Thikana News
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অর্থই সকল অনর্থের মূল

অর্থই সকল অনর্থের মূল


‘অর্থই সকল অনর্থের মূল’-এই প্রবাদটি কবে থেকে শুনতে এবং বুঝতে শুরু করেছি, সে দিনক্ষণ আর মনে নেই। তবে সেটা যে শৈশবে, যখন শব্দের অর্থ জানতে শিখেছি, সে সময়টাই হবে নিশ্চয়। এবং সেটা যে অনেক কাল আগে হবেÑবিষয়টি নিয়ে মনে হয় কারও সন্দেহ হবে না। বিষয়টি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আরও একটি কথা, সেটা এখানে শুরুতে বলে নেওয়া ভালো, সে সময় অর্থবানদের ‘লক্ষ টাকার মালিক’ বললেই মানুষের চোখ কপালে উঠত, ‘লক্ষ টাকা’ দেখতে কেমন, তা নিয়েও কথা হতো। সে অর্থবান মানুষকে দেখাটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার হতো।
লক্ষ টাকা নিয়ে আরও অনেক রকম কথা হতো। সেসব কথা কতটা কাল্পনিক আর কতটা বাস্তবিক, তা নিয়েও তর্ক-বিতর্ক হতো। এখন আর ‘অর্থবানদের কত অর্থ আছে’, তা নিয়ে কথা হয় না। কেননা এখন লাখ টাকা বা কোটি টাকা নিয়ে কথা হবে কি, এ পরিমাণ টাকা এখন যাদের আছে, তাদের ধনী লোক হিসেবে গণ্যই করা হয় না। একজন কোটিপতি-এ কথা শুনলে প্রথমেই মনে হয় সেই বড়লোকের কত কোটি টাকা আছে? শত কোটি, হাজার কোটি, নাকি হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে এখন নাকি ভিক্ষা করেও কোটি টাকার মালিক হতে পারেন। আর ধনাঢ্য ব্যক্তির ধনের পরিমাপ করা গেলে সে নাকি ধনীর তালিকাতেই পড়বে না। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এক ধনাঢ্য ব্যক্তির এক সন্তানের কথা উঠেছিল। ওই সন্তানের নাকি প্রতিদিন সকালে নাশতার জন্য বরাদ্দ ছিল দুই লাখ টাকা। তাহলে দুপুরে লাঞ্চ এবং রাতে ডিনারের জন্য বরাদ্দ থাকে কত টাকা। সাধারণ মানুষের পক্ষে অনুমান করে বলাও এক কঠিন বিষয়।
এখন তো টাকার মালিক হওয়ার জন্য কষ্টও করতে হয় না। ঘাম ঝরাতে হয় না। লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকতে হয় না। কেবল একটু সাহস থাকতে হবে এবং সামাজিক লজ্জা পাওয়াটা যত কম থাকে, ততই ভালো। আর উপরতলায় যদি কোনোভাবে একজন মামু, খালু, ভগ্নিপতি থাকে, তবে তো কথাই নেই। কারণ এখন তো ‘লুটিতো ব্যাংক’। কোনো কিছু হাতে না মারলেও চলবে এবং ব্যাংক লুট করে নিয়ে বিদেশে চলে গিয়ে বিবি-বাল-বাচ্চা নিয়ে মহাসুখে দিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
ঠিকানার ৩ জুলাই সংখ্যার পত্রিকায় এ রকম একটি সংবাদ নিয়েই এখন চায়ের টেবিল গরম। ঠিকানার প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় ‘ঋণ করে বিদেশে পাড়ি জমান ৫৮ ভাগ অভিবাসী’। এখানে অবশ্য সংবাদটিতে প্রতিবেদকের কাল্পনিক কিছু কথাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী সরকারি দলের কিছু নেতা ব্যাংক পেয়েছিলেন, তাদের নিয়ে কিছু কথা শোনা যায়। তবে অভিবাসীরা তো বিদেশেই থাকেন। তারা আর বিদেশে পালিয়ে যাবেন কী। ঋণ খেলাপ বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় রোগ এবং অনেক পুরোনো। তবে ব্যাপক হারে শুরু হয় সামরিক শাসনামলে। এরপর অর্থ পাচারের পরিমাণ এবং দাপট দুটোই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ রোগ নিরাময়ের টুকটাক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অর্থ পাচারের ভয়ংকর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। অর্থপাচার রোধে সব সরকারের সকল পদক্ষেপই ব্যর্থ হয়েছে। এখানে অর্থপাচার রোধে সব সরকারই কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভোট নিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সবই বাগাড়ম্বর। কিন্তু অর্থপাচার রোধে সত্যি যদি কোনো সাফল্য না আসে, তবে তরীও ডোবে, মাঝিদেরকেই জীবন দিয়ে দায় মেটাতে হবে।

কমেন্ট বক্স