Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

কেন বাংলাদেশের এমন টালমাটাল অবস্থা দায়ী কে, সমাধান কী?

কেন বাংলাদেশের এমন টালমাটাল অবস্থা দায়ী কে, সমাধান কী?
বাংলায় একটা কথা আছে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ অর্থাৎ পুরনো সংকটের সঙ্গে আরও কিছু নতুন সংকট যুক্ত হওয়া। ফলে যারা চলমান সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজেও পাচ্ছেনা, এতদিন যাদের নাভিশ্বাস উঠছিল, কোটা আন্দোলনে তাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় আরকি।
শান্ত শিষ্ট বাংলাদেশের হঠাৎ এমন অবস্থা হোল কী করে। বাংলাদেশে এমনিতেই নানা সংকটে নাগরিক জীবন চরম অবস্থায় উপনিত। সংকটে সংকটে জর্জরিত প্রিয় স্বদেশ। ‘স্বর্গের চেয়ে বড় জন্মভূমি’ বাংলাদেশের যেদিকে নজর দেয়া যায়-সেদিকেই সংকট চোখে পড়বে। সংকট রাজনীতিতে, সংকট অর্থনীতিতে এবং কূটনীতিতেও। আর দেশের মানুষ যে সমস্যাকে সবচেয়ে বড় বলে মনে করে- সেটা বাজার সংকট। প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী, প্রতিদিন যেসব পণ্য ছাড়া সংসার চলেন- সেই সব পণ্যের মূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। আজকের হিসেব কালকেই অচল। গৃহকর্তীর মুখভার, গৃহকর্তার অবস্থা ‘ত্রাহি মধুসূদন’। মধ্যসত্ত্বভোগী, সিন্ডিকেট, গডফাদারদের মুনাফার লাগামহীন লোভ, অর্থের দাপট- বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই যেন দায়। আর সংকটকে গভীর থেকে গভীরতর করে তুলছে কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ, কিছু ঘুষখোর আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারির নীতি নৈতিকতাবিরোধী কার্মকাণ্ড, সীমাহীন করে তুলছে চলমান পরিস্থিতিকে।
সব সংকটকে ছাপিয়ে এখন কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলছে। তাতে কারও বলার সাধ্য নেই, বাংলাদেশের ডেসটিনি আসলে কোথায়, কোন দিকে। একসময় বাঙালিদের আন্দোলন সবাই সফল হতো। এটাই ছিল সত্য যে, তখন লড়াইটা ছিল একটা বিজাতীয় শক্তির সঙ্গে। পাক-ভারত বিভক্ত কালেই যার বীজ লুকিয়ে ছিল। তখন  লড়াইটা লুকিয়ে ছিল প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে। যে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিলো। ভয় ছিলো দুই জাতির লড়াই, বন্দি বাঙালিদের সঙ্গে দখলদার ঔপনিবেশ শাসককূলের বিরুদ্ধে। ওরা বাংলাদেশকে শাসন করতো, শোষণ করতো, ২ হাজার মাইল দূর থেকে এসে। দখলদার বাহিনীর মনের মধ্যে ছিলো বাঙালিদের ভীরুতা, ধর্মের প্রতি দুর্বলতা। কিন্তু পাকিস্তান পরাজিত হয়ে চলে যাওয়ার পর সে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখা গেছে। প্রমাণিত হয় বাঙালিরা বীরের জাতি, তারা অন্যায়ের সঠিক জবাব দিতে জানে এবং বিজয় অর্জনও করতে পারে। 
তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন যত সহজ ছিল। নিজের ভাষা, নিজের ধর্মের মানুষ যখন শাসক এবং শোষক হন, যাদের ভাষা এক। শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি এক, তারা যদি লুটেরা হয়, দখলদার, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর হয়, তবে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা খুব কঠিন। তারা বাঙালিত্বের দাবিদার যখন হয়, তখন তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়ে। এই স্বদেশি শাসক-শোষক বাঙালিরা যাদের শোষণ করে, এক ভাষায় কথা বলে, তখন যতটা তাদের আসল স্বরূপ লুকিয়ে বলে- আমরাও বাঙালি, আমরাও তোমাদের ভাই বলে শোষণ করে, তাদের সেই শোষণের পথ ধরে যদি বাঙালির ঘাড়ে চড়ে বসে, তখন তাদের নামানো খুব কঠিন হয়।
সেই অবস্থাই হয়েছে, কঠিন হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। যে শিশুরা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, এক-একটি শিশু এক-একটি সুগন্ধি ফুলের মতো, সেই শিশুরা কীভাবে তারই কন্যার পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হয়! স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ, সংঘবদ্ধ হয়ে কেবল কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। তারা সরকারের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকের কাছে ধর্ণা দিয়েছে। কিন্তু কেউই তাদের দাবিকে আমলে না নিয়ে একগুঁয়েমি আচরণ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই তাদের কোন পাত্তা না দিয়ে স্বৈরাচারের মতো আচরণ করেছেন। ছাত্রদের সেই আন্দোলনেই সরকার টালমাটাল। কী ঘটে যায় বাংলাদেশে তাই নিয়ে সকলের কপালে ভাঁজ। স্বাধীন দেশ এখন চলছে সেনাবাহিনীর সহায়তায়। কারফিউ দিয়ে সেনা বাহিনী নামিয়ে দেশ শাসন-সাধারণ নাগরিকরা স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনার গায়ে কালিমা-লেপন বলে মন্তব্য করেছে।
যে ছাত্র সমাজের দাবিকে একটু গুরুত্ব না দেওয়ার পর শিশুসহ শতাধিক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ হত্যা করে এখন উপযাজক হয়ে ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানায়, সংলাপের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রদের ৮ দফা দাবি নিয়ে সরকারকে এখন বিবেচনা করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এসব কেউ সমর্থন করে না। প্রবাসী বাঙালিরাও দেশে রক্তপাত চায় না, শান্তি কামনা করেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রাণহানি, রক্তপাত বন্ধ হোক। ছাত্রদের হত্যা করে যারা বাংলাদেশের পতাকাকে রক্তাক্ত করেছে, তাদের ধিক্কার জানিয়ে শেষ কথা-বাংলাদেশের পাতাকা সম্মুন্নত থাকবে সবসময়। ‘বন্ধু তোমার ছাড় উদ্বেগ সুতীব্র কর চিত্ত/বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃক্ত’।
 

কমেন্ট বক্স