Thikana News
০৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতির চালক কে?

বাংলাদেশের রাজনীতির চালক কে?



 
বাংলাদেশে রাজনীতির স্টেকহোল্ডার আর রাজনীতিকেরা নন। রাজনীতির বাইরের লোক যারা, তারাই এখন রাজনীতির স্টেকহোল্ডার। তাই বলে অবশ্যই তারা দেশের জনগণ নয়। রাজনীতি এখন অনেকটাই দেশের বাইরের নিয়ন্ত্রণে। খুব সামান্যই রাজনীতিবিদদের হাতে। বাদবাকিটা দেশের বেসামরিক, সামরিক আমলারা নিয়ন্ত্রণ করেন। যদিও সবাই সব সময় বলে থাকে, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।’
আগে এমনটা ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এমন ছিল না। পরাশক্তি যারা ছিল তখনকার সময়ে, তারা সাহায্য-সহযোগিতা করত বলে মাঝে মাঝে নাক গলাত বটে, তবে বর্তমান সময়ের মতো এমন নির্লজ্জ এবং উলঙ্গভাবে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার আগ্রহ দেখা যেত না। এখন আর ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। অনেক সময় দ্বিধায় পড়তে হয়। মনে প্রশ্ন জাগে, আসলে দেশটার মালিক কে! জনগণ, ক্ষমতাসীন দল, না বিদেশিরা?

বাংলাদেশে যারা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা আছেন, তাদের দেখলে মনে হয় না তাদের কূটনৈতিক কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করাই যেন তাদের প্রধান কাজ। এবং দেশের রাজনৈতিক দলের মতো যেমন একদলের সঙ্গে আরেক দলের বৈরিতা, এক জোটের সঙ্গে আরেক জোটের দা-কুমড়ো সম্পর্ক, কূটনীতিকদের মধ্যেও সেই রকম সম্পর্ক লক্ষ করা যায়।
‘ঢাকার আঁধারে কালো বিড়াল’ বা ঢাকার ডার্কে ব্ল্যাক ক্যাট অর্থাৎ নিঃশব্দে কূটনীতিকদের চলাফেরা করতে দেখা যায়। কূটনীতিকদের নিয়ে খবরের বন্যা। ঢাকার কূটনীতির খবরে সয়লাব ঢাকার রাজনীতি। এই রাজনীতি কারও জন্য শঙ্কার, আবার কারও জন্য সম্ভাবনার। কারও জন্য শনির, আবার কারও জন্য মঙ্গলের। এই খবরটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা, তা নিয়ে ঝানু কোনো জ্যোতিষীর পক্ষেও কোনো আভাস দেওয়া সম্ভব নয়। আবার অন্য একটি সংবাদে বলা হয়েছে, ঈদের পর শুধু রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণের পাশাপাশি কূটনীতিকদের ব্যস্ততাও দেখতে পাওয়া যাবে। আমেরিকা, চীন, ভারতের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে দৌড়াদৌড়ি বেড়ে গেছে নির্বাচন সামনে রেখে। আবার আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রতিনিধিদলকেও আশীর্বাদ পেতে বিভিন্ন দেশে সফর করতে দেখা যাচ্ছে।
একটি সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে ঠিকানার ২৮ জুন সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় নিচের দিকে। শিরোনাম : ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই পরাশক্তির বৈরী অবস্থান’। খবরটির শুরুতেই বলা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বড় রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ইস্যু হিসেবে এসেছে।’ বলা হচ্ছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ও ভারতের পরস্পরবিরোধী অবস্থান অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে।’

আবার একই সংবাদে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনা করেছে চীন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাহেঁচড়া নতুন কোনো বিষয় নয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বড় মিত্র এবং উন্নয়ন সহযোগী হচ্ছে চীন। ভারত তো প্রাকৃতিকভাবেই বাংলাদেশের বন্ধু। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শুধু নিকট প্রতিবেশী হিসেবেই নয়, এ সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এই ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্য দিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। দূরবর্তী অবস্থানে আরও আছে রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সৌদি আরব। বাংলাদেশকে নিয়ে এদের আগ্রহও হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।

এই অবস্থার মধ্যে থেকে প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাংলাদেশ যদি পরস্পর স্বার্থবিরোধী বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে ব্যর্থ হয়, তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এখানে আরও একটি প্রশ্ন সংগতভাবেই দেখা দেয়, সেই পরিস্থিতি যদি দেখা দেয়, তবে চালকের আসনে কে থাকবে? সে রকম পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের একমাত্র পথ নেতৃত্বের যোগ্যতা। নেতৃত্বের মেধা, জনগণের ওপর আস্থা রাখা, প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং দেশপ্রেমই কেবল বাংলাদেশের রক্ষাকবচ হতে পারে।

কমেন্ট বক্স