Thikana News
২০ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উভয়সংকটে আ.লীগ

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উভয়সংকটে আ.লীগ



 
চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যার প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। জামানতের টাকা বাড়িয়ে এবং স্বতন্ত্রদের প্রার্থিতা সহজ করে বিধি সংশোধনের পর ২১ মার্চ কমিশন সভায় উপজেলা নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। ৮ মে প্রথম ধাপের পর ২৩ ও ২৯ মে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হবে সাধারণ নির্বাচন।
কমিশন সভা শেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ভোট হবে ৮ মে। প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম), বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এই ভোট চলবে।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা গিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে পড়েছে উভয়সংকটে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ কমাতে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার অবস্থানেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ কৌশলের মাঝেও গত ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছে। কোনো কোনো জায়গায় সংঘাতও হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা আশঙ্কা করছেন, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেতে পারে। দলে বিভক্তি, হানাহানির চরম প্রকাশ ঘটতে পারে। আবার নির্বাচন উৎসবমুখর করা এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি। এর ফলে আওয়ামী লীগ এক উভয়সংকট পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে ভোটার উপস্থিতি দেখাতে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তৃণমূলে তৈরি হয়েছে বিভক্তি এবং অনেক জায়গায় সংসদ সদস্য ও তাদের পাল্টা পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। সেই বিভেদের জেরে এখনো কোনো কোনো জায়গায় সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নে দলের কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ না রাখার কৌশলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে।
উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিভক্তি দেখা যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভক্তির ধারাবাহিকতা হিসেবেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টির বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী অর্থাৎ যারা আওয়ামী লীগের নেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন, এ রকম ৫৮ জন বিজয়ী হয়েছেন। এখন যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন, তারা যেমন উপজেলা নির্বাচনে তাদের শক্তি পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন, তেমনি যারা দলীয় প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারাও তাদের অবস্থানকে সংহত করার জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থী দিচ্ছেন। যার ফলে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই একটা শঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করছে-এ ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দলটি।
দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রতিটি উপজেলায় ক্ষমতাসীনদের মধ্য থেকেই দুই থেকে তিনজন, কোথাও আরও বেশি প্রার্থী হবেন। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে দলের জনপ্রিয় সম্ভাবনাময় নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখাও বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সুযোগ থাকায় অনেক উপজেলায়ই বিএনপির স্থানীয় নেতারা প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া উপজেলা-ব্যবস্থার প্রবর্তনকারী এরশাদের দল জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রতিটি উপজেলায়ই তারা প্রার্থী দেবে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের বহু প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার শঙ্কায় আছেন। কারণ নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি বা জামায়াত লাভবান হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারাই মনে করছেন। অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে, সে ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাব কী হবে, সেটাও আওয়ামী লীগের জন্য ভাবার বিষয়। তবে আপাতত দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়াটাই আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, স্বতন্ত্র কৌশলের কারণে জাতীয় নির্বাচনেও সংঘাত সেভাবে হয়নি বলে তারা মনে করেন। এখন উপজেলা নির্বাচনেও শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের সংঘাত হবে না বলে তারা বিশ্বাস করেন। দলটির পক্ষ থেকে এও বলা হচ্ছে, তৃণমূলে যারা সংঘাত-সহিংসতা করবে, তারা যে পর্যায়ের নেতাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দেবে।
কমেন্ট বক্স