Thikana News
২০ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

কারা বেশি ট্যাক্স- সুবিধা পায়?

কারা বেশি ট্যাক্স- সুবিধা পায়?



 
একটি গোছানো বা পূর্ণাঙ্গ ব্যবসা শুরু করতে চাইলে এর সঙ্গে কিছু আইনগত ও ট্যাক্সজনিত বিষয় জড়িত থাকে। তাই কোন ধরনের  প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশন সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স সুবিধা দাবি করতে পারে, তা জেনে নিলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী উপকৃত হতে পারেন।  এ বিষয়ে সিপিএ জাকির চৌধুরী বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
জাকির সিপিএ, পিএলএলসির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জাকির চৌধুরী বলেন, নির্মাণ ব্যবসা থেকে শুরু করে মিষ্টির দোকান পর্যন্ত যেকোনো ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসাকে একটি আইনি সত্তা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এখানে কৌশলগতভাবে নির্বাচিত করপোরেশনের প্রকারগুলো ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত এবং কোম্পানির সম্পদের সুরক্ষা দেয়। ট্যাক্স সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে কোন বিষয়গুলো আরও ভালো কার্যকর সুবিধা প্রদান করে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে অবশ্যই জানতে হবে।
জাকির চৌধুরী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানের প্রকারভেদ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিসেবা (IRS) কর প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বা করপোরেশনগুলোকে বিভিন্ন প্রকারে শ্রেণিবদ্ধ করে। এই শ্রেণিবিভাগ কোনো কোম্পানির দায় সংজ্ঞায়িত করে। এখানে করপোরেশনের শ্রেণিবিভাগ হলো : ১. সি (C) প্রতিষ্ঠান, ২. এস (C) প্রতিষ্ঠান, ৩. সীমিত দায়বদ্ধতা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান (LLP), ৪. সীমিত দায়বদ্ধতা ভিত্তিক অংশীদারিত্ব (LLC), ৫. প্রফেশনাল করপোরেশন (PC) ও ৬. প্রফেশনাল লিমিটেড দায়বদ্ধ কোম্পানি (PLLC)। এসব কঠিন বোধগম্য বিষয়গুলোকে আরো সহজে উপস্থাপন করেছেন আমাদের বিশেষজ্ঞরা।
সি প্রতিষ্ঠান (C-Corp) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : এ বিষয়ে সিপিএ জাকির চৌধুরী বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কোডের সি উপ-অধ্যায় সি (C) প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। সি প্রতিষ্ঠান গঠন করা সহজ এবং বিদেশি বা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ওপর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
সি (C) প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং কর্মচারীদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা সীমিত থাকে । তাই এ ক্ষেত্রে আইনি ব্যবসায়িক বাধ্যবাধকতা কখনোই ব্যক্তিগত ঋণের বাধ্যবাধকতা বা বাধা হয়ে ওঠে না।
অন্যদিকে এখানে আরেকটি বিশাল টার্ন অফ বা সুযোগ রয়েছে, যা হছে ডাবল ট্যাক্সেশন। এর মাধ্যমে কেউ কম করপোরেট ট্যাক্স হারে কোম্পানিতে পুনরায় প্রফিট/লাভ বিনিয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রেই ডাবল ট্যাক্সেশনের বিষয়টি বারবার চলে আসে।
এ ছাড়া ব্যবসার মালিকরা এমন রেঞ্জে বেতন নিতে পারেন, যার ফলে করপোরেট হারে কর দেওয়া লাগে না। তা ছাড়া চিকিৎসা প্রিমিয়াম, প্রান্তিক সুবিধা এবং দাতব্য অবদানও ট্যাক্স কর্তনের সুবিধা পেয়ে থাকে। আর তাই সি-কর্প দ্বৈত করারোপের বিষয়। সুতরাং করপোরেশন এবং মালিক উভয়ই একই সময়ে কর প্রদান করে থাকে।
এস (S) প্রতিষ্ঠান (S-Corp) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কোডের এস (S) উপ-অধ্যায় এস প্রতিষ্ঠানগুলো বা এস করপোরেশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এস-করপোরেশন হলো একটি ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যার সর্বোচ্চ ১০০ জন শেয়ারহোল্ডার থাকতে পারে। এস প্রতিষ্ঠানের স্ট্যাটাস ব্যবসায় একটি অংশীদারিত্বের করমুক্ত সুবিধাসহ বিভিন্ন করপোরেট সুবিধার অনুমতি দেয়। প্রাথমিক স্তরে কোনো ফেডারেল ট্যাক্স না দেওয়াই হলো সবচেয়ে বড় ট্যাক্স সুবিধা। এসব সুবিধা একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অগ্রসরে অনবদ্য ভূমিকা রাখে।
(S) এস প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির জন্য কাজ করতে এবং বেতন উপার্জন করতে পারে। তারা করমুক্ত লভ্যাংশ পেতে পারে, যদি তাদের ডিস্ট্রিবিউশন তাদের স্টকের ভিত্তিতে অপ্রতুল থাকে। এস প্রতিষ্ঠান (S-Corp) ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর কোনো সুরক্ষা প্রদান করে না। করের হার প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ের ওপর নির্ভর করে।
এলএলসি (LLC) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : একটি সীমিত দায়বদ্ধতাভিত্তিক কোম্পানি (LLC) তার দায়বদ্ধতার জন্য ব্যক্তির সম্পদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। স্টেটজুড়ে, এলএলসি গঠনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। কারণ স্টেটভেদে এলএলসি গঠনের নীতিমালা ভিন্ন হতে পারে। যেমন নিউইয়র্কে একটি সীমিত দায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান (LLC) গঠিত হওয়ার পর মালিককে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে টানা ছয় সপ্তাহ যাবৎ এ বিষয়ে তথ্যাদি/বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হয়। এতে বেশ ভালো অর্থ ব্যয় করতে হয়। এটা অনেকটা ব্যয়েরই খাত। আবার এলএলসি মালিকেরা এলএলসি থেকে তাদের ব্যক্তিগত আয়ের ওপর ট্যাক্স পাবেন। এলএলসির মালিকের মৃত্যুর পর তিনি কেবল এই ট্যাক্স দায় থেকে মুক্ত হবেন এবং তখন এলএলসিও থাকবে না।
এলএলপি (LLP) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : এ বিষয়ে জাকির চৌধুরী বলেন, একটি সীমিত দায়বদ্ধতাভিত্তিক অংশীদারিত্ব এলএলপির একাধিক সদস্য থাকে। এই নমনীয় ট্যাক্স সত্তা অংশীদারদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। এর মাধ্যমে অংশীদারদের পরস্পরের প্রতি অবদান, বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়। শেয়ারকৃত অফিস এবং এর জায়গা, কর্মচারী ইত্যাদি লাভের অংশ বাড়িয়ে দেয় এবং করের হার কমিয়ে দেয়। এখানেও এলএলপির চাহিদা এবং বিষয়াদি রাজ্যজুড়ে পরিবর্তিত হয়। ব্যর্থ অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে পাওনাদাররা অংশীদারের ব্যক্তিগত সম্পদ বা আয়ের পেছনে জোর জবরদস্তি করতে পারে না। এলএলপি সদস্যদের এলএলসি থেকে তাদের ব্যক্তিগত আয়ের ওপর কর দিতে হয়।
পিসি (PC) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : একটি পেশাদার করপোরেশন (PC) কঠোরভাবে পেশাদারদের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের সমন্বয়ে গঠিত। ডাক্তার, আইনজীবী, স্থপতি, হিসাবরক্ষক, প্রকৌশলী, মনোবিজ্ঞানী এটি শুরু করতে পারেন। পেশাদার করপোরেশনগুলো রাজ্যের ব্যবস্থাপনার বাইরে নয়। রাজ্যগুলো পেশাদার করপোরেশনকে নানা সুবিধা প্রদান করে। এ ধরনের করপোরেশন রাজ্য বা স্টেট কর্তৃক প্রণীত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। এরই মাধ্যমে পেশাদারদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতাও কমে যায়। পিসিগুলোকেও সাধারণ ও নিয়মিত করপোরেশনের মতো ২১ শতাংশ ফ্ল্যাট করের আওতায় পড়তে হয়।
জাকির চৌধুরী বলেন, পেশাদার করপোরেশনের উপরিউক্ত সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার গুরুতর পরিণতি ঘটায়। এটি অভিযুক্ত পেশাদারের ব্যক্তিগত দায়কে আকাশচুম্বী করে। কাজেই পেশাদার করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধার কোনো অপব্যবহার করা যাবে না।
পিএলএলসি (PLLC) এবং এর ট্যাক্স সুবিধা : লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেশাদাররা একটি পেশাদার সীমিত দায়বদ্ধ কোম্পানি (PLLC) গঠন করতে পারেন। আবার সার্টিফায়েড অথবা প্রত্যয়িত আইনজীবী, ডাক্তার, স্থপতি, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পেশাদারকে পিএলএলসি চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর স্বতন্ত্র সদস্যরা কর প্রদান করেন।
জাকির চৌধুরী আরও বলেন, পিএলএলসি ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক সত্তা থেকে আলাদা করে। সুতরাং এর মাধ্যমে ব্যক্তি করপোরেশনের ঋণ এবং মামলার জন্য ব্যক্তিগত দায় থেকে মুক্ত হন। তা সত্ত্বেও পিএলএলসি প্রায়ই কোনো ব্যবসায়ীর অসদাচরণ থেকে তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। অতএব, কেউ পিএলএলসি গঠন করলেও তিনি অসদাচরণ বিমা বহন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
 
কমেন্ট বক্স