Thikana News
০৭ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন : তবু কেন যুদ্ধ-হানাহানি

বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন : তবু কেন যুদ্ধ-হানাহানি
কোটি কোটি মানুষ এ বিশ্বে অনাহারে থাকছে। নিরন্ন এই মানুষদের মুখে আহার জুটিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত, দেখা যাচ্ছে তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করে নিজেরা যুদ্ধে, হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। তারা মানুষকে বাঁচাতে নিজেদের উৎসর্গ করতে রাজি নয়। মানুষ মারার উল্লাসে লিপ্ত। তাই তো আজ প্রশ্ন উঠেছেÑএ কেমন বিশ্ব? কেমন বিশ্ব মোড়লগিরি, এ কেমন সাম্য ও শান্তি? নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছেÑবিশ্ব মোড়লদের কামানের গোলায় মানুষকে হাসতে হচ্ছে। তাদের ঋণের বোঝায় চাপা পড়েও হাসতে হবে, কষ্ট বুঝতে দেওয়া যাবে না।

ঠিকানার গত সপ্তাহ অর্থাৎ ১৯ জুলাই সংখ্যার একটি সংবাদে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ কেন দরিদ্র?’ এটা জাতিসংঘের এক বছরের রিপোর্ট। ২০২০ সালের হিসাব। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ‘বিশ্বজুড়ে অন্তত ১৬.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের দিকে চলে গেছে ২০২০ সালে।’ ইউএনডিপির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অবিলম্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা না কমালে আরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতে বাধ্য হবে।’
প্রতিবেদনটিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছেÑকেন এ রকম হলো?

প্রথমে করোনা মহামারি, তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুইয়ে মিলেই এ সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে গোটা বিশ্বের অন্তত ১৬.৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে এই দুটি বিষয়। এ তথ্য জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, করোনা বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১৬.৫ কোটি মানুষ। বিশ্বের ৩৩০ কোটি মানুষ এমন সব দেশের নাগরিক, যেসব দেশ তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চেয়ে ঋণ পরিশোধে অধিক অর্থ ব্যয় করে।

এ তো গেল সাম্প্রতিক দু-তিন বছরের রিপোর্ট। কিন্তু আমরা তো জানি বিশ্বে কত লোক অভুক্ত থাকে, আর কত লোক কী পরিমাণ খাবার নষ্ট করে? পাশাপাশি যুদ্ধে যুদ্ধে কত অর্থ-সম্পদ নষ্ট হয় এবং ওইসব যুদ্ধাস্ত্র এবং যুদ্ধে যত টাকা ব্যয় হয়, তা দিয়ে কত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে তাদের ক্ষুধার জ্বালা থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতÑদুটো মিলে তো তিন বছর মাত্র। কিন্তু তার আগে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ। কত বছর ধরে ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কোরীয় যুদ্ধ, আরও কত আঞ্চলিক, সীমান্ত সংঘর্ষ, জঙ্গিবাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা। সব মিলে পৃথিবীতে কত শত কোটি নিরন্ন মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। কত মানুষ গৃহহীন হয়েছে-তার হিসাব কি কোনো রিপোর্টে আছে?

একটি যুদ্ধে যত ব্যয় হয়, তা দিয়ে দুনিয়ার সব নিরন্ন মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়া যায়। অস্ত্রের পেছনে, যুদ্ধের জন্য যা ব্যয় করা হয়, তা দিয়ে সব মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু মোড়লিপনা, ইগোর প্রাধান্য রক্ষা এবং বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে আমরা সব ‘সু’ বিসর্জন দিয়ে বসি। বিশ্বপ্রেম, মানবতা সব সুবচন ত্যাগ করে মানুষ, সভ্যতা, শান্তি ধ্বংসে মত্ত হয়ে উঠি। সে ক্ষেত্রে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ হয় না। যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তুলতে আমরা যদি প্রকৃতির প্রতি সুবিচার করতে পারি, তবে প্রকৃতিও বিরূপ হবে না আমাদের প্রতি। আসুন, এবার আমাদের প্রার্থনা হোক, আমরা তো মানুষ হয়ে শুধু জন্মেছি, এবার আমরা মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠি।

কমেন্ট বক্স