Thikana News
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঈদে দেশে স্বজনের খুশিই প্রবাসীদের আনন্দ

ঈদে দেশে স্বজনের খুশিই প্রবাসীদের আনন্দ


কোরবানির ঈদের আগের দিন প্রবাসী স্বামীকে মোবাইলে কল দিয়েই প্রিয়তমা হেসে বলছে, শোনো জান, তোমার টাকা দিয়ে কী সুন্দর একটা লকলকে, তরতাজা, নাদুসনুদুস কোরবানির ষাঁড় কেনা হয়েছে। একটা ট্রাক ভাড়া করে ষাঁড়টি আনা হয়েছে। কত লোক যে জিজ্ঞাসা করছে কত টাকা দিয়ে ষাঁড়টা কেনা হয়েছে। সবাই ষাঁড়টি পছন্দ করেছে। দেখো, ষাঁড়ের গলায় কী সুন্দর করে মালা পরানো হয়েছে। সারা গা কী সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পায়ে কী সুন্দর ফুল বেঁধে রাখা হয়েছে। গলায় ঘোমটা বাঁধা আছে। কী সুন্দর লাল টকটকে রঙের ষাঁড়। একটু নড়াচড়া করলে কী সুন্দর ঘোমটার শব্দ হচ্ছে। কী সুন্দর দুটি লম্বা শিং, কান কী খাড়া খাড়া? কত বড় চোখ, চোখ দুটি কী সুন্দর। কী সুন্দর লম্বা লেজ। দেখতে কত সুন্দর লাগছে। কত লোক যে দেখতে আসছে।
এমন ষাঁড় হাটে মাত্র তিনটা উঠেছিল। একটা কিনেছে এমপি সাহেব, আরেকটা কিনেছে হবি মোল্লা ডিসি আর আমাদেরটা আব্বাস এসপি কিনতে চেয়েছিল। বলা চলে, জোর করেই এটা আমাদের জন্য কেনা হয়েছে। তোমার শালি দেখে বলেছে, এবার দুলাভাইয়ের টাকায় যে কোরবানির ষাঁড়টি কেনা হয়েছে, এমন ষাঁড় সে আগে আর দেখেনি। সারা গ্রামের লোক কোরবানির মাংস খেতে পারবে।
প্রবাসীর স্ত্রী কোরবানির ষাঁড়ের কয়েকটা ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায়। বলে, ছবিতে ভালো করে দেখো। প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে দেশে টাকা পাঠান কোরবানির গরু কেনার জন্য। কেউ সম্ভব হলে একাই কোরবানি দেন, একা না পারলে কেউ ভাগে কোরবানি দেন। প্রবাসেও কিছু কিছু প্রবাসী কোরবানি দেন। তারা দেশে কোরবানি দিতে পারলে কী যে খুশি হন। তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করেন। কোরবানির সময় হাতে টাকা না থাকলেও অনেক প্রবাসী ধার করে হলেও দেশে টাকা পাঠান। বাবা-মায়ের কাছে কল করে প্রবাসীরা বলেন, আমি এবারও কোরবানি দেব এবং খুব তাড়াতাড়ি টাকা পাঠিয়ে দেব। তোমরা দেখেশুনে একটা গরু কিনো। বাবা-মায়ের মনে জাগে আনন্দ আর প্রবাসীরা পান আরও বেশি আনন্দ। প্রবাসীরা অনেক সময় কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন কোরবানির পশু কি কেনা হয়েছে। যদি বলে কিনেছে, তাহলে তাদের আনন্দ যায় বেড়ে। ঈদে দেশের লোকেরা খুশি হলে প্রবাসীরাও খুশি হন।
ঈদ মানে খুশি। ঈদে প্রবাসীরাও খুশি থাকতে চান। ঈদে প্রবাসীরা যখন দেশে সবার জন্য কিছু টাকা-পয়সা দিতে পারেন, বিশেষ করে একটা কোরবানির পশু কিনে দিতে পারেন, তখন তাদের আনন্দ কে আর ধরে রাখে। তাদের মনে খুশির বন্যা বয়ে যায়। প্রবাসীরা বেশি আনন্দ পান ঈদে তাদের ছেলেমেয়ের কাছ থেকে। ছেলেমেয়েরা বাবা বাবা ডেকে বলে, কী সুন্দর বড় একটা গরু কেনা হয়েছে। গরু উঠানের মাঝখানে খুঁটি গেড়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যার আগে নানা-নানি আমাদের কোরবানির গরু দেখতে এসেছিলেন। গরুর মাথায় নানা হাত দিলেন আর গরু কী আনন্দ করতে লাগল। আমিও নানার সঙ্গে গরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম। নানা-নানি বলেছেন, পরাগের বাপের কোরবানির গরুটা সেই সুন্দর হয়েছে। এ কথা বলে ছেলে যেই হেসে দিচ্ছে, প্রবাসীর মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। দেশে থাকলে অনেকে হয়তো একা একটা গরু কোরবানি দিতে পারত না কিন্তু প্রবাসে আসায় অনেক প্রবাসী একাই কোরবানি দেন। তারা একা কোরবানি দিতে পারলে মনটা আরও বেশি আনন্দে ভরে যায়।
অনেক প্রবাসী আবার ঈদের আগে দেশে যান সবার সঙ্গে ঈদ উদ্্যাপন করার জন্য। কোরবানির ঈদের আগে দেশে গেলে তারা নিজেরাই পছন্দ করে পশু কেনেন। তারা কোরবানির পশু কেনার মধ্যে একধরনের আনন্দ উপভোগ করেন। অপরের সঙ্গে দেখা হলে প্রাণখুলে গল্প করে মনের কত দিনের জমানো কথা ব্যক্ত করেন। গরিব-মিসকিন আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কোরবানির মাংস বণ্টন করতে পারলে তাদের মন যায় আনন্দে ভরে। প্রবাসীরা বেশির ভাগ সময় প্রবাসে ঈদ করেন। এমনও অনেক প্রবাসী আছেন, যারা কোরবানির দিনও কোরবানির মাংস খেতে পারেন না। কিন্তু তাদের টাকায় কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস দেশের লোকেরা খায়। প্রবাসীরা ভোগের চেয়ে ত্যাগ করেই আনন্দ পান বেশি।
কজন প্রবাসী আর ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় পরিধান করে ঈদের নামাজ পড়তে যান। তারা দেশ থেকে আসার সময় একটা পাজামা-পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে আসেন, তা পরিধান করে যান ঈদের মাঠে নামাজ পড়তে। কিন্তু দেশে তাদের টাকায় নতুন জামাকাপড় কিনে পরিধান করে ঈদের দিনে অনেকেই ঈদগাহে যায় নামাজ পড়তে। প্রবাসীরা তাদের ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কেনার জন্য টাকা পাঠান। বাচ্চারা নতুন জামাকাপড় পরিধান করে ঈদের মাঠে নামাজ পড়তে যায়, সেই ছবি দেখলে তাদের মন আনন্দে ভরে যায়।
ঈদের দিনে প্রবাসীরা আরও খুশি হন প্রিয়তমাকে নতুন অলংকার, আইফোন, পারফিউম, মেকআপ বক্স, কসমেটিক, থ্রি-পিস বা শাড়ি কিনে দিয়ে। ঈদের আগে প্রবাস থেকে দেশে লোক গেলেই প্রিয়তমার জন্য কত কী যে পাঠান। প্রিয়তমা তো সেই খুশিতে মুচকি মুচকি হেসে মোবাইলে বলে কথা আর মাঝে মাঝেই মারে চুমি। পরানের পাখি বলে, আমাদের এইখানে ঈদের দিনে তুমি মালিককে বলে কাজে দুই ঘণ্টা দেরি করে যাবে। আমি তোমার দেওয়া সব গিফট পরিধান কওে ঈদের দিনে তোমাকে ভিডিও কল দেব। প্রবাসী স্বামী তো সেই খুশি। একটু পরই দেখবেন তার ময়না পাখি। প্রিয়তমা যেই ভিডিও কল দিয়ে হাসে, প্রবাসীও খুশিতে যে কত কিছু বলেন। মন গেল ভরে, কী যে আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে পরি, নেই একটা সেলফি, ওরে আমার ঘুঘু, ওরে আমার ময়না, গা-ভর্তি কত যে গয়না। প্রিয়তমা আবার ছন্দ মিলিয়ে বলে, ওরে আমার জান, কাছে এসো না, চলো আমরা বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি না। প্রিয়তমা একটু হাসলে প্রবাসী স্বামী কী জোরে যে হাসেন।
ঈদে অপরের আনন্দে প্রবাসীরা কত যে আনন্দ করেন। সহধর্মিণীর পাশাপাশি ছেলেমেয়েরাও থাকে খুশি। তারা বাবাকে বলে, কোরবানির গরুর পর্দা দিয়ে আমরা ঢোল বানাইছি। মায়ের সঙ্গে মাংস নিয়ে নানাবাড়ি বেড়াতে এসেছি। প্রবাসীরা মুচকি মুচকি হাসেন। প্রবাসীরা শত দুঃখ ভুলে যান, যদি দেখেন স্বজনেরা ঈদে আছে খুশিতে। অপরের হাসা দেখে তারাও দেন হেসে। তারা নিজেদের কথা না ভেবে অপরের সুখের কথা ভাবেন, আনন্দের কথা ভাবেন।
আমরা প্রবাসীদের ভালোবাসি। তারা একটু ভালোবাসা পেলে শুধু ঈদে নয়, সর্বক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। প্রবাসীরা দেশের গৌরব। ঈদে জানাই আপনাদের স্যালুট। ঈদ মোবারক, হে প্রবাসী ভাই ও বোনেরা।
 

কমেন্ট বক্স