২৫ ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বজুড়ে খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী সব মানুষ এদিন ধর্মীয় রীতি, আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনে মেতে ওঠেন। নিউইয়র্কে বসবাসরত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বে খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী যত মানুষ আছেন, সবাইকে শুভ বড়দিন বা হ্যাপি খ্রিষ্টমাস। এই শুভদিনটি বিশ্ববাসীর জন্য বয়ে আনুক শুভ বারতা। এদিন চার্চে চার্চে চলবে প্রার্থনা, কল্যাণ কামনা করা হবে মানবজাতির।
বড়দিনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো। সত্যের শিক্ষা যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে গিয়েই প্রভু যিশুখ্রিষ্ট শাসককুলের রক্তচক্ষুর সামনে পড়েন। সে সময়ের সমাজপতি ও তাদের পদলেহী নতজানু স্তাবকদের বিচারে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে উপরে দাঁড় করিয়ে হাত-পা বেঁধে শূল নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। সে সময়ের সমাজপতিরা যিশুখ্রিষ্টের মন্ত্র প্রচারে তাদের মিথ্যার দেয়াল ভেঙে পড়বে বলে নিজেদের অস্তিত্ব হারানোর ভয়ে এতটাই ভীত হয়ে পড়েন যে তাঁকে জেলে পুরে রাখতেও ভয় পান। তাই তো ক্রুশবিদ্ধ করে প্রাণহরণ করা হয়। সেই থেকে ক্রুশ হয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতার প্রতীক। সত্য শিক্ষার ব্রতী হয়ে যিশুখ্রিষ্টই সমাজপতিদের হাতে প্রাণ হারান। সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সে সময় সবাইকে সমাজপতিদের রোষানলে পড়ে প্রাণ হারাতে হয়। এমনকি আজকের সমাজ যখন বিশ্বসভ্যতার চরম শিখরে, তখনো সত্য গ্রহণ করতে পারেন না সমাজপতিরা। সত্যবাদীরা আজও মিথ্যাশ্রয়ী শাসকদের নিপীড়নের শিকার।
প্রভু যিশু ছিলেন হলি সন। তার মা ছিলেন হলি মাদার মেরি। যিশুখ্রিষ্টের অনুসারীরা সংখ্যায় আজও সর্বোচ্চ। সবাই তাঁর অনুসারী হলেও সবাই তাঁর আদর্শ ধারণ করে চলে বলে মনে হয় না। তাহলে পৃথিবীটা অন্য রকম হতো। বিশ্ব থেকে সব অত্যাচার, অন্যায়, যুদ্ধবিগ্রহ দূর হতো। আজও সুচল নির্বাসিত। যদিও চার্চে চার্চে যিশুর বাণী উচ্চারিত হয়। এখনো ত্যাগীরা লাঞ্ছিত। কোটি কোটি নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন। অন্যদিকে দেশে দেশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা। মানুষের প্রাণ নিয়ে খেলা করছে। বলা হয়, অন্যের ওপর প্রভুত্ব বজায় রাখতে, যুদ্ধবিগ্রহে মানুষ মারার জন্য অস্ত্র বানাতে, বড় বড় দেশ নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণ করতে যে অর্থ ব্যয় করে, সেই অর্থ দিয়ে বিশ্বের সব অভুক্ত, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষকে খাদ্য ও পুষ্টির জোগান দেওয়া যায়।
খ্রিষ্টমাস উপলক্ষে সান্তাক্লজ শিশুদের আনন্দ দিতে নানা উপহারসামগ্রী নিয়ে আসেন। সে জন্য বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নিজেরা যেমন নতুন সাজ পোশাকে ভূষিত হন, তেমনি প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে নানা জিনিসপত্র উপহার দেন। ঘরে ঘরে শোভা পায় আলোকসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস ট্রি আলোকসজ্জিত করে তোলা হয় নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ এই পবিত্র ট্রি দর্শনে ভিড় জমাবেন রকফেলার সেন্টারে।
আজ বিশ্ববাসী মানুষে মানুষে যে বিভেদ-বৈষম্য, আমাদের প্রার্থনা, তার অবসান ঘটুক। প্রভু যিশু সব মানুষের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য, যুদ্ধ-প্রাণহানির অবসান ঘটাতে মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধি দান করুন। বড়দিন সবার জন্য শুভ হোক।