Thikana News
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ট্রাম্প ইজ গিল্টি

ট্রাম্প ইজ গিল্টি


সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত মুখ বন্ধ রাখার জন্য প্রদত্ত ঘুষ (Hush Money Trial) ১২ সদস্যের জুরি (৭ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা) সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত মামলার ৩৪টি অভিযোগের প্রতিটিতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন। নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টে গত ১৫ এপ্রিল থেকে দীর্ঘ ৫ সপ্তাহ ধরে চলা মামলার শুনানি শেষে গত ৩০ মে সর্বসম্মতভাবে জুরি তাদের রায় প্রদান করেন। জুরি কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে কোর্টের বিচারক হুয়ান মার্চার আগামী ১১ জুলাই ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করবেন।
এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ ধরনের কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হননি।
ট্রাম্প সব সময় এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের বছরে তাকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার একটি হীন ষড়যন্ত্র বলে বর্ণনা করে এসেছেন। রায় ঘোষণার পর ট্রাম্প এ বিচারকে একটি Unfair I Disgraceful trial হিসেবে উল্লেখ করে আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রকৃত রায় দেবে বলে জানান। হাউস স্পিকার মাইক জনসনসহ বহু রিপাবলিকান নেতা এ বিচারকে একটি লজ্জাকর (Shameful) ঘটনা বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে-তা ট্রাম্প আগে থেকেই বলে আসছিলেন। নিউইয়র্কের মতো একটি ডেমোক্র্যাটিক রাজ্যে (Deep Blue State) জুরি স্বভাবতই ট্রাম্পবিরোধী হবেন এবং সে কারণে তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া অসম্ভব হবে বলে ট্রাম্প আগেই আওয়াজ তুলেছিলেন। তা ছাড়া বিচারক মার্চানের নিরপেক্ষতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বিচারক ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে চাঁদা দিয়েছেন। তার মেয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তার স্ত্রী নিউইয়র্কের কট্টর ট্রাম্পবিরোধী অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের অফিসের একজন কর্মচারী ছিলেন। এ অবস্থায় এ বিচারকের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা যায় না বিধায় তিনি মামলার স্থান ও বিচারক পরিবর্তনের দাবি জানান, যদিও সেই দাবি অগ্রাহ্য হয়।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পকে প্রায় প্রতিদিন (বুধবার ও উইক এন্ড বাদে) উপস্থিত থাকতে হওয়ায় তিনি তেমনভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে পারেননি, যা বিভিন্ন রাজ্যে তার মাঠপর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডকে সুসংহত ও বেগবান করতে বাধার সৃষ্টি করে। নির্বাচনী ময়দানে ট্রাম্পের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাইডেন, বিশেষ করে ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলো ঘুরে বেরিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তার ক্রমহ্রাসমান সমর্থন চাঙা করতে তিনি একটি কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র অধ্যুষিত কলেজের গ্র্যাজুয়েশন এবং কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার সংগঠনের (NAACP) বার্ষিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে ট্রাম্প মামলার বিরতিকালে মিশিগান, নিউজার্সি ও নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রতিটি সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম হয়। বিশেষ করে, ব্রঙ্কসের সমাবেশে তিন-চার হাজার মানুষের উপস্থিতিকে কেউ কেউ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিকদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও বাইডেনের জনপ্রিয়তা হ্রাসের আলামত বলে মনে করেন। মূলত নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিকদের অনেককে বাইডেন-বিমুখ করে তুলছে। এসব সম্প্রদায়ের অনেকেই তিন বেলা ফাস্টফুড খেয়ে থাকেন। গত কয়েক বছরে ফাস্ট ফুডের মূল্য বেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের পকেটবুকে চাপ পড়ায় তাদের মধ্যে বাইডেনবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওপরে বর্ণিত মামলাটির সূত্রপাত হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে, একটি গলফ টুর্নামেন্ট উপলক্ষে নেভাদার লাসভেগাসের একটি হোটেলে ট্রাম্পের সঙ্গে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের কথিত যৌন সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। ট্রাম্প এ ধরনের কোনো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। যৌন সম্পর্কের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় ও ট্রাম্পের টিভি শোতে সুযোগ না দেওয়ার কারণে পর্নো তারকা ট্রাম্পের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে সে সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। এর ফলে তার পারিবারিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিবেচনা করে ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোয়েনকে পর্নো তারকার মুখ বন্ধ রাখার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। ট্রাম্পের ব্যবসায়িক রেকর্ডে এ অর্থকে মিথ্যাভাবে আইনি ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়, যা একটি অপরাধমূলক কাজ।
আগামী ১১ জুলাই বিচারক কর্তৃক মামলার সাজা ঘোষণার কয়েক দিন পর ১৫ থেকে ১৮ জুলাই উইসকনসিনের মিলওয়াকি শহরে রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
মামলায় চার বছর পর্যন্ত জেল দেওয়ার সুযোগ থাকলেও বিচারক ট্রাম্পকে জেল বা প্রবেশনের সাজা দেবেন বলে মনে হয় না। মামলার বিতর্কিত বিষয়বস্তু ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে তাকে বড়জোর অর্থদণ্ড বা দু-তিন দিনের জন্য হাউস অ্যারেস্টের সাজা দেওয়া হতে পারে বলে পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছেন।
অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ইমিগ্রেশন, অপরাধ ও বৈদেশিক যুদ্ধ বন্ধে মার্কিনিরা বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের প্রতি অধিক আস্থাশীল বলে জনমত জরিপে দেখা যায়। অপরদিকে সোশ্যাল সিকিউরিটি, মেডিকেয়ার, গণতন্ত্র ও নারীর গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে তারা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনের ওপর অধিক আস্থাশীল।
এ মামলার কারণে ট্রাম্পের প্রতি তার বেসের সমর্থন আরও চাঙা হতে পারে। সব বিভেদ ভুলে ট্রাম্পকে জয়ী করার জন্য পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে উৎসাহিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকান নেতা নিকি হ্যালি আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা তার বিপুলসংখ্যক সমর্থককে একই পথ অনুসরণে অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। এ মামলার মাধ্যমে ট্রাম্পকে একজন Political Martyr বানানো হয়েছে।
মার্কিন রাজনীতিতে Are you better off today than four years ago বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এবারের নির্বাচনেও এ প্রশ্ন উঠবে এবং সে ক্ষেত্রে উত্তরটা না-বাচক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় নির্বাচনে সাফল্যের বিষয়ে বাইডেনের যথেষ্ট শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে বলে বিদগ্ধ মহল মনে করেন।
লেখক : কলামিস্ট
 

কমেন্ট বক্স