অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ওদিকে যুদ্ধ বিস্তৃৃত হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দিয়ে। সে যুদ্ধ চলছে। দিনে দিনে তা-ও বিস্তৃত হচ্ছে যুদ্ধের ধ্বংসক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। এরপর ইসরায়েল-হামাসের রকেট হামলার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ দিয়ে। সে যুদ্ধ চলতে চলতেই ছড়িয়ে গেল লেবাননে। এরপর ইরানেও ছড়িয়ে পড়ল ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে রকেট হামলার মধ্য দিয়ে। এদিকে ইসরায়েলের বোমায় হাজার হাজার শিশু-বৃদ্ধ, নর-নারী মৃত্যুবরণ করছে। আমেরিকার অস্ত্রসহায়তা নিয়ে ইসরায়েল সামরিক বলে বলীয়ান। সেই বলে ইসরায়েল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। একক শক্তিতে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের তুলনায় দুর্বলই হয়তো হবে।
এদিকে এশিয়াতেও সামরিক উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘হঠাৎ চীনের রণপ্রস্তুতি’ এবং ‘সীমান্তে সেনাবৃদ্ধি ভারতের’Ñদুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে ঠিকানার ২৩ অক্টোবর সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায়। অনেকের মনেই শঙ্কা এবং প্রশ্ন, চীন ও ভারতের এই প্রস্তুতি কিসের লক্ষণ। চীনের মাথাব্যথা তাইওয়ান নিয়ে। ভারত চিন্তিত দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিয়ে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি পিপলস লিবারেশন আর্মির রকেট ফোর্সের একটি ব্রিগেড পরিদর্শন করার সময় এক মন্তব্য করেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মির একটি ব্রিগেড পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট জিনপিং তাদের দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি রণপ্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে বিস্তৃতভাবে প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের প্রস্তুতি জোরদার করা উচিত এবং নিশ্চিত করা উচিত যে সৈন্যদের দৃঢ় যুদ্ধের সক্ষমতা রয়েছে।’
চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ানের সামরিক উত্তেজনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন গত সপ্তাহে তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া দিয়েছে। তাইওয়ানও পেছনে থাকেনি, সেও পাল্টা সামরিক মহড়া করেছে। চীন সব সময় তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে। এই দুই দেশের মধ্যে সব সময় সামরিক উত্তেজনা বহাল থাকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রেসিডেন্টের এই কথার ফল কী দাঁড়ায়, তা নিয়েই বিশ্বব্যাপী শঙ্কা।
এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, যা সেভেন সিস্টারস বলে অধিক পরিচিত, নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় পড়েছে ভারত। শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট পাওয়ায় সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম সমাবেশ সহজ ছিল সাত রাজ্যের বিদ্রোহীদের বিদ্রোহ মোকাবিলায়। তাদের শঙ্কা, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সহজ যাতায়াতের সুযোগ আর না-ও থাকতে পারে। ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ নতুন করে শুরু হতে পারে। এর আগে ভারতের এই বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে আসা ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্র চট্টগ্রামে ধরা পড়ে। তা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পানি ঘোলা হয়। নতুন পরিস্থিতিতে আবার সেই শঙ্কায় পড়েছে ভারত। শেষ পর্যন্ত এর ফল কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে ভারত শুধু নয়, সব দেশই শঙ্কিত।
অস্ত্রের ব্যবহার শেষ পর্যন্ত যে সংঘাত, যুদ্ধ, ধ্বংস, রক্তপাত, প্রাণহরণ, তা সবাই জানে। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী শঙ্কা, কখন না জানি বড় ধরনের যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ে মানবসভ্যতা ধ্বংস করতে।