Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের রাজনীতি

খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের রাজনীতি



 
বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে খুব কষ্ট পেতে না হলেও খুব যে আবার একেবারে সরল, সে কথাও বলা যায় না। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল-জুলুম সয়ে শেষ ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ জীবন ও দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে অবশেষে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করি। সে সময় স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান ও জেনারেল ওসমানী। সক্রিয় সংগঠক হিসেবে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক, শেখ মণি এবং চার খলিফা হিসেবে পরিচিতি অর্জনকারী নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ। ছিলেন সামরিক কমান্ডে ১১ সেক্টর কমান্ডার।
সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এই মর্মে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না। তিনি বাংলাদেশে রাজনীতির অভিভাবক হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ একেবারে নতুন ভাবনা, নতুন কথা। বাংলাদেশের রাজনীতির ধারায় অবধারিত উপাদান হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, যিনি ক্ষমতায় যাওয়ার একবার সুযোগ পান, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় সারা জীবন থেকে যাওয়ার অভিলাষে মত্ত হয়ে ওঠেন। তখন ন্যায়-নীতি, মানুষের আকাক্সক্ষা-ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে সে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার নানা ফন্দি-ফিকির করতে থাকেন। যে কারণে দেশকে এবং দেশের মানুষকে অনেক রকম দুর্ভোগ সইতে হয়।

বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কতিপয় অতি লোভী সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হন। সে সময় দেশের যে পরিস্থিতি, তখন খালেদা জিয়া দেশের দায়িত্ব নিতে পারতেন। তিনি ক্ষমতা নিলেন না। তখনকার উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার নিয়ম অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সামরিক আইন জারি করে ১৯৮৪ সালে সে সময়ের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি নানা কায়দায় ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেন। শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার যৌথ নেতৃত্বে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনে এরশাদের পতন হলে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন। আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যায় ১৯৯৬-এ। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া পুনরায় জয়ী হয়ে সরকারে যান। এরপর ২০০৬ সালে জেনারেল মইনের নেতৃত্বে সেনাশাসন আবার ফিরে আসে বাংলাদেশে।

দুই বছর সেনানিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীনের সরকার দেশ পরিচালনা করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনই বিএনপির চেয়ারপারসনের শেষ নির্বাচন। এরপর আর তিনি আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি রোগভোগ এবং কারাভোগের মধ্যেই জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি কারাগার থেকেই শুধু বের হননি, সব মামলা থেকেও অব্যাহতি পান। এরপর বড় ছেলে তারেক রহমানের কাছে তার লন্ডনের বাসায় যান। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফিরে গেছেন দুই পুত্রবধূসহ। হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দর থেকে গুলশানে তার বাসা ফিরোজা পর্যন্ত তাকে অভ্যর্থনা জানান।

খালেদা জিয়ার ফিরে আসা নিয়ে সংবাদপত্রে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় একটি ব্যতিক্রমী সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটির শিরোনাম ‘রাজনীতিতে ফিরছেন না খালেদা জিয়া’। শিরোনাম থেকেই ধরে নেওয়া যায়, সংবাদটি বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কতটা ব্যতিক্রমী। খালেদা জিয়া ১৯৮৪ সাল থেকে বিএনপির দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তখন থেকেই একজন আপসহীন নেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। অনেক নিপীড়ন সয়েছেন কিন্তু তিনি কখনো কারও সঙ্গে আপস করেননি।
প্রকাশিত সংবাদটিতে দুটি মত পাওয়া যায়। জামায়াতের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমান তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া আর রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা মনেপ্রাণে চান তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হন। দলের দায়িত্ব নিয়ে আবার দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখুন। দল চাইতেই পারে, খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব নিয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। কিন্তু দেশবাসী মনে হয় মনেপ্রাণে এটাই কামনা করবেন, তিনি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়ে যদি জাতির বিবেক হয়ে কাজ করেন, তবে দেশ ও জাতির সেটাতেই  অধিকতর কল্যাণ হবে।
দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়, নাকি জাতির কল্যাণে বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে নিবেদন করেন।

কমেন্ট বক্স