Thikana News
২৫ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

বিভক্ত বইমেলা

বিভক্ত বইমেলা



 
ভাঙন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বদেশ কিংবা প্রবাসে যেখানেই থাকুক, কেউই ভাঙনমুক্ত নয়। বাংলাদেশে হিন্দু-হিন্দু বিভক্তি, মুসলমান-মুসলমান বিভক্তি, মানুষ-মানুষে বিভক্তি, ভাবনা-চিন্তা-পরিকল্পনায় বিভক্তি। বিভক্তি দেখা যায় রাষ্ট্র পরিচালনায়ও। বিভক্তি লক্ষ করা যায় দলীয় রাজনীতিতে। পরিণতি অভ্যন্তরীণ দলাদলি, কোন্দল। ভাষা নিয়ে দলাদলি। পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে দলাদলি।

এবার নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে ভাঙন নিয়ে এসেছে বইমেলা। প্রবাসে আমরা বাস করি প্রবাসী স্বজনদের নিয়ে। তারাই আত্মীয়, তারাই বন্ধু। সেই সঙ্গে আরও কিছু আগোয়ান স্বজন আছেন, যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো নিজের শ্রম, মেধা এমনকি নিজের পকেটের পয়সা ব্যয় করে নানা সংগঠন গড়ে তোলেন, আয়োজন করেন বিভিন্ন বিনোদন উদযাপনের, প্রবাসের মানুষের মন ভালো করে দিতে। তাদের নিঃস্বার্থ এসব আনন্দ আয়োজন প্রবাসের নিঃসঙ্গতা প্রশমনে টনিকের মতো কাজ করে।

প্রবাসেই আবার একশ্রেণির মানুষ আছে, যারা অন্যের ভালো, অন্যের আনন্দ, উৎসব মোটেই সুনজরে দেখতে পারে না। তারা সব সময় আনন্দ আয়োজন যেকোনো ছুতোয় বাগড়া দিয়ে তা নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে। দুধে যেমন এক ফোঁটা টক মিশিয়ে দিলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়, তাদের কর্মে তেমনি সব আয়োজন, সব সংগঠন বিনষ্ট হয়, বিভক্ত হয়ে পড়ে।

আবার সমাজে, রাষ্ট্রে আরেক রকম সংকটও আছে। যা নেতৃত্ব বা পদলাভের মতো উপকারী নয়। পদ নিয়ে, অর্থ নিয়ে কাড়াকাড়ি, হানাহানির চেয়েও ভয়ংকর। সেটা হচ্ছে : আদর্শ বা বিশ্বাস নিয়ে যখন কোনো প্রতিষ্ঠান বিভক্ত হয়, সেই বিভক্তি অর্থ বা পদের চেয়েও কঠিন ভাঙন। পদ বা অর্থ নিয়ে যারা বিভক্ত হয়, তাদের আবার মিল-মহব্বতও হতে পারে তাড়াতাড়ি। কিন্তু বিভক্তি বা ছাড়াছাড়ি যখন হয় আদর্শ বা দর্শন নিয়ে, তখন সে বিভক্তি আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তখন পক্ষে-বিপক্ষে মানুষের সংখ্যা কম হোক আর বেশি হোকÑতাদের জোড়া লাগানো কঠিন কর্ম।
নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বইমেলা এবার এক থেকে দুই পক্ষ হয়ে দুই স্থানে আয়োজিত হল। এক পক্ষের অনুষ্ঠান হয় চার দিনব্যাপী ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ মে। আরেক পক্ষ আয়োজন করে দুই দিনব্যাপী ২৪ ও ২৫ মে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ এর বইমেলা ঐক্যবদ্ধভাবে আয়োজিত হয়েছিল। বিভক্তির কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। ড. নূরুন্নবী, বিশ্বজিৎ সাহা এবং অন্যরা এককাট্টা থেকে ৩৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করেন। এ বছরই তারা ভাঙনের কবলে পতিত হবে, কারও পক্ষে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করাও সম্ভব হয়নি। শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই এক বিশ্বাস, এক দর্শন, এক চেতনার মানুষ ছিলেন। তবে কি দু-একজনের আদর্শের মতানৈক্যের কারণেএই ভাঙন?

অনেকেই বলতে চাচ্ছেন, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনের ফসল হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গদিনসীন হন, অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে। সেই অন্তর্বর্তী সরকারের ঝোড়ো হওয়াতেই নাকি এ বছরের বইমেলার ঐক্য ভেঙে খান খান। অথচ দুটি প্রতিষ্ঠানের ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে আমাদের বেশ অহংকারই ছিল। বইমেলা এবং বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক। এ দুটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান অনেক বড়-ঝাপটা সয়েছে; কিন্তু ভাঙনের কবলে পড়েনি। এবার ভেঙে গেল সেই অহংকার। বইমেলা ভাঙল। আমাদের কি তবে ৫০ বছরের প্রাচীন সোসাইটির ভাঙন দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে? সে দুঃসময় যেন না আসে। আমাদের প্রার্থনা সবার মধ্যে ঐক্য ফিরে আসুক। সবাই মিলেমিশে দুঃখ-সুখে একসঙ্গে পথ চলি। আমাদের প্রবাসীদের শক্তি হোক ঐক্য।

কমেন্ট বক্স