Thikana News
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ওয়েটিং ফর দ্য গ্যালোজ’

কোনো ব্যক্তির ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে এই কথার দ্বারা বোঝানো হয়। এই লেখার আলোচ্য বিষয় অবশ্য এই গানটি নয়, বরং মূলত বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে পলাতক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার চলমান বিচার ও সেই বিচারের সম্ভাব্য রায়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
‘ওয়েটিং ফর দ্য গ্যালোজ’
এই লেখার শিরোনামটা ধার করেছি একটি মার্কিন মিউজিক ব্যান্ডের একই শিরোনামের গান থেকে, যা ২০২৩ সালে গাওয়া ও প্রচারিত হয়।
কোনো ব্যক্তির ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে এই কথার দ্বারা বোঝানো হয়। এই লেখার আলোচ্য বিষয় অবশ্য এই গানটি নয়, বরং মূলত বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে পলাতক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার চলমান বিচার ও সেই বিচারের সম্ভাব্য রায়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত দেড় দশক, বিশেষ করে গত বছরের জুলাই বিপ্লবে হাজারো ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা হিসেবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ আরও দুজনের বিচারকাজ বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। শেষোক্তজন ছাড়া অন্য দুজন পলাতক আছেন। বিচারপতি গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুজন বিচারক হলেন শফিউল আলম মাহমুদ ও মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

১০ জুলাই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ, উসকানি ও প্ররোচনার অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়ে এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া এরই মধ্যে ৩০ আগস্ট নাগাদ ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, যাদের মধ্যে ছয়জন শহীদের বাবা-মা, ভাই ছাড়াও আহত আন্দোলনকারী, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাক্ষ্যদানকালে তাদের সবার কণ্ঠে ছিল এক দাবিÑএক হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা হত্যার জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের ফাঁসি হওয়া উচিত। আগামী কয়েক দিনে আরও ১০-১৫ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন, যা শেষ হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। উল্লেখ্য, এই মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৮১। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রসিকিউশন ও আসামিদের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন, যা নভেম্বরের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার কথা। এপর ট্রাইব্যুনাল রায়ের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন।

নিকট অতীতে বিদেশি মিডিয়া আল-জাজিরা শেখ হাসিনা কর্তৃক জুলাই বিপ্লবে যোগদানকারীদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে হত্যা এবং এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে বিধ্বংসী অস্ত্র (Lethal Weapon) ব্যবহারের নির্দেশদানের অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে, যা লন্ডনের কারিগরি প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ারসট’ (Earshot) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শেখ হাসিনার কণ্ঠনিঃসৃত নির্দেশ বলে জানায়। তা ছাড়া অপর একটি অডিওক্লিপে শেখ হাসিনা তার বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইনজীবী ও বিচারকদের ভবিষ্যতে শাস্তিদানের হুমকি প্রদান করেন, যে কারণেই ওই ট্রাইব্যুনাল তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার একটি বিগত সময়ে গুম, হত্যা এবং অন্যটি শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত।

উপরে বর্ণিত বিচারপ্রক্রিয়া ও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীর নির্দেশে ব্যাপক নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা বিদ্যমান রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে দিল্লি ও কলকাতায় অফিস খুলে নাশকতার ও তা বাস্তবায়নের ছক তৈরি ও তা বাস্তবায়নের জন্য ভারতে পলাতক ও দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব হীন কর্মপরিকল্পনার সার্বিক দেখভাল করছেন শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। পুতুলকে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই ছুটির অফুরন্ত সময়কে তিনি বাংলাদেশে সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট রচনায় ব্যয় করছেন। এই ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিবাদ-বিভক্তির জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে উত্তেজনা ও সহিংসতা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার নামে বিভিন্ন দলকে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে পুলিশ ও প্রতিপক্ষ সংগঠনের কর্মীদের মিছিলের ওপর চড়াও হতে প্ররোচিত করে সংঘাত-সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে প্রজন্ম ’৭১, ’৭১ মঞ্চ, জয় বাংলা ব্রিগেড জাতীয় সংগঠন তৈরি করে ষড়যন্ত্রের ছক বাস্তবায়ন শুরুর আলামত লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সহিংসতার ঘটনা, জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে মারামারি, গণঅধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুরকে গুরুতরভাবে আহত করা, আওয়ামীপন্থী নেতা লতিফ সিদ্দিকী ও বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে নিয়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ওই ব্লুপ্রিন্টেরই অংশ বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তা ছাড়া টিভি টকশো, সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে, ফেসবুক-ইউটিউবের মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে অপতথ্য প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করা। এসব অপতৎপরতা সংঘটনে অর্থের কোনো অভাব হবে না (Money is not an issue) বলে দলীয় নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোকে আইনের পরিভাষায় ‘Prima Facie’ Case মনে করা হয়, যেখানে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে তার সংশ্লিষ্টতা বহুলাংশে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। এ কারণে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে তার সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের সম্ভাবনা অনেকটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কথাটা নির্মম শোনালেও এটাই বাস্তব সত্য। নিকট অতীতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের রায়ে কয়েকজন জামায়াত নেতাকেও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

পলাতক থাকায় শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে উঠতে না হলেও ভারতবর্ষের শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মতো তাকে আক্ষেপ করে বলতে হতে পারে, নিয়তির কী পরিহাস, চিরনিদ্রায় শাসিত হওয়ার জন্য নিজ দেশে আমার কপালে সামান্য দু’গজ জমিও জুটল না।
লেখক : কলামিস্ট
 

কমেন্ট বক্স