Thikana News
০১ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

আহারে সুন্দর পৃথিবী কী আছে তোর কপালে

আহারে সুন্দর পৃথিবী কী আছে তোর কপালে
তার পিলে চমকানো রূপ এবং অতুলনীয় ধ্বংসক্ষমতা দেখে বাংলায় তাকে ‘নিঃশব্দ ভয়ংকরী’ নাম দেওয়া হয়েছে। তার ধ্বংসক্ষমতায় অভিভূত হয়ে বিজ্ঞানীরা নামকরণ করেছেন ‘বিল্ট স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার’। এই ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র দেখে মুগ্ধ হয়েই হয়তো ঠিকানায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটির শিরোনাম করেছে ‘নিঃশব্দ ভয়ংকরী’। প্রকাশ পেয়েছে গত ২৫ জুন, প্রথম পৃষ্ঠায়। নিঃশব্দ ভয়ংকরী প্রথম ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে যুদ্ধবাজ ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এটি কোনো সাধারণ যুদ্ধাস্ত্র নয় বলে একে এক মহাকাব্যিক ভাষায় তার রূপ বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।

সেই বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ভয়ংকর এই আকাশযান যেন ভাসমান এক অদৃশ্য ঘাতক। বিনা বাধায় শত্রুর আকাশসীমা পেরিয়ে হামলা চালায় নিঃশব্দে। নিখুঁত ও ভয়ংকর নির্ভুলতায়। গত ২১ জুন মধ্যরাতে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ অভিযানে যখন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, তখন থেকেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই বি-টু বোমারু। ৩৭ ঘণ্টার অবিরাম উড্ডয়নে ইরানের ছয়টি ভয়ংকর ‘বাংকার ব্লাস্টার’ ফেলা হয়। এই বিমানের পেট থেকে বোমা ছড়িয়ে পড়তেই আবারও প্রশ্ন ওঠে, এই বি-টু বোমারু বিমানে এমন কী আছে, যা একে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বোমারুতে পরিণত করেছে?

বিমানটির বৈশিষ্ট্যও অতুলনীয়। একটি বিমানের মূল্য ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। একটি বিমানের মূল্য দিয়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশের বাজেটের অর্ধেক মেটানো যায়। আকাশ থেকেই এর জ্বালানি ভরা যায়। নিঃশব্দগামী এই বি-টু যেকোনো রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম। আকাশেই যেহেতু জ্বালানি নেওয়া যায়, সে কারণে অবিরাম উড্ডয়নে যেকোনো লক্ষ্যে নিঃশব্দে আঘাত হানতে পারে। এ পর্যন্ত মাত্র ২১টি বি-টু তৈরি হয়েছে এবং তা আমেরিকার অস্ত্রভান্ডারেই আছে। নকশাতে রয়েছে প্রকৃতির ছাপ। ইরান যুদ্ধে এই বিমানের ব্যবহার করে এর ধ্বংসক্ষমতা যাচাই করে নিল যুক্তরাষ্ট্র। যেমন জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলে আমেরিকা তার ধ্বংস ক্ষমতা যাচাই করেছিল। বি-টু স্পিরিট তাই কেবল একটি বিমানের নাম নয়, এ এক ভাসমান আতঙ্ক, যা যুদ্ধের ভাষা বদলে দেয়।

শুধু যুদ্ধের ভাষা বদলে দেয় না, মানুষের কল্পনা-ভাবনাকেও এলোমেলো করে দেয়। মানুষের কল্পনায় এখনো বিশ্বসভ্যতাকে একেবারে ধ্বংস করে দেবে, তেমন কিছু মানুষের দ্বারা আবিষ্কৃত হবে না। কেননা নিজের জ্ঞান দিয়ে নিজেকে হত্যা করার মতো দুর্বুদ্ধি মানুষের এখনো হয়নি বলেই মানুষ ভাবতে চায়। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মানুষের কল্যাণ ভাবনার কথাই ভাববে। কিন্তু সময় বদলেছে, মানুষের মন-মানসিকতা পাল্টেছে। বিজ্ঞানও লাগামছাড়া আবিষ্কারের পথে ধেয়ে চলেছে। মানুষ আর এখন নিজের জ্ঞান-মেধা-দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আস্থা রাখে না। তাই মানুষই এখন ‘কৃত্রিম মেধা’র জ্ঞান আবিষ্কারের পথে পা বাড়িয়েছে। আজ যুদ্ধবাজ জঙ্গিবাজরা নিজেদের কীভাবে রক্ষা করা যায়, সে কথা না ভেবে মানুষকে কীভাবে হত্যা করা যাবে, কীভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় সভ্যতা ধ্বংস করে দেওয়া যাবে-সেই প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে উঠেছে ভূত-ভবিষ্যৎ ভুলে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ঘিরে বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারল বি-টু স্পিরিট বিমানের কথা। এটাই কি একমাত্র নিঃশব্দ ভাসমান বি-টু স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার? নিশ্চয় এটাই শেষ নয়। এই ২১টি বি-টু স্পিরিট বোমারুর অর্থে ২১টি মধ্যম আয়ের দেশের পুরো বাজেট ধ্বংস কাজে লাগানো। অর্থাৎ ২১টি দেশের সব মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। আর যেসব অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডারে জমা আছে, তা দিয়ে এবং বিশ্বের অন্যান্য বিত্তশালী দেশের অস্ত্রভান্ডারে আরও যে সব অস্ত্র জমা আছে, সেসব দিয়ে বিশ্বের কত মানুষকে ক্ষুধা, অপুষ্টি থেকে রক্ষা করা যাবে, সে হিসাব করা কত মুশকিল, তা কি ভাবতে পারা যায়?

আর আরও কত ভয়ংকর, কত বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র তৈরি হবে, কেউ বলতে পারবে না। এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না, আজকে যুদ্ধ-যুদ্ধ মহড়া চললেও একদিন যদি সত্যি সত্যি বনে বাঘ আসার মতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তবে তার ধ্বংসযজ্ঞ দেখার জন্য মানুষসহ জীবজগতের কেউ কি জীবিত থাকবে? হারবে মানুষ! হারবে তাদের সবার চেয়ে বড় হওয়ার বাসনা। শক্তিমানদের এই অসীম ক্ষমতা ধ্বংস করার কোনো অস্ত্র যদি আবিষ্কৃত হতো, তবে এই সুন্দর পৃথিবীটা রক্ষা পেত। পৃথিবীটা দানবীয় লড়াইয়ে ধ্বংস হওয়ার পূর্বে এই প্রার্থনা-এগিয়ে আসুক সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
 

কমেন্ট বক্স