Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

আশ্রয়প্রার্থীদের ওয়ার্ক পারমিট

আশ্রয়প্রার্থীদের ওয়ার্ক পারমিট



 
যারা আশ্রয়হীন, নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার, জোরপূর্বক দেশ থেকে বিতাড়িত, যৌবনে যাদের সব আশার আলো নিভে গেছে, ভুলে গেছে স্বপ্ন দেখা, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। আশার বাতি নিয়ে হাতছানি দিয়ে থাকে। আর পৃথিবীর চারদিক থেকে সেই আশাহীন মানুষ ছুটে আসে যুক্তরাষ্ট্রে। দু’বাহু বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বুকে নিয়ে আশ্রয় দেয়। দিগি¦দিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে আসার পথে কত মানুষ যে বনে-জঙ্গলে-সাগরে প্রাণ হারায়, তার শুমারি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সব স্টেটের মধ্যে নিউইয়র্ক আবার আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে সবার সেরা। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের পর নির্বাহী আদেশে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমিগ্র্যান্টবিরোধী যত আদেশ দিয়েছিলেন, বাইডেন নির্বাচিত হয়ে সেসব আদেশ তার নির্বাহী আদেশে বাতিল করে দেন। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীরা স্রোতের মতো আসতে থাকে। এবং আমেরিকার মেক্সিকোসহ দক্ষিণ সীমান্তের রাজ্যগুলোতে জড়ো হতে থাকে। সেসব সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীরা অভিবাসী-বান্ধব রাজ্য নিউইয়র্ককে আরও অধিক নিরাপদ ভেবে নিউইয়র্ককে বেছে নেওয়ায় দক্ষিণের সীমান্ত রাজ্যগুলো থেকে প্রায় প্রতিদিন ইমিগ্র্যান্ট-প্রত্যাশীরা নিউইয়র্কে আসতে থাকে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্কে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত কাজের অনুমোদন (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অতি সম্প্রতি মেয়র অ্যাডামসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর হোকুল বলেছেন, ‘তারা কাজ করতে আগ্রহী। তারা কাজ করতে চায়। তারা এখানে কাজ এবং একটি নতুন ভবিষ্যতের সন্ধানে এসেছে। তারা আমাদের অর্থনীতি এবং আমাদের কমিউনিটির অংশ হয়ে উঠতে পারে। তারা আমাদের বিভিন্ন স্থাপনায় প্রশিক্ষণ শুরু করতে প্রস্তুত।’ হোকুল তার অতীত স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি যখন প্রথম এখানে আসি, তখন এলিস দ্বীপের স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমার ডায়েরিতে নোট করেছিলাম...। আমার কিশোর দাদা-দাদি এক শতাব্দী আগে আয়ারল্যান্ডের বড় দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে ভাগ্যান্বেষণে এখানে এসেছিলেন। তাদের সম্ভবত আটটি শিশু নিয়ে তারা একটি ছোট বাসায় গাদাগাদি করে থাকতেন। এরপর ওই শিশুদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়ী নেতা, কেউ স্কুল সুপারিনটেনডেন্ট বা শিক্ষাবিদ এবং এমনকি নাতনি গভর্নরও হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন বদলায়, তারা পরিবর্তন হয়। এটাই নিউইয়র্কের গল্প।’ মেয়র এরিক অ্যাডামস গত দুই সপ্তাহে নিউইয়র্কে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা তুলে ধরেন। তারা বাস, বিমানসহ সম্ভাব্য সব রকম পরিবহন ব্যবহার করে এসেছে। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে নিউইয়র্কে এসেছে, আশ্রয়প্রার্থীরা যদি কাজের অনুমতি না পায়, কাজ করতে যদি না পারে, তাহলে সেটা হবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা।

আসলে গভর্নর এবং মেয়র তাদের অতীত ইতিহাস ভুলে যাননি। ভুলে যাননি বলেই তাদের অবস্থান আশ্রয়প্রার্থীদের পক্ষে। আমেরিকার উত্থান, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, সামরিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে অধিক শক্তিশালী দেশ হতে পেরেছে বিদেশি শ্রমিক, দাসদের রক্ত, ঘাম, জীবনের দামে। তারা চরম নিগৃহীত হয়েছে। অমানবিক জীবনযাপন করতে হয়েছে। শ্বেত প্রভুদের চাবুকের শপাং শপাং আঘাতে পিঠে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেছে, এক ফোঁটা পানি পায়নি। আমেরিকার উন্নতির প্রতি পদক্ষেপে রয়েছে ইমিগ্র্যান্টদের রক্ত, ঘাম, শ্রম। তাই তো আমেরিকাকে বলা হয় ‘ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব দেশ’।

গভর্নর হোকুল এবং মেয়র অ্যাডামস তাদের অতীত বিস্মৃত হননি বলেই তাদের হৃদয়ে ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি ভালোবাসার এখনো ফল্গুধারা। আমেরিকার সংবিধান, আমেরিকার শাসনতন্ত্র, আমেরিকার সর্বস্তরে অভিবাসীদের ত্যাগের স্বীকৃতি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী আমেরিকার পরিচয় ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব দেশ। তাইতো গভর্নর হোকুল এবং মেয়র অ্যাডামস ইমিগ্র্যান্টদের কাজের অনুমতি দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা ইতিহাসের ধারা মেনেই করেছেন। আমাদের প্রার্থনা হোক ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি আমেরিকার বোধ ও চেতনা সব সময় যেন সমুজ্জ্বল থাকে।

কমেন্ট বক্স