Thikana News
২৬ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

খেলাপিরাই গিলে খেল বাংলাদেশটাকে

খেলাপিরাই গিলে খেল বাংলাদেশটাকে



 
বাংলাদেশের নদী-নালায় যত কুমির আছে আর বনে-জঙ্গলে যত বাঘ আছে, তার চেয়েও মনে হয় অনেক বেশি আছে খেলাপির সংখ্যা। খেলাপিরা বাঘ-কুমিরের চেয়েও ভয়ংকর। বাঘ-কুমির হয়তো একটা মানুষ খায়। বাংলাদেশের নানা জাতের খেলাপিরা গোটা দেশটাকেই গিলে খায়। এর মধ্যে আবার ঋণখেলাপিরা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। এরা অর্থনীতি খেয়ে দেশটাকে খোসা বানিয়ে ফেলে। অর্থনীতি যদি হয় একটি দেশের মেরুদণ্ড, তবে এই ঋণখেলাপিরা সেই মেরুদণ্ডকে খেয়ে দেশটাকে মেরুদণ্ডহীন করে ফেলে। তখন দেশটা কোনো রকমে দাঁড়িয়ে থাকলেও চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলে। চলতে ফিরতে পারে না। পা বাড়ালেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকেরই সেই দশা। ঋণখেলাপিরা বাংলাদেশের লাভজনক অনেকগুলো ব্যাংককেই মেরুদণ্ডহীন করে ফেলেছে এমনভাবে যে, এখন আর তারা দাঁড়াতে পারছে না। কোরামিন দিয়েও আর কাজ হয় না। ব্যাংকগুলো ভেঙে পড়েছে আর জমাদানকারীরা মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে হায় হায় করছে।  আজকের সময়ে কোনো দেশের ব্যাংকগুলোর যদি এই দশা হয়, তখন মানুষের হায় হায় করা ছাড়া আর কী-ইবা করার থাকে? রাজনীতিবিদদের মুখে হরহামেশা শোনা যায়, ‘নেতার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’ বাস্তবে দেখা যায়, ওই আপ্ত বাক্যের ঠিক উল্টোটা। মানুষ সব সময় দেখতে পাচ্ছে, ‘দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নেতা বড়।’

তাই তো নেতাদের কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে যা খুশি তা-ই করে ফেলতে দেখা যায়। খুন করলেও মাফ। দেশে লুটের রাজত্ব কায়েম করলেও কারও কিছু করার থাকে না। বলার থাকে না। ধরার থাকে না। সাধারণ মুখ্যসুখ্য মানুষকে বলা হয়, আইন অন্ধ নয়, আইনের হাত লম্বা। আসলে কি তা-ই? আইনের হাত ততটাই লম্বা, যতটা লম্বা হলে সাধারণ মানুষকে ধরা যায়। আইন খুব ভালো দেখতে পায়। দেখতে পায় না শুধু সন্ত্রাসীদের, দেখতে পায় না লুটেরা ঋণখেলাপিদের, দেখতে পায় না সরকারি দলের মাস্তানদের। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী মাফিয়া, ডনদেরও দেখতে পায় না।
একটি ‘ছোট খবরের’ সূত্র ধরে উপরের কথাগুলো বলা। কথাগুলো ন্যায্য কি না, মানুষ বিচার করবে। খবরটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানায় ছাপা হয়েছে গত ১৮ জুন সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায়। শিরোনাম ছিল ‘খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।’ খবরে যা বলা হয়েছে, তা যে মোটেও জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়, তা শিরোনাম থেকেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের মতো একটি ‘মধ্যবিত্ত’ দেশের ঋণ খেলাপ যদি ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হয়, তবে সে দেশের মানুষের দুর্ভোগ যে অনিবার্য, তা সহজেই বুঝতে পারা যায়। সংবাদটির শুরুতেই সে দুর্ভোগ উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক খাতে’ খেলাপি ঋণ এখন এক বিপজ্জনক রেকর্ডে পৌঁছেছে।’ ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটার পর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে ব্যাংক খেলাপি দেখাতে পারত না খেলাপিরা প্রভাবশালী ছিল বলে। বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী, ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সুযোগ পাওয়ায় কিছুটা চিত্র বেরিয়ে আসছে, যা আগে আড়াল করে রাখা হতো। তবে প্রকৃত তথ্য আরও ভয়ংকর। প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকা দাঁড়িয়ে যাবে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেখান থেকে আজ তা প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ কোটির ঘরে পৌঁছেছে।
এর পরও কি চিৎকার করে বলতে হবে, ‘ঘরে আগুন লেগেছে?’
 

কমেন্ট বক্স