Thikana News
১২ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

ছাত্রদের দল ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং লালু-ভুলু সমাচার

চব্বিশে প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এর পরও যারা একে গণ-অভ্যুত্থান বলেন, তারা ইচ্ছে করেই হয়তো চব্বিশের বিপ্লবকে খাটো করার চেষ্টা করেন
ছাত্রদের দল ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং লালু-ভুলু সমাচার
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান একটা প্রশ্ন করেছিলেন ৫৩ বছরের রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়ে। তিনি বলেছিলেন, সংস্কার রাজনীতিবিদদেরই করার কথা। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ৫৩ বছরে তারা পারেননি কেন, কেন আমাদের দায়িত্ব নিতে হলো? এই প্রশ্নের উত্তর কোনো রাজনীতিবিদ দিয়েছেন কি না, তা আমার জানা নেই, চোখে পড়েনি। এর আসলে উত্তর হয় না। উত্তর দিতে গেলে থুতু নিজের কপালেই এসে পড়ে।
সেকেন্ড রিপাবলিকের আওয়াজ মূলত রিজওয়ানা হাসানের প্রশ্ন থেকেই ওঠে। সেকেন্ড রিপাবলিক হলো ফ্যাসিজমের পতনের পর, যাকে বলা হয় দমনমূলক শাসনব্যবস্থা, তার অবসানে গড়ে ওঠা নতুন রাষ্ট্র। ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রই হলো সেকেন্ড রিপাবলিক। আমাদের ফার্স্ট রিপাবলিক ৫৩ বছরে একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা, একটি ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিতের বন্দোবস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যে ব্যর্থতাকে ক্যাশ করে গড়ে উঠেছিল ফ্যাসিজম। একটি ফ্যাসিস্ট রেজিম। তার পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের চিন্তাটা রয়ে গেছে এখনো কিছু ব্যক্তির মধ্যে। অথচ তারা বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরোধিতা করেছেন। তাদের সেই বিরোধিতা ছিল স্রেফ ক্ষমতার পালাবদলের। চেয়ার প্রতিস্থাপনের। বর্তমানের দৃশ্যচিত্রে আমরা তা-ই দেখতে পাচ্ছি।
অথচ জুলাই বিপ্লব, যাকে কেউ কেউ গণ-অভ্যুত্থান নামে ছোট করতে চান। সেই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তিতে। আমরা জানি, সেই বিপ্লবে কারা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনেই সেই নেতৃত্বের উত্থান আমরা দেখেছি। সুতরাং কেউ যদি দেশের মানুষকে নেতৃত্বের প্রশ্নে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন, মূলত সেই হবেন আসল বোকা। সময় তাদের সেই বোকামোকে ক্রমশই উদ্ভাসিত করবে। বড় বড় বাতেলা যারা মারেন, তারা এখনই যদি তাদের বোকামোকে উপলব্ধি করতে না পারেন, তবে তাদের চড়া মাশুল দিতে হতে পারে।
আমি অনেকবার বলেছি, আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পার্থক্য নিয়ে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি, আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ভেঙে পড়েনি। রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। যেমন চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে ঘটেছে। প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। একটি রাজনৈতিক দল, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা পুরোটাই নাই হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ পুরোই রাজনৈতিক বিপর্যয়। এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। প্রশাসনও বিপর্যস্ত হয়েছিল, কিন্তু ভেঙে পড়েনি। অথচ চব্বিশে প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এর পরও যারা একে গণ-অভ্যুত্থান বলেন, তারা ইচ্ছে করেই হয়তো চব্বিশের বিপ্লবকে খাটো করার চেষ্টা করেন।
কেন এই চেষ্টা। এর কারণ হলো তাদের ব্যর্থতা। তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হননি। বিপ্লব তো দূর-কা-বাত। কিন্তু চব্বিশে জুলাই বিপ্লব ঘটে গেছে। যারা ঘটিয়েছেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। যারা কোনো রাজনৈতিক অভিজাততন্ত্রের নন। সাধারণ ছাত্র-জনতা মানুষের কাক্সিক্ষত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। এই ছাত্র-জনতার সাধারণ শ্রেণিটাকে এ দেশের কথিত এলিট পলিটিশিয়ানরা মেনে নিতে পারেননি। সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের সম্মুখে একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সাহস সোকল্ড এলিট পলিটিশিয়ানদের নেই। তাই তারা এই বিপ্লবকে খাটো করতে এবং বিপ্লবীদের প্রশ্নবিদ্ধ করার মিশনে নেমেছেন। এর সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশি শক্তির যোগসাজশ। ভারতীয় রিপাবলিক টিভির জোকার ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ যেমন বলেন, ইউনূস সরকারকে না হটালে ভারতের কপালে দুর্ভোগ রয়েছে। শুধু ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী নয়, এ দেশেরও অনেকেরই দুর্ভোগ পোহানোর শঙ্কা রয়েছে এবং তা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হলে।
দেশিদের কী দুর্ভোগ, প্রশ্ন করতে পারেন। হ্যাঁ, দুর্ভোগ হলো লালু-ভুলু মার্কা রাজনীতি এখন আর চলবে না। স্মার্টফোন চালাতে পারেন না, ল্যাপটপ খুলে দেখেননি কখনো, এমন নেতাদের রাজনীতি নতুন বন্দোবস্তের কাছে সম্পূর্ণ বাতিলযোগ্য, পরিত্যাজ্য। সুতরাং এসব নেতার গাত্রদাহ নতুন বন্দোবস্তের প্রতি, সেকেন্ড রিপাবলিকের চিন্তার প্রতি। তারা দেড় দশক আগের রাজনীতিতে টিউনড। সারা বিশ্ব এগিয়ে গেছে এবং এআই প্রজন্ম এখন রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ন্ত্রণ করছে, এমন বিশ্বে তারা অনেকটাই অযোগ্য। এই বোধ থেকেই তাদের গাত্রদাহ। এখনকার প্রজন্ম মুহূর্তেই আপডেট থাকে বিশ্বের সঙ্গে। তারা বোঝে জিও-পলিটিক্সের বাক-পরিক্রমা। তারা জানে ইলন মাস্কের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা। তারা জানে মাইক্রোসফট কেন অপরিহার্য। নতুন প্রজন্ম জানে, একটা সফটওয়্যার একটা মিসাইলের চেয়েও অনেক বেশি দরকারি এবং শক্তিশালী। সুতরাং এই প্রজন্মকে মোকাবিলা করা লালু-ভুলু রাজনীতিকদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ছাত্রদের দল আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা ভালো করবে কি মন্দ করবে, সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ হিসাব-নিকাশ করার সময় এখনো আসেনি। আমরা হয়তো আগের চিন্তায় বলতে পারি, প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর সামনে তাদের রাজনীতি এবং নির্বাচনে খুব ভালো করা সম্ভব নয়। সত্যিই কি সম্ভব নয়? প্রশ্নটা রাখলাম। তবে একটা কথা নিশ্চিত বলতে পারি, ছাত্রদের দলের সামনে দাঁড়াতে হলে প্রতিষ্ঠিত দলগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। চৌকস আর মেধাবীদের বাধ্য হয়েই দলের শীর্ষ পদে জায়গা দিতে হবে। না হলে লালু-ভুলু মার্কা রাজনীতিকেরা নতুন বন্দোবস্তের সামনে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ যা-ই হোক না কেন, দেশের রাজনৈতিক চিন্তা ও চর্চার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ভালো হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে তারাই আসবেন, যারা স্মার্টফোন আর ল্যাপটপ চালাতে পারেন। যারা সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। যারা নিমেষেই বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন প্রয়োজনীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তৈরি করতে পারেন সেই অনুযায়ী কর্মপন্থা, নিজস্ব বয়ান। লালু-ভুলুদের 
দিয়ে যা সম্ভব নয়।
 

কমেন্ট বক্স