Thikana News
১৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

চলে যাচ্ছি তোমাকে ছেড়ে

চলে যাচ্ছি তোমাকে ছেড়ে



 
দেশ আমাদের কাছে মায়ের মতো। মায়ের কথা মনে পড়লে মন যেমন আনচান করে, দেশের কথা মনে পড়লে তেমনি কত স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে। সুদূর প্রবাস থেকে তোমার মাঝে এসেছিলাম একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে, একটু ভালোবাসা পেতে, মনের ভেতর জমে থাকা কত স্বপ্ন পূরণ করতে। কতজনের জন্য মন আকুলিবিকুলি করত, তাদের সঙ্গে দেখা করে কিছু কথা বলতে। গ্রামের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে মিশে অনেক আনন্দ পেতে। পাখির মতো ছুটে চলতে, মন যেখানে চায় সেখানে যেতে। সেই গানের কথা মনে পড়ে। আহা! কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে। কারও সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময় করে কোলাকুলি, দাঁড়িয়ে বা বসে গল্প করা। গল্প করে কত মজা পাওয়া। প্রাণ খুলে হো হো করে হাসা। মনটা একেবারে ফ্রেশ করে ফেলা। সত্যিই কী এক মহা আনন্দে দেশে এসে মনটা
ভরে গিয়েছিল।

চলে যাচ্ছি তোমাকে ছেড়ে। মনটা কিন্তু কোনোভাবেই আর চাচ্ছে না যেতে। বিদায় মুহূর্তে কত কথা মনের মধ্যে বুদবুদ করে ভেসে উঠছে। থাকি না আরও কিছু সময় জন্মভূমির কোলে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। ভেতরটা মনে হয় যাচ্ছে ফেটে। গা মনে হয় কাঁপছে থরথর করে। কত মাথা ব্যথা করছে। জন্মভূমি তোমার কথা বারবার মনে পড়ছে। তোমায় কত ভালোবাসি, তাই তোমাকে আর ভুলতে পারি না। পৃথিবীর কত দেশে যাই, কত ঘুরি কিন্তু তোমার মতো দেশ পাই না কোথাও খুঁজে। কিরে গেদা, কবে এসেছিস, আছিস কেমনÑএমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করত দেখা হলে কতজনে। এসো একটু চা খাই দোকানে বসে। চায়ে চুমুক দিয়ে একটু একটু করে খাওয়া আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আড্ডা দিয়ে কত মজা পাওয়া। লাল চা বা দুধ চা বিস্কুট দিয়ে খাওয়া, সে কী মজা। শিঙাড়া, পেঁয়াজু, পুরি, বড়া ও সমুচা আহা! গরম গরম খেতে লাগে মজা। চা, কফি তো প্রবাসে কত খাই। কত রকমের চা আর কত রকমের কফি, দামও নেয় বেশি বেশি। সেই স্টার ভাগের কফি, ম্যাকডোনালের কফি, ডানকিন ডোনাটের কফি, সেভেন ইলেভেনের কফি, গ্রোসারি দোকানের কফি, ফুটব্যানডারের কফি, পাকিস্তানি চা, ইন্ডিয়ান চা, জাপানি চা, চায়নার চাÑকত দেশের চা কিন্তু আমাদের সোনার দেশের লাল চা, যার মধ্যে থাকে একটু চিনি ও আদা। আহা! কী স্বাদ, চা বানায় কী সুন্দর করে, একসঙ্গে আমরা বসে খাই মজা করে। বিদেশের কতক দোকানে চা আবার দেয় না বানিয়ে, বলে চা সেক্টরে গিয়ে নাও বানিয়ে। দুধ-চিনি যত লাগে নিতে পারো মিশিয়ে। প্রবাসে কেউ আবার এক কাফ চা হাতে ধরে খায় হেঁটে বা বসে। একা একাই খায়, আনন্দ তেমন পায় না। চা খেয়ে মজা পেয়েছি দেশে, আড্ডা দিয়েছি কত বসে বসে। আহা! কী হাসি, কী আনন্দ চলে যাওয়ার সময় মনে পড়ছে কত।

আত্মীয়স্বজন কতজন, তাদের দেশে এসে দেখলে ভরে যায় মন। যাদের অনেক ইয়ং দেখেছি, তারা হয়ে গেছে বৃদ্ধ। যাদের ছোট দেখেছি, তারা বিয়ে করে ছেলেমেয়ের বাবা হয়েছে। অনেক ইয়ং ছেলেমেয়েকে চিনতে না পারলে জিজ্ঞেস করি, তোমার বাবার নাম কী। যত লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছে মনে আনন্দ তত বেশি বেড়ে গেছে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে বাড়িঘর ছিল না, সেখানে বাড়িঘর হয়েছে। রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। যে গ্রামে আগে প্রদীপের আলো জ্বলত, সে গ্রামে আজ বিদ্যুতের আলো জ্বলে। দেশে বেড়াতে গিয়ে মনে হয়েছে গ্রাম আর কোনো দিক দিয়ে নেই পিছিয়ে।

দেশে বেড়াতে গিয়ে আনন্দের সীমা ছিল না। দেশে গিয়ে অনেকের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সুন্নতে খাতনারও অনেক দাওয়াত পাওয়া গেছে। দেশের অনেক কৃষ্টি-কালচার বিদেশে থাকার কারণে তেমন দেখার সুযোগ হয় না। সেই ঘোড়া দৌড়, বাছির নৌকা প্রতিযোগিতা, লাঠিবাড়ি খেলা দেখা, একসঙ্গে বসে সবাই মিলে আগেকার দিনের নাটক ও ছায়াছবি দেখা, নৌকা ভ্রমণে যাওয়া, বাসে চড়ে বন্ধুরা মিলে কোনো ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে যাওয়া, নদীতে গোসল করতে গিয়ে পলানটুকটুক খেলা। নদীর পাড়ে বিকেলে হেঁটে মজা পাওয়া। নদীতে জেলেদের মাছধরা দেখা। নদীর তাজা ইলিশ মাছ খেয়ে মজা পাওয়া। কত রকমের তাজা মাছ খাওয়া। সন্ধ্যায় সাদা বকগুলোর ডানা মেলে উড়ে যাওয়া দেখে মজা পাওয়া। সকালে পাখিদের কলতানে ঘুম যেত ভেঙে। সকালে মুয়াজ্জিনের মধুর সুরে আজান শুনে মন যেত ভরে। মোরগের মারামারি, রাতে শিয়ালের হাঁক আর শিয়ালের হাঁক শুনে কুকুরের ডাক। খাটাশ যদি মুরগি ধরে তখন আতু বলে সবাই ডাক মারে। কত অতীতের স্মৃতি, তা উপভোগ করেছি দেশে বেড়াতে এসে।

মনে হলো হঠাৎ করে আসা আর হঠাৎ চলে যাওয়া, আরেকটু সময় নিয়ে কেন হলো না আসা। মনটা বেদনায় ভরে গেল। কেন চলে যাচ্ছি এত তাড়াতাড়ি। মনে জমানো কত কথা বলেছি দেশে গিয়ে, মনটা অনেক হালকা হয়ে গেছে। স্বদেশ, তোমাকে ছেড়ে যদিও চলে যাচ্ছি, মনে পড়ে তোমার কথা-শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে।
 

কমেন্ট বক্স