Thikana News
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জয় হোক গণতন্ত্রের

জয় হোক গণতন্ত্রের


বাংলাদেশ আরও একটি গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐক্য আর দৃঢ়তায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। জনগণ প্রমাণ করেছে ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিরোধিতা করে অন্য কোনো শক্তি টিকে থাকতে পারে না। বিজয়ের পর ঢাকাসহ সারা দেশের রাজপথগুলো ভরে গিয়েছিল মানুষে। বিজয় মিছিল আর আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়েছে স্বদেশ-প্রবাস।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৬ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের নাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাচ্ছেন ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলনে আটকরাও। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতার কারণে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় অনেককে। কারও কারও বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জনরোষের শিকার হন নিরীহ অনেক মানুষও। এই সুযোগে কেউ কেউ অবাধ লুটপাটে অংশ নেয়। অনেক এলাকায় মূল্যবান সম্পদ লুট করা হয়, মানুষের প্রাণের ওপর শঙ্কা নেমে আসে। কিছু কিছু স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নেমে আসে।
আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষকে তারা নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। এই আন্দোলন কোনো ধ্বংসচক্রের জন্য নয়, কোনো হানাহানি বা লুটতরাজের জন্য নয়। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে যে বড় বিজয় এসেছে, তা যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় কলঙ্কিত না হয়, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা গোটা দেশের আস্থা অর্জন করেছেন। আশা করি, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের আস্থার জায়গা সমুন্নত রাখবে। এই অবস্থায় অরাজকতা বন্ধ করতে, দেশকে আবারও পুরোপুরি অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে সরকার গঠন করামাত্রই প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। জনতার আস্থা ফেরাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এত মানুষের রক্তেভেজা আত্মত্যাগের অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হারতে দেওয়া যাবে না।
এ আন্দোলনে কত প্রাণ ঝরে পড়ল, কত বাড়িঘর জ্বলেপুড়ে ছারখার হলো তার হিসাব এখনই সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, প্রকৃত খোঁজখবর নিয়ে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এই প্রত্যাশাটুকু যেন এবার পূরণ হয়। আইনের শাসন যেন প্রতিষ্ঠা হয়, গণতন্ত্র থেকে যেন একনায়কতন্ত্র না হয়। মানুষের স্বপ্ন যেন কিছু ব্যক্তির ইচ্ছা ও অনিচ্ছাতন্ত্রে ডুবে না যায়। শেখ হাসিনার ইতিহাস থেকে আমরা যেন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি এবং শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণই যেন শেষ শিক্ষা গ্রহণ হয়। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভবিষ্যতে যেন কোনো তস্কর গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় না আসতে পারে। আগামীতে মানুষের গণতন্ত্রই যেন মানুষ দেখতে পায়। গণতন্ত্র, জনগণতন্ত্র যেন মানুষ দেখতে পায়। শেখ মুজিবের কন্যার গণতন্ত্র যেন পদদলিত হয়। জয় হোক গণতন্ত্রের।

কমেন্ট বক্স