১১ মার্চ সোমবার থেকে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সারা বছর এই এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করেন। সারা দিন রোজা শেষে মুসল্লিরা ইফতার করেন। এজন্য বেছে নেন নানারকম খাবার। কেউ বাসায় ইফতার করেন। কেউ ইফতার করে কর্মস্থলে, অথবা যাত্রাপথে। তাদের বেশিরভাগেরই পছন্দ রেস্টুরেন্টের তৈরি ইফতার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রমজানের শুরুতে ইফতারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ১১ মার্চ সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্য রকম পরিবেশ ছিল নিউইয়র্কজুড়ে। রেস্টুরেন্টগুলোতে দিনের বেলা তেমন বেচাকেনা না হলেও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইফতারের জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল। দোকানগুলোতেও নানা পদের মুখরোচক ইফতার সামগ্রী দিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করেন বিক্রেতারা। দেখা গেছে, বাসায় নানা রকমের ইফতার সামগ্রী তৈরি হলেও অনেকেই দোকান থেকে ইফতারির বিভিন্ন পদ কিনে নিচ্ছেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, জামাইকা, জ্যাকসন হাইটস ও ম্যানহাটনের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিকাল ৪টা থেকেই ইফতার সামগ্রীর দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। প্রথম দিনের ইফতারিতে মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিলে খেজুরের গুঁড়ের গরম জিলাপি। এছাড়াও গরু-মুরগির কাবাব, হালিম, চিনির জিলাপি, সমুচা, পিঁয়াজু, সবজির পাকোরা, বেগুনি, ছোলা, আলু-ডিম চপ, সিঙ্গারা, শরবত, খোরমা, মিষ্টি, পুরি, বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রায়েড রাইস, ভেজিটেবল ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেনসহ বিভিন্ন রকমের ইফতার সামগ্রী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
খলিল বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী ও বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী খলিলুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রবাসী রোজাদারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ইফতারি সরবরাহ করছি। রমজান মাসে রোজাদারদের উন্নত সেবা দিতে আমাদের চারটি শাখায় জনবল বৃদ্ধি করেছি। ইফতারে শুধু মুখরোচক খাবারই নয়, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেবার প্রচেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমরা ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ করেছি। দু’ধরনের ইফতার বক্সের দাম একটি ১১ এবং অন্যটি ১৩ ডলার মূল্য নির্ধারণ করেছি। এ মূল্য ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে বলে জানান খলিল।
ইসলামিক কাউন্সিল অব আমেরিকা : নিউইয়র্কে ইসলামিক কাউন্সিল অব আমেরিকা ইনক্ মদিনা মসজিদের উদ্যোগে পবিত্র রমজানের ফজিলত-গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে গত ৭ মার্চ জ্যাকসন হাইটসের মামা’স পার্টি হলে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে মাহে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত বর্ণনা করেন। রোজা পালনের নিয়ম-কানুনসহ মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় করনীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন ইসলামী স্কলারগণ। তারা বলেন, গুনাহ মাফের সর্বোত্তোম মাস হচ্ছে রমজান।
মসজিদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং আসলাম সিকদারের পরিপালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা হাফেজ আহমদুল হক, মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল, মাওলানা সুন্নাতুর রহমান, হাফিজ জুলকিফ চৌধুরী প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ও মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনায়েত হুসেন জালাল।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, পবিত্র রমজান মাস অন্যান্য মাস থেকে মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। এ মাসেই মহান আল্লাহপাক পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। ইহকালীন ও পরকালীন সবকিছুরই দিক নির্দেশনা রয়েছে এ পবিত্র কোরআনে।
তারা বলেন, প্রকৃত অর্থে রমজান মুসলমানের জন্য আল্ল¬াহ তায়ালার নৈকট্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। গুনাহ মাফের জন্য রমজান মাস হচ্ছে সর্বোত্তম মাস। রমজান মাসেই পবিত্র শবেকদর নামে মহা মহিমান্বিত এক রজনী রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। শবেকদর রাত মুমিন মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির। এ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি বরকত ও রহমত নাজিল করেন। যারা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, গুনাহ মাফ চান, আল্লাহ পাক তাদেরকে মাফ করে দেন।
মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ব মানবতার জন্য আল্লাহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা হাফেজ আহমদুল হক। বিপুল সংখ্যক মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন সেমিনারে।
সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনায়েত হুসেন জালাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।