Thikana News
১২ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

ঈদ-রোজা নিয়েও কথা বলতে হবে তারেক রহমানকে?

ঈদ-রোজা নিয়েও কথা বলতে হবে তারেক রহমানকে?
৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রায় প্রতিটি ভাষণ-বক্তব্যই গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। তুমুল বিরোধী ও ঘোরতোর সমালোচকরাও তার কোনো কোনো বক্তব্যে টাসকি খাওয়ার মতো থ বনে যাচ্ছেন! তার ম্যাচিউরিটিতে তাজ্জব হচ্ছেন। লাজশরমের মাথা খেয়ে প্রশংসাও করতে পারছেন না। যদি না দলে লাল মার্ক খেয়ে বসেন? 
এমন একটা সম্ভাবনার পরিক্রমায় গেলো রবিবার (২ মার্চ) তিনি একইদিনে রোজা শুরু ও ঈদ নিয়ে ভাবতে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  সেদিন রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে ছিল আলেম, উলামা ও মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপির ইফতার মাহফিল। সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে আমার মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সারাবিশ্বে একই দিনে খ্রিস্টান সম্প্রদায় একসঙ্গে তাদের বড়দিন উদযাপন করে। সেই আলোকে সারাবিশ্বের মুসলিমদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারে না?’
বিষয়টি নিয়ে দেশের আলেম-ওলামাদের চিন্তা করার অনুরোধ তারেক রহমানের। বিষয়টি একদিকে ধর্মীয়, অত্যন্ত সুক্ষ্ম, আরেকদিকে যারপরনাই স্পর্শকাতর। এমন চিন্তায় চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন ‘পুর’ ও ‘গঞ্জে’ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে একদিনে রোজা শুরু ও ঈদ পালন হয়। এ নিয়ে মারামারি-সংঘাত পর্যন্ত হয়ে আসছে। এমন একটি উড়ন্ত বিষয়েও তারেক রহমানকে কথা বলতে হবে? এ নিয়ে যে বিএনপির সহযোগী কয়েকটি, বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলোর অভ্যন্তরে কিসব কথাবার্তা হচ্ছে, সেই তথ্য কি তারেক রহমান জেনেছেন? বা দলের কেউ তাকে জানিয়েছেন? 
ধর্মীয় জ্ঞান পর্যাপ্ত না থাকলেও দুর্বোধ্য নয় যে, টাইম জোনের বিভিন্নতার কারণে নামাজ, রোজা, ইফতার সব দেশে একসাথে করা যায় না, ঈদের ব্যাপারটাও তাই। একই সময়ে এক দেশে রাত, আরেক দেশে দিন। ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন বড়দিন উদযাপন করা হয়। সেটা চন্দ্রমাস গণনা করে ঘটে না। খ্রীষ্টিয় ক্যালেন্ডারে দিন পরিবর্তন হয় রাত ১২ টা ১ সেকেন্ডে। আরবী মাস গণনা হয় চাঁদ অনুসরণ করে, দিন বা তারিখ বদলায় সন্ধ্যায়। চন্দ্রমাস গণনায় সারাবিশ্বে একই দিনে ইসলামিক ইবাদত, উৎসব, আয়োজন পালন সম্ভব না। ছোট্ট এ বাংলাদেশেও স্থান ভেদে একই সময় সব জেলায় একসঙ্গে আসে না। কয়েক মিনিটের ব্যবধান থাকে, তাই ভিন্ন ভিন্ন ব্যবধানে নামাজ, সেহেরী, ইফতার করতে হয়। অন্য দেশ, মহাদেশ, অঞ্চলের সঙ্গে সময়ের ব্যবধান দূরত্বের কারণে আরো বাড়ে। হাদিসে (বুখারী, সাউম অধ্যায়, নং ১৯০৯, মুসলিম, সিয়াম অধ্যায়) রয়েছে, ‘তোমরা  চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং তা দেখে রোজা ছাড়ো, যদি মেঘাচ্ছন্নের কারণে না দেখতে পাও, তাহলে শা’বান মাস ৩০ পূরণ করে নাও’। এরপরও আর বোঝার কিছু বাকি থাকে? 
এছাড়া রোজা-রমজান কেবল একটা ধর্মাচার নয়, মুসলিম জাতির একটা সাংস্কৃতিক বিষয়ও। সংস্কৃতি না থাকলে ধর্মীয় চর্চা দুর্বল হয়ে যায়। স্যাডিজম ভর করার রাস্তা হয়। চলার পথে পদে পদে এটা ঠিক নয়, ওটাই ঠিক- এ ধরণের মনমগজ স্যাডিস্ট তৈরি করে। সাবলীলতা ইসলাম ধর্মের আরেক গুণ। সেই যুক্তরাষ্ট্রেও মুসলিম রেস্টুরেন্টগুলো পরিণত হয় বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মিলনমেলায়। ইফতারের পর একেবারে ডিনার করে মানুষ ফেরৎ যায় বাসায়। মালয়েশিয়ায়ও তেমন। খ্রিষ্টান, ভারতীয়রাও‌ ইফতারের সময় মালয় মুসলমানদের সাথে যোগ দেয়। শপিং সেন্টারে সব খোলা থাকে। মুসলিম গ্রাহকসহ মালয়রা একত্রে ইফতারের আহ্বান জানায়। নাস্তিকদের দেশ চীনে রোজার সময় সব মুসলিম রেস্টুরেন্টে ইফতারের সময় মেলা বসে যায়। যারা খেতে আসেন, সবাইকে একটা এক্সট্রা ডিশ উপহার দেন মালিকপক্ষ। ব্রিটেনসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে রমজানে মুসলমানদের জন্য ডিসকাউন্ট দেয়া হয় গ্রোসারিতে। সেই মাত্রায় উদার হতে না পারলেও ধর্মীয় স্যাটেল বিষয় নিয়ে বেশি না যাওয়াই উত্তম নয় কি?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।   
 

কমেন্ট বক্স