বিষয়টি বড় অভিনব বলে মনে হচ্ছে। দুনিয়াজুড়ে করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কুপ্রভাবে মানুষের জীবনে অনেক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। মানুষের বেশুমার মৃত্যু ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আগুনে যেসব মানুষ বেঁচে আছে, তারা জ্বলছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, জ্বালানি এমনকি কাপড়চোপড়, প্রসাধনীর মূল্যেও তাপ ছড়াচ্ছে।
কিন্তু এসব দুর্ভোগ তো আছেই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ আলাদা করে জ্বলছে আরেক রোগ ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ মরছে বাংলাদেশে। ৫, ১০, ১৫, ২০ করতে করতে মৃতের সংখ্যা আড়াই শ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞদের হিসাবে এই ডেঙ্গু এখনো মহামারির রূপ নেয়নি। কিন্তু মানুষের মধ্যে মহামারির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন-আর কত মানুষ মরলে ডেঙ্গুকে মহামারি বলা যাবে? অবশ্য এই রোগ এখন পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশেই দেখা যাচ্ছে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিম বাংলাতেও এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। যদিও বাংলাদেশের সর্বত্রই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষও দু-চারজন করে মারা যাচ্ছে।
পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিন খবর বের হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ নেই। ডেঙ্গু যে এডিস মশা থেকে ছড়ায়, তা মানুষ ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে। কিন্তু নগরপিতারা তৎপর হয়েও কিছু করতে পারছেন না। ডেঙ্গু বেপরোয়া। কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। এডিস মশাদের জন্মস্থান এবং বিচরণভূমি ধ্বংস করা যাচ্ছে না। ‘মহামারির রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু’-এই শিরোনামে ঠিকানার গত ২৬ জুলাই প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘চলতি জুলাই মাসে ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুসংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যে প্রাণহানি ২০০ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতাল। পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চরম বেকায়দায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর ১১ এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করেও ডেঙ্গুর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় মানুষজন ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগ প্রকাশ সত্ত্বেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নগরবাসী কিছুতেই মানতে পারছে না। প্রথমত, ঢাকার প্রশাসনব্যবস্থা আরও সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য ঢাকা সিটিকে উত্তর ও দক্ষিণ জোনে বিভক্ত করে দুজন নগরপিতা বানালেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে যতই তাদের সাফল্য থাক, ডেঙ্গু দমনে তাদের ব্যর্থতা কেউ ভালোভাবে নিতে পারছে না। করোনার মতো বিশ্বব্যাপী মহামারিকে আজকের বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের সময়ে ডেঙ্গু দমনে ব্যর্থতা কারও পক্ষেই সহজভাবে নেওয়ার কথা নয়।
ডেঙ্গু অপরিচিত কিংবা নতুন কোনো রোগ নয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কোথায়, কোন সময় এডিস মশা জন্ম নেয়-সবই সবার জানা। তা সত্ত্বেও কেন এই ব্যর্থতা-সে প্রশ্নই সবার? প্রশ্ন-এ কি বিজ্ঞানের ব্যর্থতা, নাকি নগর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার? এ কথাও ঠিক, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধু সরকারের ওপর দিয়ে নাগরিক সমাজ নির্বিকার থাকলেই হবে না। সবাইকেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসবে হবে। মনে রাখতে হবে, মৃত্যু কিন্তু কার, কখন হবে-কেউ বলতে পারবে না। তাই সবার সতর্কতা, তৎপরতা আবশ্যক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে। নইলে বিজ্ঞানের যুগে মানুষকে হার মানতে হবে এডিস মশার কাছে।