বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু লেখা বেশ ঝুঁকির বলে মনে হয় আমার কাছে। প্রতি মুহূর্তেই বাংলাদেশে রাজনীতির বাঁক বদল হচ্ছে। সকালে এক রং তো বিকেলে আরেক রং। বাংলাদেশে মনে হচ্ছে চারটি শক্তি ক্রিয়াশীল। উপদেষ্টামণ্ডলী, সদ্য প্রসূত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলো। এই চতুঃশক্তির নাগরদোলায় নাগরিক সমাজ দুলতে দুলতে এখন মাথা খারাপের অবস্থা। এদের প্রত্যেকের পেছনে আবার রয়েছে একটা একটা বাতাস দেওয়া পার্টি, জি হুজুরের দল। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ডুবিয়েছে, অনেকেই মনে করেন, এই জি হুজুররা। জি হুজুররা যেকোনো সহজ-সরল মানুষের কাপে পানি দিয়ে তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দিতে সক্ষম এবং বাস্তবে তার প্রমাণও পাওয়া যায়।
আর সমাজের মধ্যেই বাস করা মতলববাজরা সব আমলেই রাজনীতিকদের মস্তকে ডুবে কুটকুট করে কামড়াতে থাকে। এ এমন কামড় যে, যে কারও পা পিছলে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। অবশ্য চলতি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মতলববাজদের এখনো প্রকাশ্য আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঠে বিচরণশীল তাদের দেখা না গেলেও চতুঃশক্তির নিজেদের মধ্যে অস্থিরতা বা চাঞ্চল্য প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সবার নিজ নিজ কথার মধ্য দিয়ে অস্থিরতা বা উত্তেজনা প্রকাশ পেলেও তার বাস্তব রূপায়ণের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের হেলমেটস্থলে সেনা হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে কথা বললেন, তা কি শুধু ওই ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্য করেই বলা। ‘ফুলস্টপ’। এখানে কোনো ‘ইফ’ বা ‘বাট’ নেই। এখানেই সেনাপ্রধান থেমে যাননি। তিনি যেন কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই বললেন, ‘আজকে আমি একটু পরিষ্কার করেই বলতে চাই, সবার হয়তো ভালো লাগবে না কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার এটা যদি আপনারা গ্রহণ করেন, আপনারা লাভবান হবেন। কোনো ক্ষতি হবে না...। আমার অন্য কোনো আশঙ্কা নেই। আমার কোনো আকাক্সক্ষা নেই, আই হ্যাড এনাফ। আমার যথেষ্ট হয়েছে।’ তিনি চেয়েছেন, জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে সেনানিবাসে ফিরে যাবেন।
উর্দুতে হলেও বাংলাতে এই প্রবাদটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। প্রবাদটি হলো : ‘আক্কেলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়।’ যাদের বোধবুদ্ধি আছে, তারা ইশারাতেই অনেক কিছু বুঝে নেন। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী নেতারা অনেকে মিলে একটি রাজনৈতিক পার্টি গঠন করেছেন। সেদিন রাজারবাগে গণসমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, কমিটির প্রায় সবাই সেখানে গিয়ে দোয়া-মোনাজাত করেছেন। সমাবেশে পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা সারজিস আলম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি হওয়ার আগে কোনো নির্বাচনের কথা শুনতে চাই না।’ আবার অনেক দিন আগে থেকেই বিএনপির নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচন যাতে সময়মতো না হয়, সে জন্য দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে সারজিসের বক্তব্য এবং বিএনপির আশঙ্কা মিলে এক আর একে দুই হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বারবার বলে আসছেন, নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর, না হলে ২০২৬-এর মার্চের মধ্যে হয়ে যাবে। জনগণ কী বার্তা পাচ্ছে? ঠিকানার ২৬ ফেব্রুয়ারি লিড নিউজে বলা হচ্ছে : ‘ওয়াকারের লাল বার্তা, নাহিদের পদত্যাগ, জামায়াতের ম্যাজিক/সরকার অগ্নিপাকে বিএনপি বিপাকে।’ জনগণের অবস্থা : ‘এই দুনিয়া ঘুরে বনবন বনবন/ ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়। রং বদলায়।’