মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে যুদ্ধের আগুনে। ইসরায়েলে হামাসের সশস্ত্র রকেট হামলার মধ্য দিয়ে ২০২৩ এর ৭ অক্টোবর এই যুদ্ধের সূচনা হয়। বিষয়টি এমন দাঁড়ায়, বিড়ালের লেজ দিয়ে বাঘের কান চুলকে দিয়ে ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে দেওয়া। ঘুমভাঙা হিংস্র বাঘের তাণ্ডবে বনের সব জীবজন্তু, বৃক্ষরাজি যেমন কম্পমান; ইসরায়েলের অবস্থা ঠিক তেমনি। হামাসের সেই রকেট হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল সব সামরিক সক্ষমতা নিয়ে হামলে পড়ে ফিলিস্তিনে। যুদ্ধের সকল নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নারী-শিশু-বৃদ্ধ, বেসামরিক জনপদ, হাসপাতাল, মসজিদ, আশ্রয়খানা-কোনো বাছবিচার না রেখে রকেট, বিমান, কামান আক্রমণে ফিলিস্তিন প্রায় ধূলিসাৎ। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি। কয়েক লাখ মানুষকে পঙ্গুত্ব সঙ্গী করে জীবন কাটাতে হবে।
যুদ্ধ ফিলিস্তিনেই সীমিত থাকছে না। ইতিমধ্যেই তা লেবানন হয়ে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ইসরায়েলের বোমার আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে। তাই বিশ্ব পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, এ যুদ্ধের শেষ পরিণতি কী? মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা ডিঙিয়ে অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে না তো? আশঙ্কা অমূলক মনে করছে না কেউ। কেননা যুদ্ধ থেকে ইসরায়েলকে নিবৃত্ত করার দৃশ্যত কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। যারা যুদ্ধ বন্ধে মৃদু মৃদু আহ্বান জানাচ্ছে, সে আহ্বান কোনো কাজেই আসছে না। ইসরায়েল সে আহ্বানকে থোড়াই কেয়ার করছে।
কেয়ার করবেই-বা কেন? আমেরিকার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানকে ইসরায়েল মনে করছে, সেটা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশ্ববাসীর চোখে নিজেকে নির্দোষ দেখাতে যুদ্ধ বন্ধের এই আহ্বান। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ যদি যথার্থ অর্থে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাত, তবে সে আহ্বানকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। জাতিসংঘের মহাসচিব যা-ই বলুন, বিশ্ববাসী জানে, যুক্তরাষ্ট্রের কথাই জাতিসংঘের শেষ কথা। তাই মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের সমাধান বিশ্বসভ্যতা সহজে আশা করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প জয়ী হলে যুদ্ধ বন্ধ হলেও হতে পারে।
ঠিকানার ৩০ অক্টোবর সংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণঘাতী সংঘাত নিয়ে এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটির শিরোনাম ‘সমাধান কোন পথে?/সংঘাতে জ্বলছে মধ্যপ্রাচ্য’। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়-ইসরায়েল প্রতিশোধ গ্রহণের নামে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে। গাজায় শত সহস্র বোমাবর্ষণে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়েছে। ইসরায়েলি বোমায় ৪৪ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত এবং ২৩ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। পশ্চিম তীরে নিহত হয় আরও প্রায় এক হাজার মানুষ। হামাসের পাল্টা আক্রমণেও মারা গেছে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক ইসরায়েলি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক।
এই যুদ্ধ এখন লেবানন হয়ে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এরপর যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, কত মানুষ প্রাণ হারাবে, কে জানে। এখন যা পরিস্থিতি, যুদ্ধ বন্ধ বা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি, সবটাই নির্ভর করছে ইসরায়েল বা ইসরায়েলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটা হুমকিও দেখতে পারছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সত্যি যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই যায়, তবে বিশ্বমানব এবং বিশ্বসভ্যতা সবই ধ্বংস হয়ে যাবে বলে যুদ্ধ বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। তাই এ যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আগেই বন্ধ হওয়া জরুরি।