Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সেই দিনটির প্রতীক্ষায়

সেই দিনটির প্রতীক্ষায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতায় বলেছিলেন, ‘তেত্রিশ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি...’। বাংলাদেশের মানুষের কপাল তার চেয়েও খারাপ। বায়ান্ন বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখল না। বাঙালি হিসেবে একটি জাতির জন্ম হলো কত রক্ত, কত জীবন উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে। ঘর-দুয়ার, ফসলের ক্ষেত জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। বিরান হয়ে গেল কত জনপদ। কত চন্দ্রভুক অমাবশ্যা দেখল বাংলাদেশ কিন্তু দেখতে পেল না এমন একটি নির্বাচন, যে নির্বাচনে মানুষের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আকাক্সক্ষা তৃপ্ত হয়।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে ভাবনা মানুষ মনের মধ্যেও স্থান দিতে পারত না, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার সে অসম্ভবকেও সম্ভবে রূপ দিয়েছে। বাংলাদেশে নগরে-বন্দরে, গ্রামীণ জনপদে সবখানেই তা দৃশ্যমান। কোনো কোনো উন্নয়ন চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। কোনো কোনো উন্নয়ন বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। কৃষক-শ্রমিক, সকল নিম্নবর্গের মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। ধনী হয়তো অনেকেই আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে দেশের মানুষ একেবারে না খেয়ে, না পরে আছে, এমন কথা এখন একেবারেই শোনা যায় না বললেই হয়। নারীসমাজের, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ ছেলেমেয়ে এখন সবাই শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে। বৃত্তি, উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বেকার ভাতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে কিছুটা হলেও বর্তমান সরকারের আমলে স্বস্তি এসেছে।

যদিও এখনো কিছু মৌলিক চাহিদার অপূর্ণতার অভিযোগ আছে মানুষের। সামাজিক জীবনে অনেক অসংগতি, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস আছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যেকে তাদের একটি সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। কিন্তু অতৃপ্তি বাংলাদেশের মানুষের জীবনে মাঝেমধ্যেই কাঁটার মতোই বিঁধে এই নির্বাচন নিয়ে। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্ন আছে। তাই এই নির্বাচন নিয়ে দলে দলে বিরোধ অনেক সময়ই মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। রক্তপাত এবং জীবনহানিও ঘটে। সাধারণ মানুষ পদে পদে প্রতিকারহীনভাবে হয়রানি ও দলনের শিকার হয়। কিন্তু স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরেও নির্বাচনের প্রশ্নটি নিষ্পত্তি হলো না।

নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে কী হয়, কী হয়। ভাঙচুর, আগুন, হানাহানি, অস্থিরতায় দেশের অবস্থা টালমাটাল হয়ে ওঠে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা ২০২৩ এর ডিসেম্বর মাসের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই নির্বাচন ঘিরে গরম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দলের কর্মকাণ্ডে যেমন তার প্রকাশ ঘটছে, পত্রপত্রিকার খবরেও তার আঁচ অনুভব করা যাচ্ছে।

২ আগস্ট সংখ্যা ঠিকানাতেও নির্বাচনী উত্তাপ লক্ষ করা যায়। দ্বিতীয় লিড নিউজের শিরোনামেই প্রকাশ পায় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র। খবরটির শিরোনাম: ‘সহিংস রূপে রাজনীতি, জনমনে শঙ্কা’। খবরের ভেতরে না ঢুকলেও বেশ বুঝতে পারা যায়, খবরটিতে ভয়, আশঙ্কা ছাড়া সম্ভাবনার কিছু নেই। এসবের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়। সে হচ্ছে, রাজনীতি ক্রমাগতভাবে রাজনীতিবিদদের হাত ছাড়া হয়ে ব্যবসায়ী, আমলাদের হাতে চলে যাচ্ছে। এর ফলে রাজনীতি আরও সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিকদের দূতিয়ালি যেভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, তাতে দেশের ভাবমূর্তি মøান হচ্ছে। নিজেদের মারামারির সালিসি যখন বিদেশিদের হাতে চলে যায়, তার পরিণতি খুব ভালো হয় না। নিজেদের বিরোধ নিজেরা মিটিয়ে ফেলতে না পারলে বিদেশিরা কতটা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে পারবে, তা নিয়ে অবশ্যই সংশয় থাকবে। দেশের সরকারে আস্থা নেই, দেশের নির্বাচন কমিশনে আস্থা নেই, আমরা বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে মাথা কুটছি আমাদের ঘরের সমস্যা মিটিয়ে দিতে। ৫২ বছরে যদি আমরা নিজেরা একে অপরকে আস্থায় নিতে না পারি, তাহলে অনেকেই মনে করেন, আমাদের এই সংকট, এই আত্মহনন থেকে আমরা কোনো দিন বের হয়ে আসতে পারব না।

রাজনীতির লক্ষ্য যদি হয় দেশকে, সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়া, তাহলে এই হানাহানি থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। নিজেদের ওপর আস্থা রেখে, হানাহানি থেকে বের হয়ে নিজেরাই যেন গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজে পাই। ক্ষমতা নয়, জনসেবা-দেশসেবাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হোক। জনগণ সেই দিনটির প্রতীক্ষায়।

কমেন্ট বক্স