নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে কিছু অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি, যা আপনাদেরকে আরও ভালো হতে অনুপ্রাণিত করবে। নিয়মানুবর্তিতা আমাদের জীবনের মূল স্তম্ভ, যা আমাদের পথ চলতে সাহায্য করে। যখন আমরা নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলি, তখন জীবন সহজ হয়ে ওঠে এবং আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো মানে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।
নিয়মানুবর্তিতা আমাদের চরিত্রকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। যতটা কঠিন মনে হোক না কেন, নিয়মানুবর্তিতা ততটাই শক্তিশালী। এটি আমাদের সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে। নিয়ম মেনে চললে প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে সফলতার দিকে একটি পদক্ষেপ। যে ছেড়ে যায় তার নিয়মানুবর্তিতার দুঃখটুকু রয়ে যায়। নিয়মানুবর্তিতা হলো জীবনের সঠিক পথ অনুসরণের শক্তি, যা আমাদের উদ্দেশ্য এবং স্বপ্নপূরণের সহায়ক। যে মানুষ নিয়মিত কাজের মাঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে কখনোই হারিয়ে যায় না।
একটি দৃঢ় নিয়মে জীবন গড়ে তুললে প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে একটি নতুন সুযোগ। নিজেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখলে পৃথিবীও তোমাকে সম্মান দিতে বাধ্য। নিয়মানুবর্তিতা কেবল কাজের দিকে মনোযোগ দেয় না, তা আমাদের সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে। প্রকৃত শক্তি হলো সেই ক্ষমতা, যা নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম। নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে থাকে, যখন আমরা নিজেদের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকি। নিয়মানুবর্তিতা একধরনের অমূল্য গুণ। যার আছে সে বড্ড চুপচাপ, যার নেই সেই অন্যকে তিরস্কার করে।
এই পৃথিবীর সমস্ত নিয়মানুবর্তিতা অনেকাংশে মানবজাতির ওপর নির্ভর করে। পশুপাখির জীবন বরাবরই শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। যে ছাত্র নিয়মানুবর্তিতার শিষ্য, সে সহজে নিজের সময়কে নষ্ট করে না বরং আরও বেশি উপযোগী করে গড়ে তোলে। আমি খুব নিয়ম করে একদিন কাউকে নিজের হৃদয়ে স্থান দেব। আমার এই নিয়মানুবর্তিতার শেকলকে ভেঙে ফেলে সে আমাকে আরেক রূপে গ্রহণ করবে। ধরুন, আপনি নয়টা থেকে পাঁচটা অফিস করেন। এই যে আপনার অনুপস্থিতি, এটাও কিন্তু একধরনের সুখী জীবনের জন্য বিনিয়োগ এবং আপনার নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস এ ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়। কত শত দুর্বল মানুষও নিয়মানুবর্তিতার জোরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার এই আবদ্ধ জীবনটাও একধরনের যুদ্ধক্ষেত্র।
নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণকারী ব্যক্তি বরাবরই সবার কাছ থেকে একটু আলাদাই হয়। কারণ তার এই নিয়মমাফিক রুটিন তাকে সবার কাছ থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। এই যে রোজ একবেলা নিয়ম করে তোমায় দেখি, আমার এই নিয়মানুবর্তিতার মধ্যেও একটুকরো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। সুপরিকল্পিত নিয়মানুবর্তিতা পৃথিবীর প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ নিয়মহীন কাজ কখনোই সফলতার মুখ দেখতে পায় না। যে শৃঙ্খলা আর নিয়মানুবর্তিতায় নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছি, সেখানে ভালোবাসার স্থান যে বড্ড কম। যদি লাইফে সত্যিই কিছু করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মানুবর্তিতার ভৃত্য হতে হবে।
এই যে রোজ একটু করে কষ্ট পেতে পেতে এখন যেন নেশার মতো হয়ে গেছে। কোনোভাবেই এই কষ্টের মায়াটুকু ছাড়তে পারি না। নিয়মানুবর্তিতার আদর্শে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সেখানে প্রতিটি মুহূর্তের মূল্যায়ন করা হয়। সুকঠিন নিয়মানুবর্তিতার আদলে গড়ে ওঠা আমার এই জীবন যেন বড্ড সেকেলে। তবু যেন এ জীবন সফলতায় ছোঁয়া। যদি নিয়মানুবর্তিতাকে আঁকড়ে ধরতে পারেন, তাহলে ধরে নিন আপনি আপনার সফলতার খুব দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। কত নিয়মানুবর্তিতার ধারায় তোমাকে খুঁজে চলেছি। আমার এই ছকে বাঁধা জীবনটাতে তোমার উপস্থিতিই হয়ে উঠবে কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনা।
যার ভেতরে নিয়মানুবর্তিতা নেই, সে আসলে কারও সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না। অথচ তার মেনে নেওয়া উচিত ছিল যে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনও আনন্দের হতে পারে। দুই মিনিট সময় খরচ করলে লাভ ব্যতীত ক্ষতি হবে না। মনে হয়, যার কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি, সাফল্য তার কাছেই এসে ধরা দেয়। কারণ, যে নদী যত গভীর, তার বয়ে যাওয়ার শব্দ তত কম। একজন জ্ঞানী জানেন যে তিনি কী জানেন না। আর একজন মূর্খ নিজেকে সব সময় সবজান্তা মনে করেন। আজ পর্যন্ত কোনো ভিক্ষুক দাতা বা স্বাবলম্বী হতে পারেনি। যে হাত নিতে অভ্যস্ত, সে হাত কখনো দিতে পারে না।
আমরা খ্যাতিমান হতে চাই। কিন্তু খ্যাতির জন্য নীরব সাধনা ও প্রয়োজনীয় কষ্ট স্বীকার করি না। ফলে সাধনাও হয় না, খ্যাতির শীর্ষেও পৌঁছাতে পারি না। ব্যক্তিগত খেয়াল বা আবেগ আর জীবনের লক্ষ্যকে এক করে ফেলবেন না। লক্ষ্যকে যখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন, তখন তা আপনাকে আবেগের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। সুযোগের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি গ্রহণে সাহসী হোন। যখনই আপনি অনুভব করবেন, আপনার শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তখনই আপনি সুস্বাস্থ্যের সুপ্রভাতে উপনীত হবেন। নিরাময়ের জন্য আপনার প্রথম প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। ‘সমস্যা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সম্ভাবনা’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করুন।
শৃঙ্খলা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। লোহা ও চুম্বকের রাসায়নিক উপাদান এক হলেও সুশৃঙ্খল আণবিক বিন্যাসের কারণে চুম্বকের রয়েছে আকর্ষণী শক্তি, যা লোহার নেই। ব্যর্থরা অবচেতনভাবে ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করে। সচেতনভাবে সাফল্যের সঙ্গে একাত্ম হলে সাফল্যই আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চার গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, সহজে পেটের কোনো পীড়া হবে না। সহপাঠী বা প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আর বন্ধুত্ব এক নয়। চেতনা ও আদর্শের মিল রয়েছে, এমন কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব হতে পারে। কর্মস্থলে প্রতিযোগীকে সব সময় শ্রদ্ধা করুন। শক্তিশালী প্রতিযোগী আপনার মেধার সর্বোত্তম বিকাশে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। শোষিতরা শোষিতের হাতেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়।
যে কখনো সম্মান পায়নি, সে জানে না অন্যকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আপনার সময় নেইÑএ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সময় কোন কাজে ব্যয় করবেন, তা নির্ধারণের অধিকার আপনার রয়েছে। আত্মকেন্দ্রিকতা ও ‘আমারটা আগে’ এ দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে এক ক্লান্তিকর বোঝায় পরিণত করে। আর বিনয়, সহানুভূতি ও উপকার যত ক্ষুদ্রই হোক, জীবনকে প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল করে তোলে। নিয়ত বা অভিপ্রায় হচ্ছে মনের লাগাম। নিয়ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, দেহ-মনে নতুন বাস্তবতার জন্ম দেয়।
মুক্তবিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। সুন্দর প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে দিন শুরু করুন। ঘুম ভাঙতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/থ্যাঙ্কস গড বা প্রভু ধন্যবাদ। দিনের সমাপ্তিও ঘটবে এভাবে। যা করতে পারবেন না বা করবেন না, সে ব্যাপারে বিনয়ের সঙ্গে প্রথমেই ‘না’ বলুন। কাউকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ পেলে আন্তরিকভাবে জানান। স্থান-কাল-পাত্র বুঝে হাসিমুখে কথা বলুন। হৃদয়ের আন্তরিকতা মুখের হাসিতে শতগুণে প্রস্ফুটিত হয়।
প্রস্তুতি ছাড়া যাত্রাপথের কষ্টকে বাড়িয়ে দেয়। স্বপ্ন ও বিশ্বাস পথচলার সে প্রস্তুতিরই সূচনা করে। প্রতিটি কাজ করার আগে অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, কাজটি আপনি কেন করবেন। নিজের কাছে নিজ সততা বজায় রাখুন। প্রতিটি কাজে আপনার পক্ষে যা করা সম্ভব, আন্তরিকতার সঙ্গে করুন। বুদ্ধিমান সব সময় কথা বা কাজের আগে চিন্তা করে। আর বোকারা চিন্তা করে (পস্তায়) কাজের পরে। একজন মানুষকে তার নাম ধরে সম্বোধন করুন। আলাপ-আলোচনায় একাধিকবার তার নাম উল্লেখ করুন। কাজ শেষ না হতে পারিশ্রমিক শোধ করবেন না।
যেকোনো সংকটকে বিপদ না ভেবে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। দেহ হচ্ছে সেরা ওষুধ কারখানা। যখন যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু ওষুধই সে তৈরি করে। আর এ ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত। দায়িত্ব নিতে ভয় পাবেন না। তাহলেই নতুন কিছু শিখতে পারবেন। কাজে উদ্যোগী না হলে প্রতিটি কাজই অসম্ভব মনে হয়। ‘আমি এ বিষয়ে জানি না’Ñএ কথাটি বলতে কখনো ভয় পাবেন না। ‘আমি দুঃখিত’ কথাটি সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করুন। দীর্ঘসূত্রতা ও আলস্যকে প্রশ্রয় দেবেন না। যখন যা করা প্রয়োজন, তখনই তা করুন।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হোন। প্রকৃতি মন, দেহ ও আত্মার মাঝে সব সময় ভারসাম্য এনে দেয়। নীরব মুহূর্তে প্রতিদিন অন্তত একবার করে বলুন, ‘আমি সাহসী’। একটি কাজ না করার পেছনে হাজারটি অজুহাত দেখানো যায়, কিন্তু কাজটি করার জন্য একটি কারণই যথেষ্ট। জীবনে ব্যর্থতার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব। সমস্যায় পড়লেই সমাধানের জন্য উৎকণ্ঠিত হবেন না। সমস্যাকে তার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই নতুন সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। যেকোনো ঘটনাকে সহজভাবে গ্রহণ করাই হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রশান্ত মনই হচ্ছে শক্তির আসল ফল্গুধারা। মন প্রশান্ত হলে অন্তরের শক্তি জাগ্রত হয় এবং আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করে। প্রো-অ্যাকটিভ হোন। প্রো-অ্যাকটিভ মানুষের প্রতি অন্যরা আকৃষ্ট হয়। রি-অ্যাকটিভ ব্যক্তি সব সময়ই মানুষের বিতৃষ্ণার কারণ হয়। রাগান্বিত অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে। যার হারানোর কিছু নেই, তার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সাহসী ও ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহী হোন। সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। পেছনের দিকে তাকালে দেখবেন, কাজ করে অনুতপ্ত হওয়ার চেয়ে যে সুযোগ হারিয়েছেন, তার অনুতপ্ততাই বেশি।
কান পেতে থাকুন। সুযোগ অনেক সময়ই দরজায় খুব আস্তে করে টোকা দেয়। সেই টোকা সবাই শুনতে পায় না। আবার অনেকে শুনতে পেয়েও অবহেলা করে। জেনে রাখবেন, জীবনের সকল সাফল্য পায়ের তলে মাটির নিচে থাকে। পা সরিয়ে মাটি খুঁড়ে বের করে আনতে হয়। জগতের কোনো অর্জন পরিশ্রম ও মেধা ব্যয় ছাড়া হয়নি। সবার সঙ্গে হেসে কথা বলুন। এতে আপনি শুধু নিজেই আনন্দিত হবেন না, অন্যরাও খুশি হবে। দিনে কমপক্ষে ২০ বার বলুন, ‘আমি বেশ ভালো আছি।’ কারও আশাকে নষ্ট করবেন না। হয়তো এই আশাই তার শেষ সম্বল। রাগ, অভিমান ও অভিযোগ বোকা ও দুর্বলরা করে। বুদ্ধিমানরা পরিস্থিতি পরিবর্তনে বুদ্ধি ও কৌশল অবলম্বন করে। নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। আপনার মন ভালো তো সব ভালো। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না। একটু থামুন, লম্বা দম নিন, ভাবুন, মনকে জিজ্ঞেস করুন, এ মুহূর্তে আমার কী করণীয়? দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে একটি সঠিক ও সুন্দর পরিকল্পনা বা সমাধান বের হয়ে আসছে। প্রতিটি কাজ শুরু হয় শূন্য থেকে। ধাপে ধাপে তা পূর্ণতা পায়। দুঃখবিলাস বা কোনো কিছুই ভালো না লাগা আলস্যের একটি রূপ। যারা কিছু করে না, তাদের আসলে কিছুই ভালো লাগে না। আর যারা ব্যস্ত, তাদের কিছু ভালো না লাগার কোনো সুযোগ থাকে না।