Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব



 
রাজনীতি যেখানে আছে, সেখানেই আছে ষড়যন্ত্র কথাটি। বিদ্বজ্জনেরা এমনটাই বলেন। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের অবস্থান এতটাই পাশাপাশি যে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছাড়া যেন রাজনীতির কথা উচ্চারিতই হয় না। ষড়যন্ত্র যেমন আছে দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরেও ষড়যন্ত্র হয়। রাজনীতির ময়দানে যখন বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তখন মানুষ তার পেছনে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। একটি দেশের অভ্যন্তরে যখন এমন কোনো ঘটনা ঘটে, যে ঘটনা একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের ধাক্কা দেয়, দেশের বাইরেও তোলপাড় তোলে। দীর্ঘদিন তা নিয়ে কথা হয়, মানুষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে ঘটনাটির পেছনে কার বা কী রকম ষড়যন্ত্র ছিল।

রাজনীতিতে ধ্বংসাত্মক ঘটনার পেছনে মানুষ ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। দেশের ভেতরে যখন পালাবদল ঘটে ক্ষমতার, পরাজিত দলের পক্ষে তখন অভিযোগ উত্থাপিত হয় ষড়যন্ত্রের। আসলে সত্য-মিথ্যা উভয় পক্ষেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কাজে লাগানো যায়। ৯/১১-এ যখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার বিমান হামলায় ধসে গেল বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র (নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার), ক্ষতিগ্রস্ত হলো রাজধানী ওয়াশিংটনের সিআইএর সদর দফতর, তখন বলা হলো এর পেছনে শুধু আল কায়েদা নয়, আছে জঙ্গি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ। আবার এই হামলার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকা যখন আক্রমণ করে আফগানিস্তান তছনছ করে দিল, তখন বলা হলো এও এক ষড়যন্ত্রের ফসল। বিশ্বজুড়ে নতুন করে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব ও মোড়লগিরি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এত সব ধ্বংসযজ্ঞ।

বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় বাকশাল শাসন প্রবর্তন করলেন, তখন বলা হলো তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের ষড়যন্ত্রে পা দিয়েই বঙ্গবন্ধু মুজিব এ রকম এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নইলে যিনি সারা জীবন বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা করে এসে আকস্মিক কেন একদলীয় শাসন প্রবর্তন করলেন! এ নিশ্চয় মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, এ তারই প্রভাব। আবার যখন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি বিশ্বাসঘাতক দল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁর দুই কন্যা ব্যতীত পরিবারের সব সদস্যসহ হত্যা করল; এমনকি বঙ্গবন্ধুর অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনকে পর্যন্ত হত্যা করল, তখনো সেই হত্যাযজ্ঞকে গভীর ষড়যন্ত্রের ফসল বলে দেশে ও দেশের বাইরে হইচই পড়ে গেল। বলা হলো পাকিস্তানি চরদের ষড়যন্ত্রে একাত্তরের প্রতিশোধ গ্রহণ করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত। এরপর বাংলাদেশে যত রকম নাশকতা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে, সবই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল।

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল ইয়েলেৎসেন ও গর্বাচেভের চক্রান্তের ফলে। সে এমন এক ষড়যন্ত্র, যে ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে গেল। বিশ্বটা এক মেরুর বিশ্বে পরিণত হলো। ষড়যন্ত্র কেউই ভালো চোখে দেখে না। শব্দটি একেবারেই নেতিবাচক এবং ধ্বংসাত্মক। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন সিআইএ, কেজিবি, র, মোসাদ, আইএসআই এদের সবার কাজকেই ষড়যন্ত্র বলে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশে সামনে নির্বাচন। 

২০২৩-এর ডিসেম্বরের শেষ অথবা ২০২৪-এর জানুয়ারির প্রথম দিকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন তৎপরতা শুরু করেছে, বহির্বিশ্বেও অনেক দেশের, বিশেষ করে আমেরিকা এবং চীনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। ভারত ও রাশিয়ার সরব কোনো কার্যক্রম দেখা না গেলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তারাও বসে নেই। নীরব হলেও হিসাব-নিকাশ ঠিকই চলছে। বড়-ছোট সব দলের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে’। আর এই উচ্চারণে সাধারণ জনগণ, যারা সাত-পাঁচে নেই, শুধু প্রার্থনা দেশটা যেন একটু ভালো থাকে এবং মানুষ একটু স্বস্তি পায়, তাদের বুকে ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা ‘ঘর পোড়া গরুর মতো’, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই শিউরে ওঠে। অনেকে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করছে।

নির্বাচনোত্তরকালে বিজিত এবং পরাজিত সবাই বলে চিরচেনা সেই একই কথা। বিজয়ীরা বলবে গণতন্ত্র ও জনগণের জয় হয়েছে। হেরে যাওয়া দল বলবে জনগণের জয় লুট করে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রেরই জয় হলো! এবার মানুষ কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছে, দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে জনগণ ও গণতন্ত্র ব্যতীত আর কেউ যেন জয়ী না হয়।

কমেন্ট বক্স