Thikana News
১২ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দল

নতুন রাজনৈতিক দল
বাংলাদেশের মাটি উর্বর। উদ্ভাবনী শক্তিও মানুষের মধ্যে অতুলনীয়। শুধু মাটির উর্বরাশক্তি নয়, মানুষের মেধা ও মননেও উর্বরাশক্তির সন্ধান মেলে। পৃথিবীতে খুব কম দেশের সন্ধান মিলবে, যেখানে এত কম জমিনে এত বিপুল জনগোষ্ঠী এমন স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করতে পারে। ১৮ কোটির মতো মানুষ। আর জমি মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মতো। যেখানে মানুষে মানুষকে খুবলে খাওয়ার কথা, সেখানে পুষ্টিসহকারে মানুষ দু’বেলা মোটামুটি খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। জীবনযাত্রা, লেখাপড়াসহ সেখানে অসচ্ছলতার ছাপ খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। এসবই মাটির উর্বরতা ক্ষমতা এবং মানুষের উচ্চ মেধাশক্তির ফল। অল্প জমিতে অধিক ফসল, অল্প মাটিতে অধিক ফলফলাদি, শাকসবজি, স্বল্প পানিতে বিপুল মৎস্য উৎপাদন, এত মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে কিছু রফতানি করার মতো সক্ষমতাও আমরা দেখাতে পারি। পাকিস্তান আমলে সাড়ে ৩ কোটি ৪ কোটি মানুষ ভালোমতো খেতে-পরতে, পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারত না। এখন ১৮ কোটি মানুষের সব চাহিদাই মোটামুটি মিটছে।
দেশের ভেতরে-বাইরে বলাবলি আছে, বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক দলাদলি না থাকত, ক্ষমতাবানরা যদি বিপুল মাত্রায় দুর্নীতিপরায়ণ না হয়ে কিছুটা নৈতিক ও মানবিক গুণে উন্নত হতো, তবে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেও উন্নতি-অগ্রগতির দিক থেকে ছাড়িয়ে যেত। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলাদলি অনেক ক্ষেত্রেই সংঘর্ষে রূপ নেয়। দেশে সব সময় রাজনৈতিক উত্তাপ বিরাজমান। ক্ষমতাসীনেরা এসব উত্তাপ সংঘর্ষ মিটিয়ে স্বস্তির সঙ্গে শাসনকাজ চালানোর সুযোগ খুব কম পায়। রাজনৈতিক নেতারা হয় খুন হন, না হলে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। বলা হয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে শিশু-কিশোররা ব্যতীত সবাই রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসান ঘটে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নেতৃত্ব গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার পর থেকে নতুন নতুন সংগঠন ভূমিষ্ঠ হতে থাকে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বেও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সর্বশেষ আত্মপ্রকাশ ঘটল ছাত্র-সমন্বয়কদের নেতৃত্বে নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। নাহিদ ইসলাম এ দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে কদিন আগেই উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার আগে তাদের একটি ছাত্রসংগঠনও ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে গঠিত হয়েছে। জন্মকালেই নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে দুজন আহত হয়েছে।
দল অনেকগুলো জন্ম নিলেও বেশির ভাগ দলের রাজনৈতিক কাজকর্ম এখনো শুরু হয়নি। ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জন্ম নেওয়ার আগেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্যে  তারা দেশব্যাপী একটা পরিচিতি পেয়ে গেছে। যারা একসময় ‘দেশে এত রাজনৈতিক দল কেন’ বলে সমালোচনার আঙুল তুলতেন, এদের অনেকে এসব দলে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। সুতরাং, রাজনীতি উৎপাদনেও বাংলার মাটি কতটা উর্বর, তার দৃষ্টান্ত এত এত রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ।
দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে অনেক দলেরই অবদান রয়েছে। কিন্তু জনতার প্রকৃত উন্নয়ন ও মুক্তি এখনো আসেনি। আসলে এর কারণও স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধু যে ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলেÑএই মুক্তি মানুষের মেলেনি। বাজার পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা, জনজীবনে স্বস্তির সন্ধান আজও মানুষ পায়নি। দেশের অনেকেই রাজনীতিবিদ হতে যতটা আগ্রহী ও উৎসাহী, জনগণের উন্নয়নে সেবা দিতে ততটা আগ্রহী হতে চান না। আগামী দিনের রাজনীতি জনগণের সেবায় উৎসর্গ হবেÑএটাই আমাদের প্রার্থনা।

কমেন্ট বক্স