ক. আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারের অভিযোগে হজরত নুহ (আ.)-কে তাঁর গোত্রীয় জনগোষ্ঠী বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। পরম করুণাময়ের অপরিসীম রহমতে প্রাণে রক্ষা পাওয়ার পর হজরত নুহ (আ.) আল্লাহর নির্দেশে কাঠের কিস্তি তৈরি করলেন। আর জালেম জনগোষ্ঠী নুহ (আ.) নির্মিত নতুন কিস্তি মলমূত্রে ভরপুর করে ফেলল। অনন্যোপায় নুহ (আ.) আল্লাহর শরণাপন্ন হলেন। মহান আল্লাহ নুহকে (আ.) অধৈর্য না হয়ে সবরের হিতোপদেশ দিলেন। এদিকে এক অন্ধ ও বর্ষীয়ান মহিলা শেষ পর্যায়ে মলত্যাগের উদ্দেশ্যে কিস্তিতে আরোহণের পর অকস্মাৎ কিস্তির মলমূত্রের মাঝে ডুবে গেল। কায়ক্লেশে ধড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর নবতিপর অন্ধ মহিলা পুষ্পিতা যৌবনা অষ্টাদশী যুবতীতে পরিণত হলো এবং তার সারা দেহ থেকে রূপের ঔজ্জ্বল ঠিকরে পড়তে লাগল। খবরটি রাষ্ট্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের হাজার সত্যভ্রষ্ট জনতা ময়লায় টইটম্বুর কিস্তিতে ঝাঁপ দিল এবং পরিশেষে নিজেরাই গোটা কিস্তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করল এবং ময়লা পানি সারা শরীরে মেখে দৈহিক সৌন্দর্য বর্ধন করল।
খ. ইয়েমেনের সাবেক বাদশা আবরাহা পবিত্র কাবাগৃহ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বিশাল হস্তীবাহিনীসহ কাবার নিকটবর্তী স্থানে তাঁবু ফেলল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উট-বকরি ইত্যাদি আটক করল। খবর পেয়ে কাবাগৃহের তৎকালীন তত্ত্বাবধায় আবদুল মোত্তালেব আবরাহার তাঁবুতে গমন করেন এবং স্থানীয়দের পশুগুলো ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। পূর্বপরিচিতির সুবাদে আবদুল মোত্তালেবের অনুরোধে আবরাহা স্থানীয়দের পশুগুলোকে মুক্ত করে দিল এবং কাবা প্রসঙ্গে আবদুল মোত্তালেব কিছু না বলায় বিস্মিত হলো। আবহারার প্রশ্নোত্তরে আবদুল মোত্তালেব বলেছিলেন, কাবা যদি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ঘর হয়ে থাকে, আল্লাহই এটি রক্ষা করবেন। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু করার বা বলার নেই। অবশ্য পবিত্র কাবার সুরক্ষা এবং আবরাহার করুণ পরিণতির কাহিনি সুরা ফিলে তাৎপর্যমণ্ডিত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে।
৩০ লাখ শহীদের এক সাগর রক্ত, ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং সর্বস্তর ও পেশার বাঙালিদের অপরিসীম ত্যাগ স্বীকারের সোনালি ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বসাধারণের ভাগ্য নিয়ে জুয়াখেলার অশুভ সূচনা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, আমলা-কামলা-চামচা ও টাউট-বাটপারের হাত ধরে। আমুর লবণ কেলেঙ্কারি, প্রয়াত কাজী জাফরের চিনি কেলেঙ্কারি, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সদ্য স্বাধীন শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। পরবর্তী সময়ে বিগত ৫৩ বছর ধরে রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হাতবদলের সুযোগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আমলা-কামলা, উচ্ছিষ্টভোগী ও চাটুকারদের দৌরাত্ম্যে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ মুনাফাখোর-কালোবাজারিসহ এই জালেম চক্রের সরকারি কোষাগার ও সম্পদ লুণ্ঠন এবং খাল-বিল-নদী-নালা-বন-বাদাড় গোগ্রাসে গিলে খাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা অদ্যাবধি পুরোপুরি অব্যাহত রয়েছে।
অধিকন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং ক্ষমতার হাতবদলের পরপর ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সরকারি কোষাগার লুণ্ঠন, ইয়াবা-ফেনসিডিল-মাদক সেবন, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ইত্যাদি কমপক্ষে ১০% থেকে ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়ের অগ্রযাত্রায় সেই জঘন্য ও মহাপাতকী প্রবণতা ডালপালা বিস্তার করে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়ে বর্তমানে দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সিংহভাগ দেশবাসী ও প্রান্তিক চাষি জোত-জমা-বাস্তুভিটি ও যথাসর্বস্ব হারিয়ে ভাসমান বস্তিবাসী ও কাঙালে পরিণত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় দেশ ও দেশবাসীর করুণ পরিস্থিতির ভয়াবহ ভাষাচিত্র একাধিকবার চিত্রিত হলেও সব সরকারের কার্যকালেই সবকিছু প্রতিকারবিহীনই রয়ে গেছে। উল্টো ২০৪০ রূপকল্প, ২০৫০ সালের সোনার বাংলা, ২১ দফা কর্মসূচি, ৪২ দফা যুগোপযোগী ও টেকসই পরিকল্পনা ইত্যাদি মুখরোচক আশ্বাসে সমগ্র দেশবাসীকে ভেড়া বাড়িয়ে নব্য ফেরাউন বনার পাঁয়তারা করা হয়েছে পুরোদমে।
যাহোক, গত বছরের জুলাই-আগস্টের অকুতোভয় ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ দেশবাসী স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন। আবার বিগত ১৬ বছরে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা, বুকের পাটা ইত্যাদি দেখার সৌভাগ্যও দেশবাসীর হয়েছে। তবে শ্রুতিকটু হলেও স্বীকার্য, গত বছরের ৩৬ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধীদলীয় কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দান চষে বেড়ানো অনেক রাজনৈতিক নেতার টিকিটিও দেখা যায়নি। এমনকি যারা সরকারকে ছাই দিয়ে পাকড়ে ধরার সদম্ভ ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারাও ছাইয়ের বস্তাসহ আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রী-সমন্বয়ক, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সপরিজনে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং আমজনতা বহ্নিমুখ পতঙ্গের মতো সেই মরণসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে আবু সাঈদসহ ১৪ শতাধিক প্রাণহানি এবং ২০ সহস্রাধিক লোকের হাসিমুখে পঙ্গুত্ববরণের আশীর্বাদে এশিয়ার সিংহী শেখ হাসিনা শিয়ালের মতো লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেল এবং দেশ ও জাতি স্বৈরশাসন মুক্ত হলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অবজ্ঞাবশত কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোতিদভাবে এই আত্মত্যাগী বীরজনতার নাম অনেকেই বর্তমানে মুখে উচ্চারণ করেন না। অধিকন্তু দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থে বর্তমানে নতুন ফেরাউন বানানোর অভিনব কৌশল হিসেবে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেও জাহির করা হচ্ছে জোর গলায়।
যাহোক, সমন্বয়ক, রাজনীতিবিদ ও দেশবাসীর পরামর্শক্রমে স্বৈরাচারী শাসনপদ্ধতির মূলোচ্ছেদ, ঘুণে ধরা প্রশাসনিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় ও শোষণমুক্ত সমাজ-কাঠামো প্রতিষ্ঠা ও জনবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার বহুমুখী স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিমিত্তে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ-শিক্ষক-গবেষক-আইন বিশারদ, ভুয়োদর্শী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছিল বিভিন্ন কমিশন। দীর্ঘ ১২ মাস কালক্ষেপণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ; সমাজের সর্বস্তরের বিদগ্ধজনদের সঙ্গে বহু দফা পরামর্শ ও মতবিনিময় ইত্যাদি শেষে বর্তমানে সবকিছুই পর্বতের মূষিক প্রসবে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে সরকারপ্রধান ও উপদেষ্টাগণ জাতীয় অপরিহার্য সংস্কারের আগেই গতানুগতিক ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চটজলদি ক্ষমতা হস্তান্তরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বাস্তবায়ন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশ চষে বেড়ালেও তার সাফল্য বহুলাংশে অনিশ্চিত। আবার সরকারপ্রধান মাঝে মাঝে অপরিহার্য সংস্কারের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করলেও পরক্ষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তড়িঘড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলেও খবরে প্রকাশ। পত্র-পত্রিকার ভাষ্যানুসারে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে স্বার্থান্বেষী গৃধিনীদের নগ্ন নৃত্য শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, অপরিহার্য জাতীয় সংস্কার সাধন এবং আনুষঙ্গিক অতীব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সনাতনী ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তড়িঘড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সনাতনী প্রথাকে পাকাপোক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে ভেতরে ভেতরে। তেমন অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে দেশের নিবেদিতপ্রাণ, বিজ্ঞানমনস্ক ও দেশপ্রেমিক যুবসমাজ এবং চির অধিকারবঞ্চিত সর্বহারা দেশবাসীকে নিকট ভবিষ্যতে হয়তো-বা নতুন স্বৈরাচার মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। আর ড. ইউনূসের সরকারকেও ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের ভাগ্য বরণ করতে হবে।
স্মর্তব্য, সদলবল ও সসৈন্যে নীল নদে প্রবল প্রতাপান্বিত ফেরাউনের সলিলসমাধি রচনার ঘটনা একসময় প্রাচীন মিসরবাসীর নিকট ছিল অকল্পনীয়। অনুরূপভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাখির ঠোঁট থেকে নিক্ষিপ্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণিকার আঘাতে আবরাহার বিশাল হস্তীবাহিনীর খড়কুটায় পরিণত হওয়ার ঘটনাও ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য। আর প্রাণসংহারী করোনার তাণ্ডবের নিকট বিশ্বপরাশক্তি আমেরিকার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণও ছিল বিশ্ববাসীর অবাক্সমানসগোচর। ইরানের আড়াই হাজার বছরের শাহ বংশের রাজত্বের অবসান, হাফিজ আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুতি, বাংলাদেশের পটভূমিতে ১৯৭৫ সালে স্বল্পসংখ্যক সেনাসদস্যের হাতে সপরিজনে বঙ্গবন্ধুর নিধন, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খুন, নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে লৌহমানবী শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন সবই একধরনের কল্পকাহিনি বললে সম্ভবত অতিশয়োক্তি হবে না। কারণ গণেশ উল্টানোর আগে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অদ্বিতীয় ক্ষমতাধর এবং অঢেল প্রভাবশালী। কিন্তু তাদের কেউই নিয়তির নির্মম বিধান ঠেকাতে পারেননি।
যাহোক, বর্তমানে নিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বচরাচরে ঊষর সাহারার লু হাওয়ার মতো পরিবর্তনের লাভা উদ্্গিরণ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্সসহ জাতিসংঘভুক্ত ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে সিংহভাগ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দান, জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে মানবতার শত্রু ইতিহাসধিক্কৃত নেতানিয়াহুর ভাষণদানের প্রারম্ভে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি আফ্রিকা ও ইউরোপের কূটনীতিকদের সভাকক্ষ ত্যাগ ইত্যাদি মূলত বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের ঘটন-অঘটন এবং পরিবর্তনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অবশ্য গ্রাম-বাংলার চিরায়ত লোকপ্রবচন-চোর না শুনে ধর্মের কাহিনির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের এই অকল্পনীয় পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চিন্তা-চেতনা ও মন-মানসিকতায় কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা ভবিতব্যের বিচার্য।
ক্ষমতার অতিমাত্রায় মোহাবিষ্ট রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর উদ্দেশে তাই পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলের (২৫১ নং) আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে হচ্ছে : আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে দিয়ে অপর দলকে প্রতিহত না করতেন, তবে বসুন্ধরা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হতো। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, স্বল্পসংখ্যক অনুসারীকে নিয়ে হজরত তালুত (আ.)-কে ফিলিস্তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান জালুতের (জুলিয়েট) বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলা করতে হয়েছিল। হজরত দাউদ (আ.) তালুত বাহিনীর সদস্য হিসেবে সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী চৌকস যৌদ্ধা জালুতকে বধ করেছিলেন। অনস্বীকার্য যে রাজ্য-সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হাতবদল, জন্ম-মৃত্যু-ঋতুবৈচিত্র্য ইত্যাদি মানুষের নিছক অভিলাষ বা ইচ্ছানুযায়ী হয় না। সোজাকথা, বিশ্বপ্রতিপালকের ইঙ্গিত ছাড়া কারও কোনো অভিলাষ বা ইচ্ছাই বাস্তবায়িত হয় না। আবার ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত দাপট, প্রভাব-প্রতিপত্তি-শক্তিমত্তা-জনবল-ঐশ্বর্যের সকরুণ পরিণতি সম্পর্কেও বিশ্ববাসী কম-বেশি অবহিত।
যাহোক, সপ্তম হিজরিতে সম্পাদিত ঐতিহাসিক হুদাইবিদা সন্ধির পর অবতীর্ণ সুরা আন্ নাসরে বিধর্মীদের দলে দলে ইসলাম গ্রহণের সংকেত উচ্চারিত হয়েছিল। অনেক নব-দীক্ষিত এবং হালকা ইমানদার মুসলমান আল্লাহর ওই সংকেতে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছিলেন না। অথচ অষ্টম হিজরিতে বিনা যুদ্ধে মুসলমানরা মক্কা জয় করেছিলেন। অনেকটা অসংলগ্ন প্রতীয়মান হলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আঙ্গিকে অনেক দেশপ্রেমিক ও বিদগ্ধ ব্যক্তিবর্গের সুচিন্তিত অভিমত, স্বার্থান্বেষী ও ফায়দালোভী রাজনীতিবিদেরা অতীতেও বাংলাদেশকে বারবার ডুবিয়েছে, বর্তমানেও ডোবানোর চেষ্টায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তবে প্রকৃতি অতিমাত্রায় প্রতিশোধপরায়ণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিমেষে অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতি, লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি, শহর-নগর-গ্রাম, বন-বাদাড় নদী ও সাগরগর্ভে বিলীন হওয়ার কাহিনি বিশ্ববাসীর অজানা বা অদেখা নয়। তাই উপসংহারে সাদামাটা ভাষায় বলতে হচ্ছে, প্রাকৃতিক প্রতিশোধ ও নির্মমতার সঠিক বর্ণনায় ভাষা হার মানতে বাধ্য।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।