Thikana News
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাবা আর নেই

বাবা আর নেই


বাবা অবসর নেন। বাকিটা জীবন গ্রামের বাড়িতেই কাটান। বাবার প্রিয় দুটি বিড়াল ছিল। যত দিন বাবা ছিলেন, তত দিনই ওদের দেখতে পেতাম। বাবা চলে গেলেন। মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম। বাবার প্রিয় বিড়াল দুটিকে অনেক খুঁজলাম। লোক লাগালাম। আর দেখা পাওয়া যায়নি। সে দুটিকে দেখে মনে হতো বাবার আপন ধন। বাবা চলে গেলেন, আপন ধনও হারিয়ে গেল।
ইন্টারমিডিয়েটের স্টুডেন্ট। পদার্থবিদ্যা পড়তে যাব। খুব সকাল। একা যেতে পারছি না। বাবা সঙ্গে নিয়ে বের হন। স্যারের বাসায় পৌঁছাই। এভাবেই আমার মর্নিং ওয়াক শুরু হয়।
তখন আমি বিশ^বিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি। পাশাপাশি আরও অনেক কিছু চলছে। ল’র স্টুডেন্ট। একপর্যায়ে মনে হলো খুব বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। অসুস্থ হয়ে পড়লেম। বাবা-মা ধরে নিলেন হার্টের সমস্যা। আমি নিজেও তেমনটি অনুভব করছিলাম।
এক মাস ডা. বি. চৌধুরীর চেম্বারে দৌড়াদৌড়ি শুরু হলো। বাবা-মায়ের ভীষণ মন খারাপ। এই বয়সে হার্টের সমস্যা! অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলল। রিপোর্ট দেবে। সেদিন আর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো না। মা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বাসায় ফিরে আসেন।
জানতে চাইÑআমার কী হয়েছে?
মা বলেনÑকিছুই হয়নি।
মিথ্যা বলছ কেন? ডাক্তার কী বলেছে?
ডাক্তার বলেছেÑকিছুই হয়নি। সম্পূর্ণ দুর্বলতা। এখন শুধু মাস্টার্সটা কমপ্লিট করো, আর পরিত্র কোরআন ভালো করে পড়া শেখো। বাকি সব আগে-পরে কমপ্লিট করলেই চলবে। তবে নিয়ম করে খেতে হবে।
ও আচ্ছা। আর কিছু?
সকালে মর্নিং ওয়াক করতে হবে।
বাবা সকালে বের হন। বাবার সঙ্গে মর্নিং ওয়াক করছি। কিছুদূর যাবার পর বলেনÑএটা মর্নিং ওয়াকের স্যু নয়। অন্য স্যু পরে আসতে হবে।
ঠিক আছে পরব।
আবার কিছুদূর হাঁটি। মাথায় কাপড় দাও। আরও কিছুক্ষণ পর বলেনÑধীরে ধীরে হাঁটলে চলবে না, দ্রুত হাঁটো।
আমিও বাবার পাশাপাশি দ্রুত হাঁটি।
এমনি করে অনেক দিন চলে। আমি সুস্থ হয়ে উঠি। সে যাত্রায় বেঁচে যাই। বাবা-মা ভালো বোধ করেন।
এখন অনেক পরিণত বয়স। প্রতিবছর ডাক্তারের চেকআপে থাকতে হয়। ডাক্তার বলেনÑমণি, ওয়াক করতে হবে।
জানতে চাই-ম্যান্ডেটরি।
জি, ম্যান্ডেটরি।
আবারও বলি-ম্যান্ডেটরি?
ডাক্তার বলেন-জি।
বাবাকে কোথায় পাব?
ডাক্তার বলেন-আমি কি জানি!
তবে হাঁটতে বললেন যে?
এবার ডাক্তার হাসেন। আমাকে বুঝতে পারেন। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটুন।
জানতে চাইÑকদিন হাঁটতে হবে?
অন্তত সপ্তাহে তিন দিন।
বাসায় ফিরে আসি। সকালে হাঁটতে বেরোই।
বাবা আবার বলেন-কাল থেকে মর্নিং ওয়াক স্যু পরবে।
আচ্ছা পরব।
আবার বলেন-মাথায় কাপড় দাও। তা-ই করলাম।
কিছুক্ষণ পর বলেন-এত আস্তে করে হাঁটলে চলবে না। আরও দ্রুত হাঁটো।
বাবার পাশাপাশি খুব দ্রুত হাঁটছি। মর্নিং ওয়াক কমপ্লিট করলাম। অ্যাপার্টমেন্টের মেইন ডোর দিয়ে প্রবেশ করব, হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখছি কোথায় গেলেন বাবা?
আড়াল হয়ে গেলেন।
বাবা আর নেই।
ডাক্তারের ইনস্ট্রাকশন ফলো করা হয় না।
মাস ছয়েক পর আবার ডাক্তারের চেম্বারে যাই।
ডাক্তার জানতে চানÑকী খবর?
একা হাঁটতে ভালো লাগে না। মর্নিং ওয়াক করতে চাই না।
ডাক্তার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি দুঃখিত। আপনাকে মর্নিং ওয়াক করতে হবে না। ইভিনিং ওয়াক শুরু করুন।
পারবেন তো?
জি পারব।
একা হাঁটতে পারবেন তো?
জি, অবশ্যই পারব।
ইভিনিং ওয়াক শুরু করেছি। এখন আর আমার মর্নিং ওয়াক করা হয় না। কারণ বাবা আর নেই!
লেখক : সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।

কমেন্ট বক্স