Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ভালোবাসার প্রতিদান

ভালোবাসার প্রতিদান
মানুষ মনে হয় সবচেয়ে দ্রুত ভুলে যায়, অন্য একজন মানুষের ভালোবাসা, উপকার, সহযোগিতা। মানুষ যে কত কৃতঘ্ন হতে পারে, সে নিয়ে একটা গল্প আছে। গল্পটি এ রকম: একজন মানুষ বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। গা ছমছম অবস্থা। সন্ধ্যা হয় হয়। এ রকম এক পরিবেশে হঠাৎ 'এক বাঘ সামনে এসে দাঁড়ায় (অবশ্যই গল্পের বাঘ)। বাঘ পথচারীর দিকে তাকিয়ে বলল, তৈরি হয়ে নে। আমি এখন তোকে খাব। পথচারী তখন বাঘের দিকে চেয়ে জবাব দিল, কেনরে, তুই আমাকে খাবি, আমি তো তোর কখনো কোনো উপকার করিনি? আমি যদি তোর কোনো উপকার করতাম, তখন তুই আমাকে খেতে পারতি।' গল্পের মূল কথাটা হচ্ছে মানুষের কোনো উপকার করলে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই তার অপকার করে বসে (অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে নয়)।
গল্পটা বললাম মানুষের চরিত্রটা বোঝার জন্য। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের মুখে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি বাঙালি প্রাণ নিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতে তাদের আশ্রয় দেন। প্রধানমন্ত্রী সে কথা সব সময় মনে রাখতেন। তাই তো মিয়ানমারের রাখাইনরা যখন প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় মঞ্জুর করেন। যাদের একদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে, এখন তারাই যেন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে! তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে বলে নানা মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার রাখাইন শরণার্থীদের প্রতি মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে, রাখাইন শরণার্থীরা যেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ততই ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে তারা মাদকদ্রব্যের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে শরণার্থীদের এলাকায় মাদক ব্যবসার স্বর্গে পরিণত করতে নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকে। বন্দুকযুদ্ধে খুনোখুনিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে নরক বানিয়ে তোলে। সরকার যত তাদের প্রতি নমনীয় হয়ে তাদের আরাম-আয়েশে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে তৎপর, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন তত বেশি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠছে। এখন বাংলাদেশের শরণার্থী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে অবস্থান করার চক্রান্ত করছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া খবরে জানাচ্ছে। বাংলা প্রবাদে বলে, 'দাঁড়ানোর জায়গা দিলে বসতে চায়। বসার জায়গা নিলে শুতে চায়। আর শোয়ার জায়গা পেলে বাড়িটাই দখল করে নিতে চায়।' বাংলায় এ রকম আরও প্রবাদ রয়েছে। সে রকম একটি প্রবাদ বাংলায় রয়েছে। গত সপ্তাহে এ রকম একটি সংবাদ ঠিকানার ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে। শিরোনাম: 'রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে অবস্থানের চক্রান্ত'। ওই খবর থেকে জানা যায়, বিশ্বের ১১৭টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান, তাদের আহারসহ বিভি- ন্নভাবে তাদের জরুরি চাহিদা পূরণে নিয়মিত আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ ও সংস্থা ছাড়া কেউ তেমন একটা এগিয়ে আসছে না।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখন আর আগ্রহ দেখাতে এগিয়ে আসছে না। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশিদের কাছ থেকে ১২-১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আসছে না। যার দুই-তৃ তীয়াংশ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশিষ্ট টাকাটা বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে এখন অনেক দেশ ও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশেই স্বায়ীভাবে অবস্থানের পক্ষে।
তাই তো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টা ক্রমাগত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের পক্ষে ১২-১৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপ নেওয়া মোটেও সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ নিতে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি অনেক কাজ সম্পন্ন করাই যাচ্ছে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশের ওপর কার্যকর চাপ দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না। এখন এই চাপ বাড়ানো খুব দরকার। নইলে হয়তো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপে বাংলাদেশের নিজ অর্থনীতিই না ভেঙে পড়ে। তখন আমাদের মানবিকতা এবং দরদ-ভালোবাসাও কতটা দেখাতে পারব-তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।

কমেন্ট বক্স