যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে হতাশা বিরাজ করছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। কিন্তু একটানা চার বার ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এই হতাশা? উত্তর খুবই সোজা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এতদিন ‘দুধের মাছি’তে পরিপূর্ণ ছিল। দুধ খাওয়া শেষ, তাই মাছি উড়ে গেছে।’
আসলে নানান কারণে এবার কেন্দ্রে পাত্তা পাননি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা। দুর দুর করে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে মনে দুঃখে এক বুক হতাশা নিয়ে তারা হয়ে পড়েছেন নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে যারা ব্যাংক-বীমা নিয়ে কালো টাকার মালিক বনে গেছেন, ধরা খেয়ে মুখোশ খুলে গেছে, তারা আর রিস্ক না নিয়ে দুরে দূরে থাকছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সক্রিয় কোনো নেতা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন এমন নজির নেই। কিন্তু ব্যাংক-বীমার মালিক হয়েছেন। পরে অর্থ লোপাটের অভিযোগে ধরা খেয়ে জেলে গেছেন এমন ঘটনা বিদ্যমান। আর এসব বিষয় জানার পর কেন্দ্রের কাছ থেকে ছিটকে পড়েছেন একশ্রেণির সুবিধাভোগী নেতা। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে ত্যাগী নেতাদের কেন মূল্যায়ন হচ্ছে না? মূল্যায়ন যে হচ্ছে না তা এবার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন গেল জাতীয় র্সংসদ নির্বাচনে। কাউকেই পাত্তা দেয়নি কেন্দ্র। একজন প্রবাসীও নির্বাচনে টিকেট পাননি। এক বুক হতাশা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ফিরে এসেছেন। হয়ে গেছেন একেবারেই নিরব। কোনো কর্মসূচিতে তাদের দেখা মিলছে না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে। তিনি এক বুক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এতদিন ভুল করেছি। এই রাজনীতি করার কোনো মানে হয় না। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতি করলেও ভালো হতো।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনে জননেত্রী যখন কারাগারে, তার মুক্তির জন্য আমরা রাজপথে ছিলাম। দেশে গিয়ে আমাদের অনেকে কারাবরণ করেছেন। কিন্তু কাউকেই মূল্যায়ন করা হয়নি। এজন্য আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আমরা কিছু পাওয়ায় আশায় সেদিন রাজপথে আন্দোলনে নেমেছিলাম না। কিন্তু যখন দেখি- যারা জননেত্রীর কারাগারের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ধরে শুধু ছবি তুলেছেন, তাদের প্রত্যেকেই আজ মন্ত্রী-এমপি। প্রবাসী হিসাবে আমাদের শুধু অবমূল্যায়ন নয়, আমাদের চরম অবহেলা করা হয়েছে।’
ওই নেতা বলেন, ‘আমরা সংসদে প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার নিজেকে প্রবাসীবাবন্ধব দাবি করে। আবার প্রবাসীদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হয়। আসলে এটা শুধু কথায়, কাজে নয়। প্রবাসীদের হাজরো সমস্যা রয়েছে। সংসদে তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। আর এজন্য সংসদে প্রবাসী কোটা রাখা এখন সময়ের দাবি।
চলতি বছরের শুরুতে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি। এমনকী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ছিল না এসব সংগঠনের। অথছ আগে একের পর এক কর্মসূচি পালিত হতো যুক্তরাষ্ট্রে।
এর কারণ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, হতাশা পেয়ে বসেছে নেতা-কর্মীদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নয়, অনেক অঙ্গ সংগঠন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তারাও হতাশায় ডুবে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন নেতা-কমীদের মূল্যায়ন। প্রয়োজনে ১৩ বছর ধরে ঝুলে থাকা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি দিয়ে চাঙ্গা করা যেতে পারে, এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।