যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার দুটি ভিন্ন বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত ও ধৈর্যহীন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। জুলাই মাসের প্রকাশিত চাকরির পরিসংখ্যানকে ‘জাল’ আখ্যা দিয়ে তিনি ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের উসকানিমূলক অনলাইন পোস্টের জবাবে তিনি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত শুক্রবার প্রকাশিত জুলাই মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চাকরির হার ব্যাপক কমেছে, যা ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য অস্বস্তিকর। এই পরিসংখ্যানকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘জাল’ দাবি করে ট্রাম্প ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের প্রধান এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করেন। ট্রাম্পের দাবি, ম্যাকএন্টারফার তার বিরুদ্ধে নেতিবাচকভাবে তথ্য বিকৃত করেছেন। এর আগেও ট্রাম্প বিভিন্ন সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের স্বাধীনতা খর্ব করেছেন এবং নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছেন।
এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মনোনীত ব্যুরোর সাবেক প্রধান উইলিয়াম ডব্লিউ. বিচ, যিনি এটিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিচ বলেন, এটি ফেডারেল পরিসংখ্যান ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও সততার ওপর ট্রাম্পের নজিরবিহীন আক্রমণের এক নতুন ধাপ।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর আগে থেকেই বিরক্ত ছিলেন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে একটি উসকানিমূলক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ট্রাম্পকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। মেদভেদেভ তার পোস্টে ট্রাম্পকে ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’ সিরিজের পরিস্থিতি কল্পনা করতে বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘এই বোকামি ও উসকানিমূলক বক্তব্য যদি শুধুই কথা না হয়, তাহলে সাবমেরিনগুলোকে সংলগ্ন অঞ্চলে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।’
সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন আর. বোল্টন ট্রাম্পের এই আচরণকে ‘অবিমৃশ্যকারী’ এবং প্রেসিডেন্টের পদের জন্য অনুপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না তিনি কী করছেন। তার পক্ষে এমন উগ্র কথা বলা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে কৌশলগত পরিণতির কথা ভাবার ক্ষমতাই হারিয়েছেন তিনি।’
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই আচরণ নতুন নয়, বরং তার প্রথম মেয়াদের ধারাবাহিকতা। তিনি প্রায়ই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর আগে তিনি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর দাবি অগ্রাহ্য করায় তীব্র সমালোচনা ও অপমান করেছেন। সম্প্রতি তিনি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা একজন বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যা তার ক্ষমতা ব্যবহারের আরেকটি উদাহরণ।
তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, তিনি ঠিক সেই কাজই করছেন, যা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—ক্ষমতা ব্যবহার করে তার ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা এবং জনসমক্ষে সরাসরি কথা বলা।
ঠিকানা/এনআই