Thikana News
১২ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে দুর্ভোগের নাম সিন্ডিকেট

বাংলাদেশে দুর্ভোগের নাম সিন্ডিকেট
বাংলাদেশের মানুষ অহরহ শুনে অভ্যস্ত মাফিয়া সিন্ডিকেট বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কথা। বাজারের কাছে সাধারণ মানুষ যারা সব সময় পরাজিত হচ্ছে, প্রতিকার চেয়ে কেউ প্রতিকার পায় না। বরং আরও নিগ্রহের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। ঈদ, রোজ, নানা পার্বণ এলেই সরকারি মহল থেকে একটা হুংকার শোনা যায় ব্যতিক্রমহীনভাবে। চাহিদা পূরণের মতো বিপুল মজুদ আছে সরকারি গুদামে। কোনো উৎসব আয়োজনকে সামনে রেখে কেউ দাম বৃদ্ধির চক্রান্ত করলে আইনের আওতায় এনে তার জন্য কঠোর শাস্তি। যত হুংকার তত বৃদ্ধি। আরও নানা ব্যবস্থা আছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ানোর। কথা নেই, বার্তা নেই সাধারণ মানুষকে যেসব পণ্য অধিক ব্যবহার করতে হয় তার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি, কর বৃদ্ধিÑআসলে নানা উপলক্ষেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়।
সয়াবিন তেলের সিন্ডিকেট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২৬ ফেব্রুয়ারি সংখ্যার ঠিকানার তৃতীয় পৃষ্ঠায়। সম্ভবত সয়াবিন তেলের সংকট নিয়ে খুব স্বচ্ছ একটি প্রতিবেদন। শিরোনাম : ‘মাত্র ছয়জনের কাছে জিম্মি দেশের ১৬ কোটি মানুষ’। দেশে বছর ধরে সয়াবিন তেলের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এক রমজান মাসেই চাহিদা থাকে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন। আমদানি করা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাধ্যমে সংগৃহীত সয়াবিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ছয়টি কোম্পানি। এসব কোম্পানির ছয় কর্ণধারের কাছে জিম্মি দেশের সব ভোক্তা। দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিয়মিত সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকেন। ছয়টি কোম্পানি মিলেই সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করে। বলা যায়, মূল্য নির্ধারণ করা নয়, আসলে তারা মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশে এ রকম সিন্ডিকেট শুধু সয়াবিন তেলেই নয়, বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কোনো পণ্য নেই, যা সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই মৌসুম আর অমৌসুম নেই, আজ তেলের দাম বাড়ছে তো কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে ডালের দাম। এভাবে আলু, পেঁয়াজ, পটল, ডিম, চালের দাম বাড়তে থাকে। বাড়ার সময় কর্তৃপক্ষের তেমন উচ্চবাচ্চ থাকে না। কিন্তু ৫ টাকা বেড়ে যদি ৪ টাকায় কমে আসে, তখন বাজার নিয়ন্ত্রক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তোলপাড় তুলে ফেলে।
অতীতে দেখা গেছে, মূল্যবৃদ্ধির মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত ছিল বাজেট পেশকালে এবং রোজা, ঈদ ও পূজাপার্বণে। রোজার সময় দাম বাড়ত সবচেয়ে বেশি। সব সময়ই কোনো কিছুর দাম বাড়লে কিছুদিন পর দু-এক টাকা কমে যায়। তবে পরবর্তী আরেক দফা দাম বৃদ্ধি পর্যন্ত সেই দামই বহাল থাকে। মানুষ মূল্যবৃদ্ধির এই চক্রে সহনশীল হয়ে ওঠে। মানুষ বাজারের আগুন সইতে সইতে অগ্নিসহনীয় হয়ে ওঠে। মূল্যবৃদ্ধি যখন শুরু হয়, আগুনের প্রথম সেই তাপ যেমন পোড়ায়-পোড়ে, মানুষ সে রকম আর মনে করে না। পকেট থেকে অর্থ ঠিকই যা বেরিয়ে যাওয়ার তা যায়।
বাংলাদেশে তিনটি ক্ষেত্রে একেবারে মরণ দশা। বাজার পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা এবং জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আর উন্নতি দেখা যায় এবং এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থা একই। নির্বাচন এলে সব দল বলে, ক্ষমতায় গেলে তারা প্রথমে পণ্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবে। সাধারণ মানুষের মন সাদা। তারা ভাবতেই পারে না, মানুষের ভোট নিয়ে তারা এমনভাবে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করবে বারবার। অথচ সেটাই হয়। মানুষকে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করা তাদের জন্য কিছুই না। মনে হবে ডাল-ভাত। নির্বিকার তারা, একই ওয়াদা ভঙ্গের কাজ করে চলছে বারবার।
বিশেষজ্ঞজনের মন্তব্য : এর কারণ আমাদের মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক কালচার অতি নিম্নমানের। এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নাগরিক সমাজের দুর্ভোগ কোনো দিনই কমবে না। সিন্ডিকেটের জালও ছিন্ন হবে না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের পুরোনো কালচার থেকে বের হয়ে এসে নতুন কালচারের সূচনা হবে। এই সিন্ডিকেট নামের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে।

কমেন্ট বক্স