বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুরের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ স্মারকলিপিতে রেমিট্যান্স ও প্রবাসী বিনিয়োগ সংক্রান্ত নানা জটিলতা দূর করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্মারকলিপিটি দিয়েছেন রেমিট্যান্স মেলা ২০২৫-এর আহ্বায়ক এবং বিইউসিসিআইয়ের কনভেনর ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
স্মারকলিপিতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংকটময় আর্থিক পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স একটি বড় অবলম্বন। অধিকাংশ প্রবাসীই পরিবার-পরিজনের জন্য অর্থ পাঠালেও অনেকে এখন চান দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও নিয়মিতভাবে অর্থ প্রেরণ করতে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ নীতিমালা ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ার অভাবে প্রবাসীদের এই সম্ভাবনাময় অবদান আটকে আছে।
ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক প্রচারণা শুরু করছি, যেখানে প্রবাসীরা স্থানীয় স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সামাজিক সংগঠন কিংবা নিজ নিজ এলাকার অবকাঠামোর উন্নয়নে বছরে একবার হলেও অর্থ পাঠাবেন। তবে সেটা সম্ভব হবে, যদি সরকার এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করে এবং যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে।’ স্মারকলিপিতে উত্থাপিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও সমস্যা নিচে তুলে ধরা হলো :
১. সরকারি ব্যাংক বা এজেন্সির মাধ্যমে অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে রেমিট্যান্স পাঠানোর পদ্ধতি চালু করা।
২. এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোক্রেসির বাধা ছাড়া সরাসরি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. দেশে ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি অনুদান গ্রহণের জন্য নিবন্ধন ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক না করার অনুরোধ। এসব নিয়মে অনেক উদ্যোগ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
৪. প্রবাসীরা যদি ডলার ইনভেস্ট করেন, তাহলে সুদ বা মূলধন ফেরতও যেন ডলারে নিতে পারেন- এ নীতিমালা নিশ্চিত করা। ভারত-পাকিস্তানে যেখানে এটি সম্ভব, বাংলাদেশে কেন নয় তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
৫. CSO Alliance-এর নেতৃত্বাধীন ৭০০ এনজিও ও থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে গভর্নরের একটি সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাব, যাতে যৌক্তিক সমাধান পাওয়া যায়।
৬. সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংককে রেমিট্যান্স সহায়ক নীতিমালা পালনে নির্দেশনা দেওয়া। এনজিও ব্যুরোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাধা দূর করার তাগিদ।
৭. অন্য কোনো রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট সমস্যা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় সমাধান বের করার প্রস্তাব। স্মারকলিপির শেষে ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার যদি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহ ও সহায়তা দেয়, তবে বিপুল পরিমাণ অলস সম্পদ কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে, অন্যদিকে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও দেশের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণে তৃপ্তি অনুভব করবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সাড়া ও ইতিবাচক পদক্ষেপ এখন প্রবাসীদের প্রত্যাশার কেন্দ্রে।