Thikana News
২৯ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

দেশে ফিরবেন ৪ অক্টোবর : কর্মব্যস্ততায় শেষ প্রধানমন্ত্রীর সফর 

দেশে ফিরবেন ৪ অক্টোবর : কর্মব্যস্ততায় শেষ প্রধানমন্ত্রীর সফর 



 
অসম্ভব কর্মব্যস্ততায় শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফর। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর  রোববার নিউইয়র্কে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর সোয়া একটায় তিনি সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার তিনি নিউইয়র্কে তাঁর আবাসস্থল দ্য লোট প্যালেস থেকে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
১৭ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূটিতে অংশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার একদিনেই তিনি সর্বোচ্চ সময় অতিবাহিত করেন বড় তিনটি কর্মসূচিতে। এরমধ্যে ছিল- জাতিসংঘে ভাষণ, মিট দ্য প্রেস এবং নাগরিক সংবর্ধনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাজসিক ভোজসভায় যোগ দেন। এই কর্মসূচির বাইরে আগে ও পরের দিনগুলোতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। 
প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন। সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন। আগামী ৪ অক্টোবর বুধবার তাঁর ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী-উজরা জেয়া বৈঠক :  ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উজরা জেয়া জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা।’
বৈঠকে তারা বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ, তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোন ভবিষ্যত অনুভব করছে না।
বিবিএনজে’তে স্বাক্ষর করলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিক মাছ ধরা এবং অন্যান্য মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভঙ্গুর সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির হাত থেকে বিশ্বের মহাসাগর এবং নদীগুলোকে রক্ষায় মেরিন বায়োডাইভারসিটি অব এরিয়াজ বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
জেনারেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং এর ট্রিটি ইভেন্ট এলাকার গ্রাউন্ড ফ্লোরে ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার নিউইয়র্কে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’র অধীনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 
চুক্তিতে সাধারণ ঐতিহ্য হিসাবে বর্ণিত জেনেটিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ’ বিষয়ে এসডিজি-৩ সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এসডিজি-৩’র অন্তর্ভুক্ত এসডিজিগুলো কার্যকরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এসব কথা বলেন।
জলবায়ু সংকট এড়াতে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোকে সৎ হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন সংকট এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারীত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোসক চেম্বারে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান: ত্বরান্বিত উচ্চাকাক্সক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাক্সক্ষা শীর্ষক সম্মেলনের উচ্চ স্তরের বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনে এই মন্তব্য করেন। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে অভিযোজন এবং আগাম সতর্কতায় বিনিয়োগ করা সঠিক। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদানের জন্য এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাবে।’ 
উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার বলেছেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্বান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে। তিনি বলেন. “আমাদের কর্মকান্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।”     
২০ সেপ্টেম্বর বুধবার তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে যাতে সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতা হিসাবে, আমাদের তাদের সাথে জড়িত থাকতে হবে এবং তাদের এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশ আলাদা এবং তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। তিনি যোগ করেন, তবে, সবাই যেহেতু ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণ করেছে সেহেতু তাদের লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত।
মহামারী প্রতিরোধে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে মহামারী প্রতিরোধের অংশ হিসেবে একটি বৈশ্বিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের সকলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে হাজির হয়েছে। আমরা সারা বিশ্বে অনেককে হারিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে মানুষের হস্তক্ষেপের জন্য প্রকৃতির নিজস্ব সীমা রয়েছে। আমরা বিশ্ব সংহতির অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতাও পেয়েছি। আমরা স্বীকার করেছি যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই।’ তিনি এখানে জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ৭৮তম ইউএনজিএ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই উত্তম চর্চা বাড়িয়ে এবং অতীতের ভুলগুলো এড়িয়ে আমাদের সম্মিলিত শিক্ষা নিতে হবে। সমতা ও সংহতি অবশ্যই আমাদের প্রচেষ্টার প্রাণভ্রমরা তৈরি করবে।’
মহামারী প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেছেন। পাঁচটির মধ্যে তিনটি অগ্রাধিকার হলো- উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য রেয়াতযোগ্য আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, মহামারী নজরদারি, প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে মোকাবেলার জন্য সম্পদ ও দক্ষতা একত্রিত করা ; সকলের জন্য ভ্যাকসিনসহ মানসম্পন্ন, সাশ্রয়ী ও কার্যকর মহামারী পণ্যগুলোর ন্যায়সঙ্গত ও অবাধ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
অবশিষ্ট দুটি অগ্রাধিকার হলো- প্রযুক্তির প্রাপ্যতা ও বাস্তব জ্ঞানের মাধ্যমে মহামারী পণ্যগুলোর উৎপাদন বৈচিত্রকরণ ; এবং ডব্লিউএইচও’র নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে প্রাপ্যতা ও সুবিধা ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করা।
কমেন্ট বক্স