে ঠিকানার প্রথম পৃষ্ঠায়। ২৫ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ‘দিনে দিনে বাড়ছে দেনা’। দ্বিতীয়টির, যেটি প্রকাশিত হয়েছে ঠিকানার জুলাই ২ সংখ্যায়, শিরোনাম ‘আইএমএফের প্রতিবেদন : নানা চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি’। এ দুটি প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য প্রায় একই রকম-বাংলাদেশে ব্যাংক-ব্যবস্থার পরিস্থিতি খুবই আশঙ্কাজনক। অভ্যন্তরীণ ঋণদানের ক্ষেত্রে তারল্য সংকট। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সেসব কালোটাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া এবং পতিত সরকারের সুবিধাভোগী কালোটাকার মালিকেরা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কোরামিন দিয়েও তাদের আর দাঁড় করানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের এই সংকট সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করতে পারছেন না। সুতরাং আন্তরিকতা, দেশপ্রেম-দেশের সরকার ও জনগণের মনে জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত অর্থনীতিকে জাগিয়ে তোলা কতটা সম্ভবÑতা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।
 

কমেন্ট বক্স