Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

দেশের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনা জরুরি

দেশের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনা জরুরি
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগসহ যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা কারফিউ জারি, গুলির নির্দেশ, আদালতের রায়ে কোটা-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি, ঢালাও মামলা, গণগ্রেফতার, চিরুনি অভিযান, ইন্টারনেট বন্ধ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ইত্যাদির মাধ্যমে আপাতত মোকাবিলা করা গেলেও এর রেশ সহসা কাটবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে বল প্রয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন শুরু হয়েছে, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দায়ের করা মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া। এতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো যখন নেওয়া হয়, সে সময় গোটা বিশ্ব থেকে কার্যত বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাই দেশে-বিদেশে অজানা থাকেনি।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা, প্রাণহানি, ধ্বংসকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাতে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কথাও তাদের বক্তব্য, বিবৃতিতে উঠে এসেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তুর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার, মার্কিন সিনেটের মেজরিটি লিডার চাক শুমার প্রমুখের বক্তব্যে অনেক কথাই স্পষ্ট করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। লক্ষ করা যাচ্ছে, দিন যত যাচ্ছে দেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের মাত্রা ততই বাড়ছে। বিশ্বের বিশিষ্টজনদের চিঠি এবং ঢাকাস্থ পশ্চিমা দূতাবাস ও হাইকমিশনের চিঠি চাপের মাত্রা বৃদ্ধির প্রমাণ বহন করে। এখন দেশজুড়ে যা ঘটছে, তাও দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। আন্দোলনের সময়ে কতজন মারা গেছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। অনেকে নিখোঁজ, অনেকে এখনো হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। ইন্টারনেট ও যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় গুজবের পাখা বিস্তৃত হয়েছে। প্রকৃত তথ্য গোপন করার উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে বলে দেশের ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের ধারণা। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আন্দোলন দমানোর আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে এক গভীর সংকটে নিপতিত করেছে।
ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এত বড় আন্দোলন। সরকারি পক্ষে বলা হচ্ছিল, এ আন্দোলনের পেছনে অবশ্যই আছে জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও ছাত্রদল। নিহতের সংখ্যা কম করে দেখানো হলেও ২৬৬ জনের কম, তা বলা যাচ্ছে না। অহিংস আন্দোলন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সহিংস হয়ে আন্দোলনে হাতবদল ঘটে সাধারণ ছাত্র থেকে চলে যায় রাজনৈতিক সংগঠনের হাতে।
দেশে এখন চলছে গণমামলা, গণগ্রেফতার, ব্লকরেইড, তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এ পর্যন্ত সাত-আটশ মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজারের ওপর। কারাগারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গ্রেফতার-রিমান্ডের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গন স্থবির। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। ইতিমধ্যে এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স-প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে।
আমরা আশা করব, সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবে। একই সঙ্গে কোটা আন্দোলনকেন্দ্রিক সকল ঘটনায় নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত, সুষ্ঠু বিচার ও দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হওয়া দেশের ভাবমর্যাদা ফিরে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের শুভবুদ্ধিই আমাদের কাম্য।

কমেন্ট বক্স