সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ১৬০০ বছর পর তিনি দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি পরাজিত হওয়ার পরের টার্মেই আবার নির্বাচিত হলেন। এ ছাড়া অনেক মামলা মাথায় নিয়ে ট্রাম্পের বিজয় নজিরবিহীন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘যেসব মামলায় তার জেলে যাওয়ার কথা, সেখানে তিনি আমেরিকানদের ভোটে বিজয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে চলেছেন রাজসিকভাবে বিজয়ের মুকুট মাথায় দিয়ে। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয় লাভ করায় ঠিকানা পরিবারের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক ও উষ্ণ অভিনন্দন।
৫ নভেম্বর রাত নয়টায় ভোট গ্রহণ শেষে রাত তিনটায়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন মোট ৩১২ ইলেক্টোরাল ভোট। কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৬ টি। এবার পপুলার ভোটেও ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে তিনি ইলেক্টোরাল ভোটে জিতলেও পপুলার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এ দেশের নির্বাচনী রীতি অনুযায়ী তিনি ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি শপথ নিয়ে ২০ জানুয়ারি থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়মিত কাজ করে যাবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ট্রাম্পকে এই বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এখনো বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের জয়-পরাজয়ের বিভিন্ন বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। ‘এই হলে ওই হতো, ওই হলে এই হতো’ বলে বিশ্লেষকেরা তাদের প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নির্বাচন নিয়ে এ রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে, দুই পার্টির দুই প্রার্থীই যেখানে ব্যতিক্রমধর্মী প্রার্থী। একজন বিভিন্ন অপরাধে মামলায় জর্জরিত, তিনি জেলে যাবেন কি যাবেন না, এ রকম বিষয় মানুষের কৌতূহলে। অন্যজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। দুই দলেরই প্রার্থীর কী আকাল! নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, বিচার-বিশ্লেষণ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী এই নির্বাচন কেমন প্রভাব ফেলবে। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামবে কি না বা মধ্যপ্রাচ্যে মানবতার কান্না বন্ধ হবে কি নাÑএমন আলোচনায় সরগরম বিশ্ব। এর বাইরে অবৈধভাবে যাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঘটেছে বাইডেনের সময়ে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে, সেসব কথাও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
আলোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনী ফলাফল বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, জ্বালানি তেলের দাম কমবে কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে ঊর্ধ্বমুখী তাপ, তা সহনীয় পর্যায়ে কমে সাধারণ মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে কি নাÑচারদিকে এমন কথাই শোনা যাচ্ছে। এসবের এককথায় উত্তরÑট্রাম্পের হাতে নিশ্চয় জাদুর কাঠি নেই। আর যুদ্ধ থেমে গেলে, বিশ্বময় শান্তি নেমে এলে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার কী হবে। আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে কোথায়? অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট শুরু হলে সামাল দেবে কীভাবে? আমেরিকার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ভরসা সমরাস্ত্রের উৎপাদন ও বিশ্ববাজার। বিশেষ করে, বিবদমান দেশগুলোতে তার বিপণন, অন্য দেশকে যুদ্ধে উৎসাহিত ও প্ররোচিত করে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম রাখে। তাই যুক্তরাষ্ট্র সমরাস্ত্র উৎপাদন বন্ধ বা কমিয়ে দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাবে, এমন ভাবাটা মনে হয় একটু বেশিই হবে। তবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের রেস একটু থামলেও থামতে পারে। তবে ফিলিস্তিনিদের কান্না এবং দুর্ভোগ থামবে কি না, তা এখনই বলা যাবে না। যদিও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের আশা নিয়ে মুসলিম আমেরিকানরা দল বেঁধে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন এবং সেটা কিছুটা হলেও ট্রাম্পের বিজয়ে প্রভাব ফেলেছে।
তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলাটা অতি আগাম বলা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিয়ে নিয়মিত দায়িত্ব শুরু করার পর হয়তো কিছুটা বুঝতে পারা গেলেও যেতে পারে। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং বিশ্ববাসী নতুন এক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখতে চান, যিনি বিশ্বশান্তির দিকে নজর দেবেন। বিশ্বপরিবেশকে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। মানুষের এই শুভ প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটুক যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে। বিশ্ববাসী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর কার কাছে এমনটা প্রত্যাশা রাখতে পারে?