প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ নিরাপদে লেনদেন করতে একজন প্রবাসী আমেরিকার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। কিন্তু ব্যাংকে রাখা সেই অর্থ নানান কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে স্ক্যামাররা। তাদের রুখতে নতুন কৌশল নিয়েছে বাণিজ্যিক বাংকগুলো। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে সন্দেহভাজন লেনদেন আটকে দিচ্ছে তারা। প্রয়োজনে ভেরিফিকেশনের জন্য অর্থ ছাড়ে দেরী করছে বিভিন্ন ব্যাংক। এতে সাময়িক দুর্ভোগ হলেও বৃহৎ স্বার্থে গ্রাহকেরা তা মেনে নিচ্ছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, তাৎক্ষণিক নগদের মতো ট্রান্সফার সুবিধা থাকায় প্রতারকদের টার্গেট এখন জেল অ্যাপ। একবার অর্থ পাঠালে তা সাধারণত ফেরতযোগ্য নয়। সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ছদ্মবেশ (ইমপার্সোনেশন), ফিশিং ও নকল কেনাবেচার মাধ্যমে প্রতারকরা ব্যবহারকারীদের নিজ হাতে পেমেন্ট অনুমোদন করাতে বাধ্য করে। যেহেতু এইসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগতভাবে পেমেন্ট ‘অথরাইজ’ করতে হয়, তাই ব্যাংক আইনগতভাবে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য নয়।
জানা গেছে, সাধারণত ব্যাংক থেকে পাঠানো টেক্সটের ফরম্যাটে নকল ফ্রড অ্যালার্ট টেক্সট আসে গ্রাহকের কাছে। এই টেক্সটের জবাব দিলে স্পুফড (নকল) নম্বর থেকে ফোন আসে। তারা বলে ‘ফ্রড রিভার্স’ করতে নিজের নম্বরে অর্থ পাঠাতে। আসলে প্রতারক গ্রাহকের দেওয়া ওয়ান-টাইপ পাসকোড (ওটিপি) দিয়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে গ্রাহকের জেল প্রোফাইলে লিংক করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
অনেক ক্ষেত্রে প্রতারক নিজেকে ব্যাংক কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা বা চেনা বন্ধু বা আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করে ‘অ্যাকাউন্ট হ্যাকড’, ‘তড়িঘড়ি টাকা দরকার’ ইত্যাদি বলে অর্থ চান। এ ধরনের অর্থ জেল অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হলে ব্যাংক অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে।
‘ভুল করে টাকা পাঠানো’ প্রতারণা শুরু হয়েছে ইদানিং। প্রথমে গ্রাহককে কিছু অর্থ পাঠায় প্রতারকরা। এরপর কল করে বলে ভুল হয়েছে। এরপর অর্থ ‘ফিরিয়ে দিতে’ বলে। কিন্তু তাদের পাঠানো অর্থ চুরি করা কার্ড/হ্যাকড অ্যাকাউন্ট থেকে আসে। পরে মূল ট্রান্সফার রিভার্স হয়ে যায়, কিন্তু গ্রাহক যে অথর্ ফেরত পাঠালেন সেটাই ক্ষতি।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস অধবা ক্রেগলিস্টে পণ্য কিনতে গিয়ে বিক্রেতা জেলে অগ্রিম অর্থ চান। কিন্তু পণ্য আর আসে না। আবার বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে, ক্রেতা নকল জেল কনফার্মেশন দেখিয়ে ‘ভুলে বেশি পাঠিয়েছি’ বলে ফেরত চাইতে পারে। আসল অর্থ কখনোই পৌঁছায় না।
জেল বা গ্রাহকের ব্যাংকের নামে ইমেইল বা এসএমএস আসে, যাতে ভুয়া লিংক থাকে। সেখানে ক্লিক করলে লগইন তথ্য, ওটিপি ইত্যাদি চুরি হয়।
শুধু পরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে অর্থ পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কারণ জেল অ্যপসে অথরাইজড পেমেন্ট সাধারণত ফেরত যায় না। ‘ব্যাংক কর্মীর’ নির্দেশে নিজেকেও অর্থ না পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রকৃত ব্যাংক কখনোই ফ্রড থামাতে এভাবে বলবে না।
ব্যাংকের পরামর্শ হলো- জরুরি অনুরোধ এলে যাচাই করতে হবে। অস্বাভাবিক বা জরুরি অর্থ চাইলে আলাদা চ্যানেলে কল বা টেক্সট করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যে কোনো অপ্রত্যাশিত বার্তায় সাড়া দেওয়া যাবে না। অজানা রিকোয়েস্ট বা ফ্রড অ্যালার্ট এলে লিংকে ক্লিক না করে প্রয়োজনে কার্ডের পেছনে অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করা উচিত। রিসিপিয়েন্ট তথ্য ডাবলচেক করুন। ইমেইল বা ইউএস মোবাইল নম্বরে টাইপো হলে অর্থ ভুল জায়গায় যেতে পারে, যা ফিরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এছাড়া অ্যাকাউন্ট বা অ্যাপসের নিরাপত্তা বাড়াতে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন। এতে অ্যাকাউন্ট দখল করা কঠিন হয়। কেউ প্রতারিত হলে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। ফ্রড ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট করুন। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কিছু ব্যাংক বা জেল নির্দিষ্ট ‘ইমপোস্টার স্ক্যাম’-এর ক্ষেত্রে রিফান্ড দিতে পারে।
কেউ স্ক্যামের শিকার হলে স্থানীয় প্রিসিঙ্কট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় ব্যাংক পুলিশ রিপোর্ট চাইতে পারে। স্ট্যান্ডঅ্যালোন জেল অ্যাপ ব্যবহার করলে তাদের ওয়েবসাইট বা ১-৮৪৪-৪২৮-৮৫৪২ নম্বরে জানান। ব্যাংকের অ্যাপ দিয়ে করলে আগে ব্যাংকের মাধ্যমেই রিপোর্ট করুন। ঘটনার টাইমলাইন, স্ক্রিনশট, কল বা টেক্সট লগসহ সবকিছু সাজিয়ে রাখুন। ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে শক্ত কেস দাঁড় করাতে সাহায্য করবে।
জেল দ্রুত ও সুবিধাজনক, কিন্তু দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ। সন্দেহ হলেই থামুন, যাচাই করুন, তারপরই পেমেন্ট করুন, এমনটাই বলছে ব্যাংক।