Thikana News
২৩ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

সকল অনর্থের মূল অর্থ

সকল অনর্থের মূল অর্থ



 
‘অর্থই সকল অনর্থের মূল’-প্রাচীন কিন্তু সর্বকালেই প্রাসঙ্গিক প্রবচনটি। যত যুদ্ধ, যত শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, সম্পর্কের বিচ্ছেদ-কমবেশি সবের পেছনেই, সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যায়, অর্থের একটা ভূমিকা থাকে। সেটা হতে পারে খুব নিকটবর্তী কারণ, কিংবা দূরবর্তী। নানা বিষয়ে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে অর্থের এই ভূমিকা ফিরে ফিরে আসতে দেখা যায়। তেমনি বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। ‘ঠিকানা টিভি’র টকশোতে এসেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ।

আলাপের ভেতরে প্রবেশ করার আগে ‘ঠিকানা টিভি’ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। নইলে শ্রোতা-পাঠকদের একটু বাঁধায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যেতে পারে। কোথা থেকে তার আবির্ভাব ঘটল, কে তার মালিক-মোক্তার, কোথায় তার ঠিক-ঠিকানা-এ রকম নানা প্রশ্ন নানাজনের মনে উঁকি দিতেই পারে। ‘ঠিকানা’ পত্রিকার সঙ্গে প্রবাস কমিউনিটি ৩৬ বছর ধরে পরিচিত। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার সাবেক এমপি এম এম শাহীন ৩৬ বছর আগে কমিউনিটির মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে তাদের সামনের অন্ধকার দূর করতে আলোর রেখা হয়ে দাঁড় করাতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ঠিকানা। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রকাশ পায় ঠিকানা।

আত্মপ্রকাশের পর থেকেই ঠিকানা প্রবাস কমিউনিটির মানুষের মন জয় করে চলেছে। এখন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সব পত্রিকার মূল্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও ঠিকানা তার পূর্ব সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে বলেই মনে করেন পাঠক সমাজ। জনাব শাহীনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ঠিকানা পত্রিকার পাশাপাশি একটি টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করে কমিউনিটি সেবার পরিধি বিস্তৃত করবেন। তার সেই স্বপ্নই মাটি ছুঁতে পারলÑঠিকানা টিভি। ঠিকানা টিভি অনেক আগে থেকেই ম্যানহাটনের একটি স্টুডিও থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রোগ্রাম প্রচার করে আসছিল।

১৯ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ৭৪-০৯, ফ্লোর # ০৪ থেকে ঠিকানা টিভি তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এই নবযাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এর কর্ণধার এম এম শাহীন। নির্বাহী প্রযোজক মুশরাত শাহীন, প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন। নিয়মিত টকশো’র পাশাপাশি খালেদ মুহিউদ্দীনের নিজস্ব পরিকল্পনায় আরও দু-একটি প্রোগ্রামও চলছে।

এবার আসা যাক আসল কথায়। কথা উঠেছে বিসিবির এফডিআরের ২৫০ কোটি টাকা সরানো হয়েছে, সে নিয়ে। ফারুক আহমদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে টাকা কোথায় আছে। সরানোই-বা হলো কেন? ব্যক্তিগত কারও সুবিধার জন্য টাকাটা সরানো হয়েছে কি না? বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘এফডিআরের কোনো টাকা সরানো হয়নি। এই টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ট্রান্সফার করা হয়েছে।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘বোর্ড সভার মাধ্যমে অর্থ ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলেও অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। তখনকার ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতির কারণে তিনি সময় নষ্ট করার ঝুঁকি নিতে চাননি। সর্বশেষ তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি বিসিবিতে থাকি, ক্রিকেটে কোনো অনাচার থাকবে না।’

শেষে যে কথা বলার জন্য এত কিছু বলা, তা হচ্ছে দেশের সবারই হয়তো মনে আছে, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনকালে ঠিক এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। তিনি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছিলেন। সেই অ্যাকাউন্টে সুদসহ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিও পেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে বিষয়টি আস্থায় না নিয়ে ‘অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সে মামলায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ কারাবাস ভোগ শেষে নিম্ন আদালতের রায়ে ৫ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। আদালতের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সে দণ্ড দ্বিগুণ করে ১০ বছর করা হয় উচ্চ আদালতে।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘যারে দেখতে পারি না, তার চলন বাঁকা।’ আমরা যারা কাউকে অপছন্দ করি, তার কিছুই ভালো লাগে না। বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হচ্ছে বিরোধীদের জন্য কিছু নেই। জেলখানা আর সরকারি পেশিশক্তির মার খাওয়া ছাড়া বিরোধীদের জন্য অন্য আর কিছুই বরাদ্দ থাকে না। ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে ‘উইনার টেকস অল’। বাংলাদেশে পরাজিত হয় যারা, তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না নিপীড়ন-নির্যাতন, জেল-জুলুম ছাড়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিংসা, বিদ্বেষ খতম করে দেব, শেষ করে দেবÑএর বাইরে আর কিছুই জোটে না বিরোধী রাজনীতির জন্য। কিন্তু এ সত্য বিজয়ী দল বিশ্বাস করতে চায় না যে, হিংসা, বিদ্বেষ, বিরোধ, ঘৃণা, খতমের রাজনীতি দিয়ে কোনো কিছুর মীমাংসা হয় না। সত্যতে পৌঁছানো যায় 

বিভাজন, বিভক্তি, বিরোধ জিইয়ে রেখে কোনো দেশ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। দেশের ও দেশের মানুষের কোনো মঙ্গল, কোনো কল্যাণও আশা করা যায় না। বুকের মধ্যে হিংসা পুষে রেখে অন্যের ভালো করা যায় না। সত্য বিসর্জন দিয়ে মিথ্যা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আজ হোক আর কাল, ব্যর্থ হবেই। আমাদের সামনে সে উদাহরণ ভূরি ভূরি থাকা সত্ত্বেও আমরা তা ভুলে যাই। এর পরিণতিও আমাদের ভোগ করতে হয়। আগামী দিনে আমরা যেন বিস্মৃত না হয়ে সে দৃষ্টান্ত সামনে রেখে চলতে পারি।

কমেন্ট বক্স