Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

যস্মিন দেশে যদাচার

যস্মিন দেশে যদাচার



 
‘যস্মিন দেশে যদাচার’ একটি অত্যন্ত প্রাচীন প্রবচন। একসময় লেখালেখি, বলাবলিতে বহুল ব্যবহার হতে দেখা গেলেও ইদানীং আধুনিক বাংলায় এর ব্যবহার তেমন লক্ষ করা যায় না। যে দেশে যে রীতি বা আচার অর্থ বোঝাতেই ব্যবহার করা হতো ‘যস্মিন দেশে যদাচার’। এই আচার কি একটি দেশের সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? মনে হয় না।
আসলে সমাজে শ্রেণিভেদের কারণে একই দেশে একই আচারের ভেদাভেদ লক্ষ করা যায়। প্রাচীন সমাজে যখন আজকের যুগের আইন-আদালতের প্রচলন হয়নি, তখন এই ভেদাভেদ দেখা যায়নি। কিন্তু আধুনিক নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে আইন-আদালতের প্রয়োগ নিয়েও ভেদাভেদ দেখা যাচ্ছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলা যায়, আইনের হাত অনেক লম্বা। এখন প্রশ্নের উদ্রেক হয়, লম্বা হাত কতটা লম্বা। আইনের এই লম্বা হাত কি সবার মাথা স্পর্শ করতে পারে? বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, এই লম্বা হাত সবাইকে ছুঁতে পারে না। যারা উচ্চ শ্রেণির মানুষ, তারা আইনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
আরও একটি কথা আমরা আপ্তবাক্যের মতো ব্যবহার করতে শুনি। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অহরহ বলতে শোনা যায়, ‘আইনের চোখে সবাই সমান।’ আইনের চোখে কি আসলেই সবাই সমান? বাস্তবে কি আমরা তা দেখতে পাই? অনেক সময় ব্যত্যয় চোখে পড়ে। সব ক্ষেত্রেই কণ্ঠ উঁচু করা যায় না। চোখের সামনেই অনেক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যা কোনো মানুষেরই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এসব আইনের বরখেলাপ। কিন্তু দুর্বল মানুষ চুপ থাকে। যারা কিছু করতে পারে, তারাও চোখ এড়িয়ে যায়। অনেক নৃশংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলপাড় তোলে। সেই ঘটনা যে বা যারা ঘটায়, তারাও আন্তর্জাতিকভাবে এতটাই প্রতিপত্তিশালী যে শেষ পর্যন্ত সবাই সে নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করে না। একপর্যায়ে তা নিয়ে শোরগোল থেমে যায়। যার শিরñেদ করার কথা, সে নিজেই শির নত করে।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, সমাজে একজন মানুষও নেই, যারা সত্য উচ্চারণে ভয় পান না। অসময়ের, অসত্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে কণ্ঠ উঁচু করতে অনেক সাহসী মানুষ সমাজে এখনো আছেন। তারা আন্তরিকভাবেই চান ন্যায়নিষ্ঠ একটা সমাজ। তারা কতজন, যারা সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে সাহসে বুক চিতিয়ে সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে সমাজ গঠনের পক্ষে দাঁড়াবেন? আর সাহসই সব নয়, সাহসের সঙ্গে সঙ্গে বল লাগেÑঅর্থের বল, অস্ত্রের বল। যার যত বল, তার তত প্রতিপত্তি। অন্যের ওপর ছড়ি ঘোরানোর তার তত অধিকার। আমেরিকাকে বিশ্বের মোড়ল বলা হয়। তার অর্থবল, অস্ত্রবল এতই অধিক যে তা আর কোনো দেশের সঙ্গে তুল্য নয়। তাই অনেক দেশের সঙ্গে আমেরিকা অসংগত, অশোভন আচরণ করলেও আমেরিকাকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনা যায় না ইচ্ছে করলেই।
বাংলাদেশের কেবল নয়, অনেকটাই সর্বজনীন প্রবাদ প্রবচন, ‘উইনার টেকস অল’। সবটাই বিজয়ীর। আইন-আদালত, দুদক, বোমা-সন্ত্রাস করে পার পাওয়ার অধিকার। বিরোধী দলকে হেনস্তা করার এবং সব অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতির দায় বিরোধী দলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আইনের সুবিধাভোগ করা-সবটাই বিজয়ীর। এটা শুধু কেতাবি কথা নয়, এসব নিরেট বাস্তব। বর্তমান সময়ের সবাই এসব বাস্তবতা দেখতে পায়, বলতে না পারলেও। যারা বিজয়ী, আমরা দেখতে পাই, তারা বিরোধীদের কারও সঙ্গে একই আইনের ধারায় দোষী হলেও বিজয়ের পর সেই অপরাধে বিরোধী পক্ষের মানুষ জেল-জুলম খাটলেও বিজয়ীরা খালাস পেয়ে যায়। বিনা অপরাধে বিরোধী কোনো নেতাকর্মী সাজা খাটলেও বিজয়ীরা দাপিয়ে রাজ্য শাসন করে। বিজয়ীরা যত বড় অপরাধীই হোক, যত প্রকার অপরাধই করুক, খালাস, খালাস, খালাস। আবার যদি গদি উল্টে যায়, তবে কালকের বিজয়ীরা একই অপরাধে জেলে ঢুকবেন, সাজা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াবেন। আর কালকের আসামিরা আজকে বিজয়ী, তারা যত অপরাধীই হোক, একই আদালতে একই বিচারকের বিচারে সব খালাস। রাজ্য শাসন, প্রজা শাসন সবকিছুর অধিকার ফিরে পাবে। দিনে দিনে বিচার, দিনে দিনে খালাস। মামলার জট নেই, বিচারকদের কোনো অস্বস্তিবোধ করা নেই। সব ‘জলবত তরলং’। কিংবা শাস্তি স্থগিত, মামলা স্থগিত।
এখন আইনের চোখে সব সমান, আইনের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না-এসব বলা যেমন নেহাত আপ্তবাক্য, তেমনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও দুঃস্বপ্ন। তাই শ্রেণিভেদে যস্মিন দেশে যদাচার-এই রীতিই চলে আসছে আবহমান কাল থেকে।
 

কমেন্ট বক্স